ঠাণ্ডা পানি খেয়ে কি ওজন কমানো যায়?
হাঁটলে বা ব্যায়াম করলে শরীরে সঞ্চিত শক্তি ক্ষয় হয়। সহজ ভাষায় বলা হয় পরিশ্রম করলে ক্যালরি পোড়ে, এতে ওজন কমে। ক্যালরি হলো শক্তির একক।
শরীরের চর্বি বা পেশিতে যে শক্তি থাকে সেটা যত ক্ষয় হবে ততই শরীরের ওজন কমবে। আমরা যদি ঠাণ্ডা পানি পান করি তাহলে তা পেটে যাওয়ার পর শরীরের তাপমাত্রা অর্জন করবে, অর্থাৎ গরম হবে। পেটের মধ্যে ঠাণ্ডা পানিকে গরম করার জন্য শরীরের কিছু শক্তি ব্যয় হবে, কিছু ক্যালরি পুড়বে। আর ক্যালরি পুড়লেই তো ওজন কমার কথা। সুতরাং এটা বলা যায় যে ঠাণ্ডা পানি খেলে ওজন কমবে।
কিন্তু এখানে মনে রাখা দরকার যে এতে যেটুকু ওজন কমে তা খুবই সামান্য। তাপবিজ্ঞানের হিসাবে ১ সিসি পানির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি করতে যে শক্তির প্রয়োজন তাকে বলা হয় ১ ক্যালরি। মনে। করি একজন ১ গ্লাস বা ২০০ সিসি ঠাণ্ডা পানি ফ্রিজ থেকে বের করে পান করলেন, যার তাপমাত্রা মাত্র ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই পানি দেহের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উন্নীত করতে হলে দরকার ৬ হাজার ক্যালরি শক্তি। অর্থাৎ মাত্র ১ গ্লাস ঠাণ্ডা পানি খেয়ে ৬ হাজার ক্যালরি পোড়ানো সম্ভব। মনে হতে পারে এটা তো বিরাট ব্যাপার, কারণ ১ মাইল দৌড়িয়ে বা জগিং করে যেখানে মাত্র ১০০ ক্যালরি পোড়ানো যায়, সেখানে শুধু ১ গ্লাস ঠাণ্ডা পানি খেলেই তো তার ৬০ গুণ ক্যালরি পোড়ানো সম্ভব। আসলে এটা ঠিক না। খাদ্যের ক্যালরি আর তাপবিজ্ঞানের ক্যালরি এক নয়।
খাদ্যের শক্তির একক হিসেবে যে ক্যালরি ব্যবহার করা হয় সেটা সাধারণ তাপবিজ্ঞানের ১ হাজার ক্যালরির সমান। এই পার্থক্য বোঝানোর জন্য খাদ্য-পুষ্টিতে ব্যবহৃত ক্যালরি বোঝাতে বড় অক্ষরের ‘সি’ দিয়ে লেখা হয় Calorie’, আর অন্যান্য ক্যালরি বোঝাতে লেখা হয় ছোট অক্ষরের ‘সি’ দিয়ে calorie’।
সুতরাং ১ গ্লাস ঠাণ্ডা পানি খেলে তাপের একক হিসেবে যে ৬ হাজার ক্যালরি ক্ষয় হয়, সেটা আসলে খাদ্যের শক্তি হিসেবে মাত্র ৬ ক্যালরির সমান। এভাবে যদি সারা দিনে কেউ ৮-১০ গ্লাস ঠাণ্ডা পানি পান করেন তাহলেও ৫০-৬০ ক্যালরির বেশি শক্তি পুড়বে না।
এটা শরীরের ওজন কমাতে তেমন কোনো ভূমিকা রাখবে না। আমরা সাধারণত সারা দিনে দুই থেকে আড়াই হাজার ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করি, সেখানে এই ৫০-৬০ ক্যালরির হেরফের কোনো ব্যাপার না।