উমর ( রাঃ) এর হত্যা কাহিনী

৬৪৪ সালে উমর ( রাঃ) একজন পার্সি‌য়ানের হাতে নিহত হন। হত্যাকাণ্ডটি কয়েকমাস ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

পিরুজ নাহাওয়ান্দি (আবু লুলু বলেও পরিচিত) নামক এক পার্সি‌য়ান দাস উমরের কাছে তার মনিব মুগিরার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে। তার অভিযোগ ছিল যে তার মনিব মুগিরা তার উপর বেশি কর ধার্য করেছে। উমর এরপর মুগিরার কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। মুগিরার উত্তর সন্তোষজনক হওয়ায় উমর রায় দেন যে পিরুজের উপর ধার্য করা কর ন্যায্য। পিরুজ বায়ুকল (উইন্ডমিল) তৈরি করতে জানত। উমর তাকে বলেন যে সে যাতে তাকে একটি বায়ুকল তৈরি করে দেয়। পিরুজ এর উত্তরে বলে যে যে এমন এক বায়ুকল তৈরি করবে যা পুরো পৃথিবী মনে রাখবে।

পিরুজ উমরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ফজরের নামাজের পূর্বে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে। এখানে নামাজের ইমামতি করার সময় উমরকে সে আক্রমণ করে। তাকে ছয়বার ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। হামলার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় আশেপাশের লোকেরা তাকে ঘিরে ফেলে। এসময় সে আরো কয়েকজনকে আঘাত করে যাদের কয়েকজন পরে মারা যায়। এরপর পিরুজ নিজ অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করে।

তিনদিন পর উমর আঘাতের কারণে মৃত্যুবরণ করেন।

তার ইচ্ছানুযায়ী আয়িশার অনুমতিক্রমে তাকে মসজিদে নববীতে মুহাম্মদ (সাঃ) ও আবু বকরের পাশে দাফন করা হয়।

পরবর্তী অবস্থা   

মৃত্যুশয্যায় থাকা অবস্থায় উমর তার উত্তরসূরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করে যান। তিনি ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। এর সদস্যরা হলেন আবদুর রহমান ইবনে আউফ, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ, উসমান ইবনে আফফান, আলি ইবনে আবি তালিব ও জুবায়ের ইবনুল আওয়াম।

এই কমিটিকে নিজেদের মধ্য থেকে একজন খলিফা নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা সবাই আশারায়ে মুবাশশারার সদস্য ছিলেন। এসময় জীবিত থাকা সত্ত্বেও আরেক আশারায়ে মুবাশশারা সাঈদ ইবনে যায়িদ বাদ পড়েন। উমরের সাথে রক্তসম্পর্ক ছিল বিধায় তাকে এর বাইরে রাখা হয়। উমর তার আত্মীয়দেরকে এধরনের কাজে নিয়োগ দিতেন না।

পঞ্চাশ জন সৈনিকের একটি দলকে কমিটির বৈঠক চলার সময় ভবনের বাইরে প্রহরায় রাখার জন্য উমর নিযুক্ত করেন। বৈঠক চলাকালীন সময়ে আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর ও আবদুর রহমান ইবনে আউফ জানান যে তারা উমরকে হামলা করার জন্য ব্যবহৃত ছুরিটি দেখেছিলেন। আবদুর রহমান ইবনে আউফ জানান যে তিনি হরমুজান, জাফিনা ও পিরুজকে হামলার এক রাত আগে সন্দেহজনকভাবে কিছু আলোচনা করতে দেখেন। তাকে দেখে তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে এবং একটি ছুরি মাটিতে পড়ে যায় যা উমরের উপর হামলা করার জন্য ব্যবহৃত ছুরির অবিকল অনুরূপ। আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর নিশ্চিত করেন যে হামলার কয়েকদিন আগে তিনি এই ছুরিটি তিনি একবার হরমুজানের কাছে দেখেছিলেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল যে মদিনায় বসবাসরত পারসিয়ানরা এই হামলার জন্য দায়ী। এতে উমরের সন্তান উবাইদুল্লাহ ইবনে উমর উত্তেজিত হয়ে মদিনার পারসিয়ানদের হত্যা করতে উদ্যত হন। তিনি হরমুজান, জাফিনা ও পিরুজের মেয়েকে হত্যা করেন। মদিনার লোকেরা তাকে আরও হত্যাকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত করে। উমর এ সংবাদ জানতে পেরে উবাইদুল্লাহকে বন্দী করার আদেশ দেন এবং বলেন যে পরবর্তী খলিফা উবাইদুল্লাহর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন।

উমর ৬৪৪ সালের ৩ নভেম্বর মারা যান। ৭ নভেম্বর উসমান ইবনে আফফান তৃতীয় খলিফা হিসেবে তার উত্তরসূরি হন। দীর্ঘ আলোচনার পর বিচারে সিদ্ধান্ত হয় যে উবাইদুল্লাহ ইবনে উমরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না এবং এর পরিবর্তে তাকে রক্তমূল্য পরিশোধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। উমরের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর তার সন্তানের মৃত্যুদণ্ড জনসাধারণকে ক্ষিপ্ত করে তুলতে পারে এমন আশঙ্কায় উবাইদুল্লাহর শাস্তি হ্রাস পেয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *