স্বাধীন আবাস ( চতুর্থ অংশ)
মাটি ভাই চলে গেল শেষ বাঁশি বাজাতে। মাটি ভাইয়ের ভাষ্যমতে প্রতিদিন ঠিক ছয়টায় নাকি খেলা শেষ হয়। আসর নামাজের পর খেলা শুরু হয়। রাজ্যের সব ফুটবল প্রিয় ছেলেপুলে নাকি আসে ফুটবল খেলতে। স্বাধীন নামের লোকটি (মাটি ভাই এবং মেঘার মায়ের ভাষ্যমতে ফেরেশতা স্থানীয় লোক) সে নাকি খুব এক্সাইটেড থাকে বিকালের খেলা নিয়ে। ফুটবলের জার্সি, অ্যাংলেট, বুট জোড়া পড়ে একদম পুরোদস্তুর খেলোয়ার হয়ে মাঠে নামে। সেই সাথে সকল বাচ্চাদের জন্যও অনুরূপ ব্যবস্থা আছে। মাঠের পাশেই ছোট্ট ড্রেসিংরুমও নাকি আছে। জার্সি, ফুটবল যা যা লাগে খেলতে সব এখানে রাখা থাকে। বাচ্চারা একদম আন্তর্জাতিক খেলার মত ড্রেসিং রুমে এসে ড্রেস চেইঞ্জ করে খেলতে নামে। মাঠও একদম আন্তর্জাতিক মাঠের মতো সাজানো শুধু মাঠ তুলনামূলক ছোট আর গোলপোস্টও ছোট। মাটি ভাই হাসতে হাসতে বলেছিল- কি এক আজব ফুটবল খেলা দেহেন তো দেখি আফামুনি, গোলকিপার বলে বল ধরতে পারবো না। হা হা হা। এই খেলার আবার কি এক আজব নামও দিছে- ‘ফুটছাল ফুটবল’।
ফুটবলে খুব একটা আগ্রহ না থাকলেও সব শুনে ওদের খেলা দেখতে যাওয়ার খুব ইচ্ছে হচ্ছে মেঘার। কিন্তু এ রুমের মধ্যে কোথাও কেউ একজন হঠাৎ রোবটের মতো বলে উঠল এখন সময় পাঁচটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট। অর্থাৎ খেলা শেষ হতে আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি। দেখা যাবে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে মাঠ খুঁজে পেতে পেতেই খেলা শেষ। তাছাড়াও যার সাথে তার বিয়ের আলোচনা হচ্ছে নিজে থেকে তার সামনে পড়তে চায় না মেঘা। সে চায় স্বাধীন নামের ওই লোকটাই তার সামনে আগে আসুক।
রোবটের মতো গলার স্বরে আবার কেউ বলে উঠলো এখন সময় পাঁচটা বেজে সাতান্ন মিনিট। এ ঘরে রোবট আছে নাকি!? চারপাশে এদিক ওদিক তাকিয়ে মেঘা হাজার হাজার বাচ্চাগুলো ছাড়া কোন রোবট দেখতে পেল না। আবার এ বাচ্চা গুলার মধ্যে থেকে কেউ একজন তাকে সময় জানাচ্ছে এ সম্ভাবনা একেবারেই নেই। কারন, এতক্ষণ হয়ে গেছে মেঘা এ রুমে ঘোরাঘুরি করছে এ পর্যন্ত কোনো বাচ্চা তাকে খেয়ালই করেনি। এক ধরনের বাচ্চা বইয়ের দুনিয়ায় আর আরেক ধরনের বাচ্চা দাগাদাগির দুনিয়ার অতল গহ্বরে তলিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে তাদের আশেপাশে কেউ আছে কি নেই বা কি হচ্ছে সে সম্বন্ধে তাদের কোন আগ্রহই নেই।
আবার রোবটের মত উচ্চারণ- এখন সময় পাঁচটা বেজে ঊনষাট মিনিট।
এ সময় জানানোটা কেমন যেন অদ্ভুত ধরনের। কম্পিউটারের মধ্যে পনের মিনিট পর পর যে সময় জানায় অনেকটা সেরকম উচ্চারণের কিন্তু তাও যেন কেমন ভিন্ন। কোন কম্পিউটার থেকে এ শব্দ আসছে না তো? না। কোথাও তো কোন কম্পিউটার ও দেখা যাচ্ছে না এ ঘরে। হঠাৎ মেঘা খেয়াল করলো এই সময় জনানোর ধরনটা কেন অদ্ভুত- কম্পিউটারে সবসময় পনের মিনিট পর পর সময় জানায়। আর এখানে সময়টা জানানো হচ্ছে দুই মিনিট পর পর।
এখন সময় ছয়টা বেজে শূন্য মিনিট।
ছয়টা বেজে শূন্য মিনিট- এটা আবার কেমন কথা! ভারি মজা লাগলো মেঘার। এখন সময় ছয়টা- কম্পিউটারের সফটওয়্যার এমনটাই বলে সব সময়। এরপর আবার শূন্য বলার মানে কি?
এখন ছয়টা বাজে। তার মানে মাটি ভাই এখন খেলার শেষ বাঁশি বাজিয়েছেন। একটু পরেই তাহলে স্বাধীন নামের লোকটির সাথে মেঘার দেখা হচ্ছে।