স্বাস্থ্য

বৃদ্ধ ব্যক্তিদের আতংক আলঝেইমার রোগ

 আলঝেইমার –  Alzheimer’s disease in Bengali 

 

আলঝেইমার রোগ মস্তিষ্কের একধরনের অস্বাভাবিকতা, যাতে সাধারণত স্মৃতিভ্রংশ হয়, রোগীর কগনিটিভ কার্যকারিতা বা পরিপার্শ্ব সম্পর্কে চেতনার ক্ষয় হতে থাকে। ৬৫ বছরের পরে এ রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি।

 

আলঝেইমার রােগ কাকে বলে?- What is Alzheimer’s disease in Bengali? 

 

আলঝেইমার রােগ (এ ডি) একটি ডিজেনারেটিভ রােগ, যেটি প্রকৃতিগতভাবে অপরিবর্তনীয় ও প্রগতিশীল। এটা একপ্রকারের ডিমেনশিয়া (স্মৃতিশক্তি লােপ পাওয়া), একটি যৌথ পরিভাষা যা সেইসমস্ত অবস্থার সাথে জড়িত যা মস্তিস্কের ক্রিয়াকলাপের স্থায়ী হানির সাথে যুক্ত, শেষ পর্যন্ত যার ফলে প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম করার ক্ষমতা হাস পায়। ভারতবর্ষে ডিমেনশিয়ার শিকার ৪ লক্ষের চেয়ে বেশী। এটি একটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সমস্যা।

 

আলঝেইমারের লক্ষণ- Alzheimer’s symptoms in Bengali 

 

আলঝেইমার রোগের অন্যতম একটি কারণ হলো বয়সের সাথে সাথে ব্রেন ভ্রংশ হয়ে যাওয়া। এ রোগে আক্রান্তরা সহজেই বিরক্ত হয়ে যান, প্রায়ই হতাশাগ্রস্ত দেখা দেয়। এর ফলে দৈনন্দিন কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে রোগীরা নিজে নিজের যত্ন নিতে পারেন না, নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী—কাউকেই চিনতে পারেন না। গোসল করা, টয়লেট করা, কাপড় পরা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি কারও সাহায্য ছাড়া করতে পারেন না। দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চিনতে পারেন না। খাবার গ্রহণ করার পরপরই তা ভুলে যান, হাঁটাচলা করতেও সমস্যা হয়। এ সময় রোগীর সংক্রমণ, জ্বর, ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্ত শূন্যতা, পুষ্টিহীনতা, ডিহাইড্রেশন ইত্যাদিও দেখা দিতে পারে।

 

রোগের অবনতির সঙ্গে সঙ্গে রোগী দ্বিধাগ্রস্ততা, অস্থিরতা, রোষপ্রবণতা, ভাষা ব্যবহারে অসুবিধা ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিভ্রংশতা দেখা দেওয়া এবং ক্রমান্বয়ে শারীরিক ক্রিয়াকর্ম বিলুপ্ত হয়ে অবশেষে মৃত্যুবরণ করেন।

 

আলঝেইমারের রোগের কারণ- Causes of Alzheimer’s disease in Bengali 

 

  • 65 বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের

আলঝাইমার রােগের ঝুঁকি বেশি।

  • মহিলারা আলঝেইমার রােগে আক্রান্ত

হওয়ার প্রবণতা বেশি।

  • হালকা জ্ঞানীয় প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের (এমন একটি অবস্থা যেখানে স্মৃতিশক্তি এবং অন্যান্য চিন্তা করার দক্ষতা হ্রাস পায়), তাদের ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে
  • মাথায় আঘাতের কারণে আজহেইমার হতে পারে, বার্ধক্যের সাথে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, এবং যদি একাধিক মাথায় আঘাতের আঘাতও থাকে। মাথায় আঘাতের পর প্রথম 6 মাস থেকে 2 বছরের মধ্যে ঝুঁকি সর্বোচ্চ বলে মনে করা হয়।
  • অনিদ্রা আলঝেইমার রােগের ঝুঁকি বাড়ায়। 
  • উচ্চ বায়ু দূষণ স্নায়ুর ক্ষতির হারকে বেঁধে

দিতে পারে, ডিমেনশিয়ার হার বাড়িয়ে দেয়।

  • অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন প্রাথমিক

সূচনা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

  • আহেইমার রােগ একই রকমের জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাসের কারণে ঘটতে পারে। 
  • ডাউন সিনড্রোম (একটি জেনেটিক ডিসঅর্ডার) রােগীদের আহেইমার রােগ হওয়ার • ঝুঁকি বেশি থাকে, যেখানে সাধারণ মানুষের তুলনায় 10-20 বছর আগে লক্ষণগুলি দেখা যায়।

 

আলঝেইমারের প্রতিরোধের উপায়- Ways to prevent Alzheimer’s in Bengali 

 

একটি রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা গেলে তা প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ জানা যায়নি। আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধের তেমন কোনো পথ নেই। তবে লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে যদি আমরা চিকিৎসা শুরু করি, তাহলে এই রোগটাকে একটু দমানো যায় বা সাময়িকভাবে প্রতিরোধ করা যায়। আজকাল সহজলভ্য কিছু মেডিসিন রয়েছে। সে মেডিসিনের প্রাপ্যতাও রয়েছে। সেগুলো যদি আমরা প্রয়োগ করে অসুখের মাত্রার গতি রোধ করতে পারি। 

 

একজন রোগী চিকিৎসা নিলে যে অবস্থায় থাকে, সে যদি চিকিৎসা না নেয় তবে আরও খারাপ অবস্থায় থাকে। পাঁচ বছর পর যে অবস্থায় যাবে, যদি আমরা চিকিৎসা করি তাহলে সে হয়তো এ পরিস্থিতিতে যেতে যেতে দশ বছর সময় লেগে যাবে। এ রোগীকে আমরা অতিরিক্ত পাঁচ বছর ভালো একটা জীবন কাটাতে দিতে পারি। এ রোগ প্রতিরোধের কোনো উপায় নেই। কেউ আক্রান্ত হলে পুরোপুরি সুস্থ হবেন না, তবে সাময়িকভাবে উন্নতি হবে। এ রোগীদের ঘুম না হলে ঘুমের ব্যবস্থা করা যাবে। প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে না থাকলে, তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link