FIFA বিশ্বকাপের অদ্ভূত বল

FIFA world cup all balls revolution। 

FOOTBALL। All balls information। 

 

ফুটবল মানেই বলের খেলা। তাই বলের দিকে সবারই নজর থাকে। সময়ের বিবর্তনে অন্যান্য কিছুর মতো বলেও পরিবর্তন এসেছে। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ফুটবল যখন ক্রমাগত জনপ্রিয় হতে থাকে, তখন শুধু ব্লাডারগুলোকে বল হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ১৮৭২ সালে ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বলকে গোলাকৃতির এবং পরিধি ২৭ থেকে ২৮ ইঞ্চি করার নিয়ম প্রবর্তন করে। বল গোকাকার করার প্রয়াসেই টুকরা টুকরা অংশ জোড়া দেয়ার দিকে নজর দেয় কারিগররা। ৮, ১৮, ২৬ ইত্যাদি টুকরা পর্যবেক্ষণের পর ৩২টি টুকরার বিধানের প্রতি নজর আটকে যায়। কিন্তু তবুও বল আরো নিখুঁত করার প্রয়াস চলতে থাকে এবং তা নিয়ে বিতর্কও অব্যাহত থাকে।

 

ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে বল নিয়ে সৃষ্টি হয় আরো বড় ঝামেলা। সেই ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপেও বল নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল গোলযোগ। দুই ফাইনালিস্ট উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনা উভয়েই নিজেদের সাথে করে আনা বল ফাইনাল খেলার দাবি জানিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত উভয় অর্ধে আলাদা আলাদা বলের ব্যবহার হয়েছিল।

 

সময়ের পরিক্রমায় খেলার ধরন যেমন বদলিয়েছে, তেমনি বিবর্তিত হয়েছে ফুটবল। বলাইবাহুল্য এখনকার ফুটবল অনেক উন্নতমানের। পরিবর্তন শুধু ভেতরেই হয়নি, বহিরাবরণেও হয়েছে। ফলে বলগুলো হয়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। প্রতিনিয়ত গবেষণা করা হচ্ছে আরো ভাল বল দিয়ে খেলানোর।

 

ফুটবল যেহেতু গোলের খেলা এবং দর্শকরা গোল দেখেই বেশি আনন্দ পায়। তাই বলের বিবর্তনে সবসময়েই গোলের ব্যাপারটি প্রাধান্য পেয়েছে। এ কারণেই আধুনিক বল অনেক গতিশীল, মুভমেন্ট সম্পন্ন। আধুনিককালের বলগুলোতে সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্যও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেই সাথে হাল আমলের ফ্যাশনকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বকাপ ফুটবলে বলের বিবর্তনের চিত্রটি এখানে তুলে ধরা হলো।

 

প্রথম বিশ্বকাপে গতানুগতিক চামড়ার বল : প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসেছিল উরুগুয়েতে ১৯৩০ সালে। সে বিশ্বকাপে খেলানো বলটি ছিল গতানুগতিক ধারার চামড়ার বল। চামড়াগুলো ওজনে বেশ ভারি ছিল। ফলে বলের দ্রুততা ছিল না। ১৯৩০, ১৯৩৪ এবং ১৯৩৮ সালে বিশ্বকাপের প্রথম তিনটি আসরে ভারি বলেই খেলা হয়েছে। সেই বলে জোরালো কিক নিলে খেলোয়াড়দের পায়ে খুব লাগত। আর বলগুলো স্পষ্টত গোল ছিল না। ফলে বলের উপর খেলোয়াড়দের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ থাকত না। বাঁকানো কিক নিয়ে গোল করা খেলোয়াড়দের পক্ষে সম্ভব হতো না।

 

