স্বাস্থ্য

গ্যাস্ট্রাইটিস থেকে বাঁচার ঘরোয়া উপায়

গ্যাস্ট্রাইটিস মানে ‘পাকস্থলিতে প্রদাহ’। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাকস্থলির ভেতরের আস্তরণে ক্ষয়, ফুটা হওয়া এমন কি রক্তক্ষরণও হতে পারে। এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যালকোহল আর ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের জন্য হয়ে থাকে।

 

আজকাল কমন একটা রোগের নাম গ্যাস্ট্রাইটিস। বুকে জ্বালা-পোড়া নাহলে ব্যাথা লেগেই আছে! কিন্তুু এর আসল কারণ কি? আসুন জেনে নিই…

 

গ্যাস্ট্রাইটিস পরিপাক নালীর একটি অতি সাধারণ রোগ। পাকস্থলীর ভিতরের আস্তরণের প্রদাহ এবং জ্বালার কারণে এই রোগ হয়। পাকস্থলীর এই প্রদাহের জন্য পেটের উপর দিকে ব্যথা, জ্বালা, বুকজ্বালা, ঢেকুর তোলা, খাদ্য ওগরানো, বমির ভাব এবং কখনও কখনও বমি হয়। দীর্ঘ দিন ধরে বেদনা-নাশক ওষুধ খাওয়া (এন-এস-এ-আই-ডি’স), ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, ধূমপান করা, মদ্যপান করা এবং কয়েকটি অটো-ইমিউন পরিস্থিতির ফলাফল হল গ্যাস্ট্রাইটিস। এই রোগ অনেক সময় কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে। এন্ডোস্কোপি করে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। এর চিকিৎসার উপায়গুলি হল এন্টাসিড খাওয়া, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল চিকিৎসা এবং খাদ্যে পরিবর্তন আনা।

 

পেটে জ্বালা (গ্যাস্ট্রাইটিস) কি –

 

পাকস্থলীর ভিতরের আস্তরণের (মিউকোসা) প্রদাহ বা জ্বালা হচ্ছে গ্যাস্ট্রাইটিস। সুস্থ মানুষের পাকস্থলীতে অ্যাসিড, বিভিন্ন প্রকারের এনজাইম এবং শ্লেষ্মা তৈরি হয়। গ্যাস্ট্রাইটিসের সময় শ্লেষ্মার পরিমাণ কমে যায়, ফলে নিজের তৈরি অ্যাসিডই পাকস্থলীকে আক্রমণ করে। ফলে পেটে ব্যথা এবং জ্বালা হয়। এর সাথে খাবার উগরে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কখনও বমি হয়। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং ওষুধ দিয়ে গ্যাস্ট্রাইটিসের নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাময় করার হার খুবই উচ্চ।

 

সবার জীবনেই বিভিন্ন কারণে অন্তত একবার এই রোগ হয়। সংক্রমণ, ওষুধ, ধূমপান, মদ্যপান, চাপ এবং শরীরের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কারণগুলি গ্যাস্ট্রাইটিস হওয়ার মূল কারণ। এই রোগ দীর্ঘ স্থায়ী কিম্বা তীব্র হতে পারে। যদি উপসর্গগুলি খুব বিশিষ্ট ও তীব্র হয় এবং কয়েক দিনের ভিতরে নিরাময় হয় তখন তাকে একিউট গ্যাস্ট্রাইটিস বলা হয়। তুলনায় ক্রনিক গ্যাস্ট্রাইটিসের উপসর্গগুলি খুব কম বা মধ্য মাত্রার হয় এবং রোগ বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে।

 

পেটে জ্বালা (গ্যাস্ট্রাইটিস) এর উপসর্গ

 

বিভিন্ন প্রকারের গ্যাস্ট্রাইটিসের বিভিন্ন প্রকারের উপসর্গ দেখা যায়। সব চেয়ে সাধারণ উপসর্গগুলি হল পাকস্থলীতে জ্বালা হওয়া এবং বুকের মাঝ খানে বুকজ্বালা হওয়া। অনেক মানুষের কোন উপসর্গই থাকে না, শুধু তাদের বদহজম হয়।

 

গ্যাস্ট্রাইটিসের উপসর্গগুলির অন্তর্গত হল:

 

১.পাকস্থলীতে অথবা পেটের উপরের অংশে জ্বালা।

 

২.বুকজ্বালা (বুকের মাঝখানে জ্বালা)।

 

৩.অতিরিক্ত ঢেকুর তোলা।

 

৪. খাদ্য নালী বা মুখের মধ্যে খাদ্য ওগরানো।

 

৫.পেট ফোলা।

 

৬.খাবার পরে পেট ভার।

 

৭.বমি বমি ভাব।

 

৮.বমি হওয়া।

 

৯. বদ হজম হওয়া।

 

১০.ক্ষুধামান্দ্য হওয়া।

 

১১.হেঁচকি ওঠা।

 

গ্যাস্ট্রাইটিসের কারণ এবং প্রকারের উপরে নির্ভর করে এর উপসর্গগুলির তীব্রতা। যাই হোক, কিছু বিপদজনক লক্ষণ আছে যেগুলি লাল রেখা দিয়ে দাগ দিয়ে রাখতে হবে। নিচে দেওয়া লক্ষণ ও উপসর্গগুলি দেখা গেলে ডাক্তারবাবুর সাথে পরামর্শ করুন:

 

১.পেটের উপরের দিকে বা পাকস্থলীতে তীব্র ব্যথা (ছুড়ি মারা বা মোচড়ানোর মত ব্যথা)

 

২. রক্ত বমি (হেমাটেমেসিস)।

 

৩.গাঢ় বা কালো রঙের মল।

 

৪.মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা।

 

৫.নিঃশ্বাসের অসুবিধা।

 

৬.দুর্বলতা।

 

৭.ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।

 

এই উপসর্গগুলি গুরুতর গ্যাস্ট্রাইটিস বা ক্ষয়কারী

 

গ্যাস্ট্রাইটিসের ইঙ্গিত দেয়, যার জন্য জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু হওয়া প্রয়োজন।

 

পেটে জ্বালা (গ্যাস্ট্রাইটিস) এর চিকিৎসা 

 

সৌভাগ্যবশত, সব রকমের গ্যাস্ট্রাইটিসের কার্যকরী

 

চিকিৎসা এবং নিরাময় আছে। গ্যাস্ট্রাইটিস হওয়ার কারণ জানা গেলে তার জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসা করে রোগ সেরে যায়। গ্যাস্ট্রাইটিসের চিকিৎসা তার উপসর্গ অনুযায়ী করা হয় (এন্টাসিড, প্রোটোন-পাম্প ইনহিবিটারস বা এইচ ব্লকারস ব্যবহার করা হয়) এবং এন্টিবায়োটিক বা এন্টি প্যারাসাইটিক ড্রাগগুলি এর নির্দিষ্ট চিকিৎসার অন্তর্গত থাকে।

 

এন্টাসিডঃ

 

এই রকমের ওষুধে থাকে ম্যাগনেশিয়াম এবং এলুমিনিয়ামের লবণগুলি, যেগুলি পাকস্থলীর অ্যাসিডকে নিষ্ক্রিয় করে ব্যথা এবং জ্বালা কমায়। তবে, এদের জন্য উদরাময় বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

 

প্রোটোন-পাম্প ইনহিবিটারস এই রকমের ওষুধগুলি পাকস্থলীতে অ্যাসিডের উৎপাদন হ্রাস করে। এতে উপসর্গগুলি কমে যায় এবং জ্বালা ও প্রদাহের উপশম হয়। এই ধরণের কয়েকটি ইনহিবিটার হল প্যান্টোপ্রাজোল, ওমিপ্রাজোল, রাবেপ্রাজোল এবং এসোমিপ্রাজোল।

 

এটামঃ

 

এইচ2 ব্লকার্স এই রকমের ওষুধগুলি পাকস্থলীতে অ্যাসিডের উৎপাদন হ্রাস করে কিন্তু এরা প্রোটোন পাম্প ইনহিবিটারগুলির চেয়ে কম কার্যকরী। এই রকমের কয়েকটি ওষুধ হল র‍্যানিটিডিন, নিজাটিডিন এবং ফ্যামোটিডিন।

 

