ইসলামইসলামিক বিষয়াদি

নাক কান ফুড়ানো কি হারাম?

নারীদের নাক ও কান ফোঁড়ানোকে  অনেকে আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির পরিবতর্ন বলে তা করতে নিষেধ করেন। অনেকে আবারা বলেন, নারীদের অলংকার পরিধানের জন্য নাক বা কান ফোঁড়ানো সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তনের নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন নয়। বরং নারীদের নাক ও কানে অলংকার পরিধানের জন্য নাক ও কান ফোঁড়ানো জায়েজ।

 

নাক কান ফোঁড়ানো বা না ফোঁড়ানো উভয়টিই জায়েজ, তবে ফোঁড়ানো হলে অলংকার পরা উত্তম। কেননা, অপবিত্র শরীর পবিত্র করার সময় নাক কানের অলংকারের ছিদ্রেও পানি পৌঁছানো জরুরী। আর তা অলংকার নেড়েচেড়েই পৌঁছাতে হয়। অলংকার ছাড়া ছিদ্রে কিছুতেই পানি পৌঁছানো যায় না। অগত্যা অনেকে চিকন শলা বা কাঠি দিয়ে রাখেন। তবে, যেসব নারী ঋতুমুক্ত হয়ে গিয়েছেন বা যাদের স্বামী নেই, অর্থাৎ বড় নাপাকী তাদের হয় না, এসব নারীর জন্য নাক কানের বর্ণিত ছিদ্রে পানি পৌছানোর ক্ষেত্রে কিছু শিধিলতা আছে। তবে, অজুর ক্ষেত্রেও নাকের ছিদ্রে পানি পৌঁছাতে হয়। এসব ভেবে অনেকে মনে করেন, নাক কান না ফোঁড়ানোই উত্তম। তবে, শরীয়ত যুগ যুগ ধরে চলে আসা এসব অলংকার পরিধান বা ফোঁড়াই করাকে নাজায়েজ সাব্যস্ত করেনি। নিয়ম মেনে করা যায়।

 

সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতাওয়া বিশ্বকোষ।

উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী

 

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে নারীদের নাক-কান ফোঁড়ানোর কথা পাওয়া যায়। এ বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা কোনো হাদিসে বর্ণিত হয়নি। হজরত আবদুর রহমান ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। আমি এক ব্যক্তিকে ইবনে আব্বাস (রা.)-এর নিকট প্রশ্ন করতে শুনেছি যে, আপনি আজহা বা ফিতরের কোনো ঈদে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। অবশ্য তার সঙ্গে আমার এত ঘনিষ্ঠতা না থাকলে স্বল্প বয়সের কারণে আমি তার সঙ্গে উপস্থিত হতে পারতাম না। তিনি আরও বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বের হলেন। তারপর নামাজ আদায় করলেন, এরপর খুতবা দিলেন। ইবনে আব্বাস (রা.) আজান ও ইকামতের কথা উল্লেখ করেননি। এরপর তিনি মহিলাদের কাছে এলেন এবং তাদেরকে ওয়াজ-নসিহত করলেন। তাদেরকে দান-সদকা করার আদেশ দিলেন। আমি দেখলাম, তারা তাদের কান ও গলার দিকে হাত প্রসারিত করে (কান ও গলায় পরিহিত গয়নাগুলো) হজরত বিলাল (রা.)-এর কাছে দিচ্ছে। এর পর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হজরত বিলাল (রা.)-এর গৃহে গমন করলেন। -সহিহ বোখারি: ৫২৪৯

 

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। এর পূর্বে ও পরে কোনো নামাজ আদায় করেননি। তারপর তিনি নারীদের কাছে আসলেন। সঙ্গে ছিল হজরত বেলাল (রা.)। তারপর তিনি নারীদের দান করতে আদেশ দিলেন। তখন নারীরা তাদের কানের দুল ও গলার হার দান করতে লাগল। -সহিহ বোখারি: ৯৬৪

 

আরেকটি দীর্ঘ হাদিসের একাংশে এসেছে, … একাদশতম নারী বলল, আমার স্বামী আবু যারা। তার কথা আমি কী বলবো? সে আমাকে এত অধিক গহনা দিয়েছে যে, আমার কান ভারী হয়ে গেছে। … হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, আবু যারা তার স্ত্রী উম্মে যারার জন্য যেমন আমিও তোমার প্রতি তেমন। ‘ –সহিহ বোখারি: ৫১৮৯

 

তবে নাক-কান ফোঁড়ানোর পর খেয়াল রাখতে রাখতে হবে, ফরজ গোসল ও অজুর সময় যেন অলংকার ভেদ করে চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছায়। না হলে তার অজু-েগোসল কোনোটাই হবে না।

 

নারীদের জন্য কানে দুল পরা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আছে। এর মাধ্যমে কান ফুটানোর বিষয়টাও প্রমণিত হয়। নাকে নাকফুল পরা এবং এর জন্য নাক ফুটানো অনেক স্কলার নিকট না জায়েজ।

 

তবে এই বিষয়ে শরীয়তে কোন প্রকার নিষেধ নেই। নারীদের হাতে চুরি হিসেবে কাঁচ, পাথর ও রূপাসহ সব ধরনের অলংকার পরা জায়েজ আছে।

 

কিছু এলাকার মহিলাদের মাঝে একথা প্রচলিত রয়েছে- কোনো মেয়ে যদি নাক-কান না ফোঁড়ায় তাহলে কিয়ামতের দিন তার নাক-কানে আগুনের লোহা দিয়ে ছিদ্র করা হবে।

 

কথাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। অলংকার ব্যবহারের উদ্দেশ্যে মহিলাদের নাক-কান ফোঁড়ানো জায়েয। কিন্তু এটি শরীয়তের কোনো জরুরি হুকুম নয়।

 

কোনো নারী নাক-কান না ফোঁড়ালে তার কোনো গোনাহ হবে না এবং এ কারণে আখেরাতে তাকে শাস্তিও পেতে হবে না।

 

তবে বর্তমানে আরো কিছু কিছু অঙ্গে অলঙ্কার ব্যবহার করতে দেখা যায়, যেমনঃ ঠোট, চোখ, নাভী, জিহ্বা; এসব স্থানে অলঙ্কার ব্যবহার করা অপসংস্কৃতি ও উগ্রতার বহিপ্রকাশ। তথ্যসূত্র: আযীযুল ফাতাওয়া ৭৭১, মাসিক আল-কাউসার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link