চতুর্থ বিশ্বকাপে জোড়া চামড়ার বল : ১৯৫০ সালে চতুর্থ বিশ্বকাপের আসর বসেছিল ব্রাজিলে। এই আসরে চামড়া জোড়া দেয়া বলে ফুটবল খেলা হয়। পূর্বেকার চেয়ে বলের ওজন কিছুটা কমে আসে। তবে ভারিত্ব অটুট ছিল। ফলে খেলোয়াড়রা ইচ্ছামত বলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হন। ইংল্যান্ডের উইঙ্গার ক্রিস ওয়াডলকে দেয়া হয় বলটি পরীক্ষার জন্য। বলে কিক মেরে তিনি বললেন, বলটি খেলা খুব কঠিন। বলে তিনি লাথি মারতে পারছিলেন না। পা মচকে যাচ্ছিল। গোলকিপার এবং রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের বল শট করে হাফ সীমানা পার করতে কষ্ট হতো। ফরোয়ার্ডরা দূরপাল্লার শট কমই নিতেন। তাই সে সময় ছোট ছোট পাশে ফুটবল বেশি খেলা হতো। এতে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং উরগুয়ের খেলায় ছন্দ জাগে।

 

নবম বিশ্বকাপে টেলস্টার (Telstar) : ১৯৭০ সালে নবম বিশ্বকাপের আসর বসে মেক্সিকোতে। এই আসরে ‘টেলস্টার’ নামের বল ব্যবহৃত হয়। এডিডাস এই বল তৈরি করে। এই আসর থেকেই বিশ্বকাপ বলে জার্মান প্রতিষ্ঠান এডিডাসের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা বল বানানোর কাজটি ১৯৬৩ সালে শুরু করেছিল। এখন তারাই বলের নিয়ন্ত্রক। বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী ২০১৪ সাল পর্যন্ত ফিফার অনুমোদন সাপেক্ষে এডিডাস বিশ্বকাপের বল তৈরি করবে। সেবার ৩২ প্যানেলের বিখ্যাত বলটি ছাড়া হয়। পূর্বেকার বলগুলোর চেয়ে এডিডাস বলগুলো হালকা ছিল। তাই বলটি কিক নিয়ে খেলোয়াড়গণ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। কোয়ালিটি মানের ফুটবলাররা এডিডাস ফুটবলে বেশ দক্ষতা দেখিয়েছেন। বলটির মুভমেন্ট বেশি ছিল। বেশ জায়গা নিয়ে বলটি কাজ করলেও গতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব ছিল। এ ধরনের বলের ব্যবহারের কিছু কারণও ছিল। সেবারই কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে প্রথম মেক্সিকো থেকে ইউরোপে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল। আবার সেই সময়ে অধিকাংশ টেলিভিশন ছিল সাদাকালো। তাই বলটির চামড়ায় ছিল সাদা-কালো বত্রিশটা ষড়ভুজ।

 

দশম বিশ্বকাপে টেলস্টার ডুরলাস্ট (Telstar Durlast) : ১৯৭৪ সালে তদানিন্তন পশ্চিম জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে টেলস্টার ডুরলাস্ট নামের বল ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত আগের বলের মতোই ছিল।

 

একাদশ বিশ্বকাপে ট্যাঙ্গো ডুরলাস্ট (Tango Durlast) : ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে বলে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। সৌন্দর্য, গতি এবং আনন্দের প্রতীক হিসেবে বলটিকে বিবেচনা করা হয়েছিল।

 

দ্বাদশ বিশ্বকাপে ট্যাঙ্গো এসপানা (Tango Espana) : ‘ট্যাঙ্গো’ বলের সূচনা আগের আসরে শুরু হলেও স্পেনে অনুষ্ঠিত ১৯৮২ বিশ্বকাপে ব্যবহৃত ট্যাঙ্গো এসপানা দারুণ সাড়া জাগায়। বলটির আধুনিকতা বিশ্বকাপের খেলোয়াড়দের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এটি ছিল পানিরোধী প্রথম ফুটবল। বলটির স্পিড ভালো ছিল। পূর্ববর্তী বলের চেয়ে এই বলের মুভমেন্ট কম ছিল। স্ট্রাইকারদের জোরালো শটগুলো ঠেকাতে গোলরক্ষকরা বেকায়দায় পড়তেন। স্বল্প আয়তনে বলটি কাজ করানো সম্ভব ছিল। ইউরোপের শক্তিমান খেলোয়াড়রা দ্বাদশ বিশ্বকাপে ট্যাঙ্গো বল ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছিলেন। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো ধরাশায়ী হয় সে আসরে। শিরোপা অর্জন করে ইউরোপের ইটালি।