এন্টিবায়োটিক যে ব্যাকটেরিয়াগুলি, বিশেষত এইচ পাইলোরি, সংক্রমণ করে পাকস্থলীর আস্তরণের ক্ষতি করে, এই এন্টিবায়োটিকগুলি সেই ব্যাকটেরিয়াগুলির বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে এবং তাদের ধ্বংস করে। এই এন্টিবায়োটিকগুলির উদাহরণ হচ্ছে এমোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজোল অথবা ক্ল্যারিথ্রোমাইসিন।

 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে কয়েকটি চিকিৎসা পদ্ধতির সম্মিলন করে এবং সাথে জীবনধারার পরিবর্তন করে গ্যাস্ট্রাইটিসের চিকিৎসা করা হয়।

 

জীবনধারার ব্যবস্থাপনাঃ

 

স্বাভাবিক জীবনধারার উপরে গ্যাস্ট্রাইটিসের প্রভাব আছে। বিশেষত, তীব্র গ্যাস্ট্রাইটিসের ক্ষেত্রে জীবনধারার পরিবর্তন প্রয়োজন যাতে জটিলতা না হয়, কারণ শুধু ওষুধ যথেষ্ট নয়। গ্যাস্ট্রাইটিসের জন্য জীবনধারার যে সামান্য পরিবর্তন প্রয়োজন হয় তা হল:

 

খাবার পরিকল্পনা ঃ

 

নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বার বার অল্প করে খাবার খাওয়া ভাল, কারণ এক সাথে অনেকটা খাবার খেলে পেটে অ্যাসিডের উৎপাদন বেশি হয়। এছাড়া পাকস্থলীর ধারণক্ষমতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে (অধিক খাদ্য পেটে গেলে ওগরানোর সম্ভাবনা থাকে)। অধিকন্তু, দুই বার খাদ্য গ্রহণের মধ্যে সময়ের অধিক তফাৎ থাকায় অ্যাসিডের উৎপাদন হতে পারে, যা পাকস্থলীর আস্তরণের আরও ক্ষতি করতে পারে।

 

অন্ত্রের স্বাভাবিক উদ্ভিদগুলির বৃদ্ধিতে প্রোবায়োটিকসের ব্যবহার প্রোবায়োটিকগুলি সহায়তা করে এবং এর ফলে গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগের উপশম হয়। কিন্তু এগুলি পাকস্থলীর অ্যাসিডের ক্ষরণ রোধ করে না। দই এবং বাটার মিল্ক হল প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক এবং খাদ্যের সাথে এগুলির অন্তর্গত করা প্রয়োজন।

 

মদ্যপান পরিত্যাগঃ

 

মদ পাকস্থলীর ভিতরের আস্তরণের ক্ষতি করে।

 

ধূমপান পরিত্যাগ ধূমপান আরেকটি অভ্যাস যা পাকস্থলীতে অ্যাসিডের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে।

 

মশলাযুক্ত খাবার পরিত্যাগ করাঃ

 

মশলাযুক্ত এবং ঝাল খাদ্য পাকস্থলীতে অ্যাসিড উৎপাদন করে ভিতরের আস্তরণের ক্ষতি করে।

 

মশলাযুক্ত খাদ্য পরিহার করা

 

মশলাযুক্ত এবং ঝাল খাদ্য পাকস্থলীতে অ্যাসিড উৎপাদন করে ভিতরের আস্তরণের ক্ষতি করে।

 

ব্যাথার ব্যবস্থাপনাঃ

 

অন্যান্য বিকল্প ব্যথা হ্রাস করার উপায়গুলি বা ওষুধগুলি পাকস্থলীতে অ্যাসিডের ক্ষরণ হ্রাস করতে

 

সাহায্য করে।

 

  • ওজনের ব্যবস্থাপনা ওজন হ্রাস করতে পারলে বা বি-এম-আই’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারলে গ্যাস্ট্রাইটিসের তীব্রতা হ্রাস করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, খাদ্যের সাথে ফল, সবজি এবং গোটা শস্য উপকার করে।

 

চাপের ব্যাবস্থাপনাঃ

 

চাপের কারণেও পাকস্থলীতে অ্যাসিড বেশি তৈরি হয়। চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে যোগ ব্যায়াম, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং ধ্যান করা খুব উপকারী।

 

 আমাদের সাবধানে চলাফেরা করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link