 

ত্রয়োদশ বিশ্বকাপে অ্যাজটেকা (Azteca) : ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে প্রাচীন অ্যাজটেক সভ্যতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে বলের নাম রাখা হয়েছিল অ্যাজটেকা। চামড়ার তৈরি বলের ব্যবহার আগের আসরেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। এবার পলিইউরোথিনের বল মাঠে নামে।

 

চতুর্দশ বিশ্বকাপে এডিডাস এট্রভাসকো (Etrvasco) : ১৯৯০ সালে চতুর্দশ বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক এবার এডিডাসের ‘এট্রভাসকো’ বল ব্যবহৃত হয়। বলটিতে অনেক বেশি সিনথেটিক বস্তু সংযোজিত হয়। এটরুসকো বলও ছিল পানি নিরোধক। অধিকন্তু পলিইউরিন ফোম দেয়া প্রথম বল ছিল এটি। পরবর্তীকালে সব বলেই নানা ধরনের ফোমের ব্যবহার হতে থাকে। শুস্ক ও ভেজা উভয় মাঠেই বলটি ছিল সাবলীল। বলটিকে খেলোয়াড়রা পায়ের পাতার সাহায্যে কিক নিয়ে ইচ্ছামতো বাঁক খাওয়াতে পারতেন। গতি এবং মুভমেন্ট দুই-ই ছিল এট্রভাসকো বলে। ফলে খেলোয়াড়রা আধুনিক বলের স্বীকৃতি দেয় এট্রভাসকো বলকে।

 

পঞ্চদশ বিশ্বকাপে কোয়েস্ট্রা (Questra) : ১৯৯৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে খেলানো হয় কোয়েস্ট্রা বল দিয়ে। এই বলটি আরো জোরে ও নিয়ন্ত্রিতভাবে খেলা যেত।

 

ষোড়শ বিশ্বকাপে ট্রাইকালার (Tricolore) : ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে ব্যবহৃত হয় ‘ট্রাইকালার’ বল। এটি ছিল বিশ্বকাপে প্রথম রঙিন বল। এই সময়ে অধিকাংশ মানুষ রঙিন টেলিভিশনে অভ্যস্থ হয়েছিল। ফলে বলের রঙেও সময়োপযোগী পরিবর্তন আনতে হয়। এতে ছিল লাল, সাদা ও নীলের ছোঁয়া।

 

সতেরোতম বিশ্বকাপে ফিভারনোভা : ২০০২ সালের বিশ্বকাপ হয় ‘ফিভারনোভা’ বল দিয়ে। ‘ফিভারনোভা’ বল সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তিতে তৈরি এবং বিজ্ঞাননির্ভর। বলটিতে টপ ব্লাডার ব্যবহৃত হয়। অত্যন্ত হালকা চামড়ার সাথে সিনথেটিক বস্তুর সমন্বয় ঘটে। বিশেষ ধরনের ফোম, গ্যাসভর্তি হালকা বেলুনের মতো খুপরির জন্য বলটি অনেক সূক্ষ্ম সুবেধী, যখনতখন বাঁক নিতে পারতো। ফলে বলটির প্রচণ্ড গতি থাকে। যার দরুণ শক্তির পরিবর্তে দক্ষতা বেশি প্রয়োজন পড়ে।

 

আঠারোতম আসরে টিমজিস্ট (Teamgeist) : ২০০৬ সালের জার্মানি বিশ্বকাপের বলের নাম রাখা হয় ‘টিমজিস্ট’ (টিম স্পিরিট বা দলীয় সংহতি)। এটি এডিডাস পরিবারের ১০ম বিশ্বকাপ বল। এই বলকে স্ট্রাইকাররা স্বাগত জানালেও গোলরক্ষকরা খুশি হয়নি। ডিজাইন এবং প্রযুক্তিতে সর্বশেষ সংস্করণ ব্যবহার করায় প্রচলিত বলগুলোর তুলনায় টিমজিস্ট হয় অন্তত তিনগুণ নিখুঁত। জার্মানিতে এডিডাসের গবেষণাগারে তিনবছর ধরে গবেষণা করে এই বল তৈরি করা হয়। এতে ৩২টি প্যানেলের বদলে দৃষ্টিনন্দন ১৪টি প্যানেল দিয়ে তৈরি করা হয়। বলটি হয়েছে আরো গোলকার। ফলে অনেক বেশি ছুটে চলে। এ কারণেই স্ট্রাইকাররা একে পছন্দ করে। অবশ্য বিশ্বকাপ শেষে দেখা যায়, গড় গোল কমে গিয়েছে। ২০০৬ বিশ্বকাপে ২.৩০ গড়ে গোল হয়েছে ১৪৭টি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন গড়। তবে এজন্য কোচদের কৌশল এবং ডিফেন্ডারদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

 

টেলস্টার ছিল বিশ্বকাপের প্রথম লেসবিহীন বল। আর টিমজিস্ট হচ্ছে বিশ্বকাপের প্রথম সেলাইবিহীন বল। ওয়াটারটাইট ব্যবস্থা এবং আরামপ্রদ করার জন্য এই বলে গ্লু এবং হিটিং প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়। ফিভারনোভার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বলটি ফ্লাইটে ঘোরার সময়ে তার গতি বোঝা যায় না। টিমজিস্টে সেই ভারসাম্য ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। এই বলে জার্মান জার্সি অনুযায়ী সাদা ও কালো রঙের প্রাধান্য দেওয়া হয়। আর মাঝখানে সোনালী রঙের বিশ্বকাপের প্রতিকৃতি তুলে ধরা হয়। আবার এই আসরেই ফাইনালের বলে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয় বলের রঙে এবং নামে। ফাইনালটি বার্লিনে হওয়ার বলটির নাম করা হয় ‘টিমজিস্ট বার্লিন’। এই বলের পুরোটাই হয় সোনালী রঙের এবং মাঝে থাকবে সাদা-কালো বর্ডার।

 

ঊনিশতম আসরে জাবুলানি (Jabulani) : এটি একটি জুলু শব্দ যার অর্থ ‘উদ্যাপন করা’। ২০১০ সালে ব্যবহৃত এ বলটিও এডিডাস পরিবারের। বলটি দেখার পর সবাই বলেছেন, বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটাই সর্বোত্তম বল। এই বল গুণগত মানে যেমন অনন্য, এর রঙের সমাহারেও ছিল স্বকীয়তা। দক্ষিণ আফ্রিকার ১১টি ভাষা আর ১১ জন খেলোয়াড়ের সাথে মিল রেখে এটিতে ১১টি রঙের সমাহার ঘটানো হয়।

 

বিংশতম আসরে ব্রাজুকা (Brazuca) : ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় ২০১৪ বিশ্বকাপের বলের নাম ব্রাজুকা, যার অর্থ ব্রাজিলিয়ান। মেসি, ক্যাসিয়াসের মতো খেলোয়াড়রাও এই বল পরীক্ষা করে এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। এ বলটিও এডিডাস পরিবারের। বলটি উন্মুক্ত করার আগে প্রায় আড়াই বছর পরীক্ষা করা হয়। প্রায় ছয় শ’ খেলোয়াড় ও ৩০টি দল একে পরীক্ষা করে। এই বলের গায়ের রঙগুলো ব্রাজিলের মানুষের বর্ণময় জীবনযাপনের দিক ফুটিয়ে তুলেছে। অনেকের মতে, এটা ‘১০০ ভাগ ব্রাজিলিয়ান বল।’

 

একবিংশতম আসরে টেলস্টার এইটিন (Telstar 18) : ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের বলের নাম ‘টেলস্টার ১৮’। ১৯৭০ সালে প্রথম অ্যাডিডাস বিশ্বকাপ বলের নাম এবং নকশাটির উপর ভিত্তি করে এটি তৈরি করা হয়েছে। গত বছর ৯ নভেম্বর বলটিকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। বলটি প্রথম স্পর্শ করেন ফুটবল রাজপুত্র লিওনেল মেসি।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *