খুশকি দূর করার উপায় জেনে নিন
খুশকি দূর করার উপায়
খুশকি শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। ত্বক ও চুলের জন্য খুশকি একটি মারাত্মক সমস্যা। খুশকির কারণে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে চুল পড়া শুরু হয়। এক গবেষণায় দেখা যায় খুশকিতে প্রায় 50% পর্যন্ত লোক আক্রান্ত হয়। মাথার ত্বক চুলকানো এবং মাথার ত্বকে চিটচিটে ভাব এই খুশকি অবস্থার প্রধান লক্ষণ।
খুশকি নানা রকম কারণে হয়ে থাকে। সাধারণত যেসব কারণে খুশকি হয় সেই কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মধ্যে শুকনো ত্বক, সিবোরহিক ডার্মাটাইটিস, চুলের জন্য ব্যবহৃত প্রশাধনী সামগ্রী ও পণ্যগুলির বিরূপ সংবেদনশীলতা এবং আমাদের মাথার ত্বকে বসবাস করে এমন কয়েকটি নির্দিষ্ট ধরণের ছত্রাকের বৃদ্ধি। বিগত বছরগুলোতে খুশকির চিকিৎসার জন্য প্রচুর ঔষধ তৈরি করা হলেও আমরা ঘরে বসে প্রাকৃতিকভাবে প্রতিকার পেতে পারি খুশকির সমস্যা থেকে যা দারুণভাবে কার্যকর হতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে খুশকি থেকে মুক্তি পেতে আমরা আজ কিছু সহজ ঘরোয়া উপায় জানব।
চা পাতার তেল
চা তো আমরা সবাই পান করি। কিন্তু আমরা কি জানি চা পাতার তেল আমাদের মাথার খুশকি দূর করতে কতটা উপকারী? চা পাতার তেলের মধ্যে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা খুশকির তীব্রতা এবং লক্ষণগুলি হ্রাস করতে দারুণভাবে সহায়তা করে।
জেনে অবাক হবেন যে, চা পাতার তেল ব্রণ থেকে শুরু করে নানা রকম ত্বকের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। চা গাছের বা পাতার তেল খুশকির জন্য দায়ী ক্ষতিকর ছত্রাকের নির্দিষ্ট স্ট্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অত্যন্ত কার্যকর। চা পাতার তেল খুশকির তীব্রতা ৪১% পর্যন্ত হ্রাস করতে সক্ষম এবং মাথার ত্বকের চিটচিটে ভাব দূর করে। তবে মাঝে মাঝে চা পাতার তেল অনেকের সংবেদনশীল ত্বকে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। এটি সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ না করে নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করলে ভালো উপকার হবে।
নারিকেল তেল
নারকেল তেল প্রায়শই খুশকির বিরুদ্ধে একটি কার্যকরী উপাদান। নারকেল তেল ত্বকের হাইড্রেশন উন্নত করে এবং শুষ্কতা রোধ করে যা খুশকি প্রতিরোধ করে। নারকেল তেলে রয়েছে নানা রকম খনিজ উপাদান যা মাথার চুল ও ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে। যারা নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার করেন, তাদের খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। খুশকির কারণ হিসাবে দায়ী ছত্রাকগুলোর নির্দিষ্ট স্ট্রেনের প্রভাবগুলি অনেকটাই নিষ্ক্রিয় করে দেয় নারকেল তেল।
বেশি পরিমাণে ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড গ্রহণ করা
ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলি কেবল আমাদের মাথার খুশকি দূর করার জন্যই নয় বরং আমাদের দেহকোষকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখে, হৃদপিন্ডের নানারকম রোগ প্রতিরোধ করে এবং ফুসফুস এর কার্যক্রমও স্বাভাবিক রাখে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড মাথায় ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর করে। ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাবে মাথায় খুশকি সহ নানা রকম সমস্যা তৈরি হয়। তাই আমাদের প্রচুর পরিমাণে ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিডযুক্ত খাবার খেতে হবে। বড় মাছগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এছাড়া বাদাম, আখরোট, কলা ইত্যাদি খাবারে এই পুষ্টি উপাদানটি পাবেন। ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং খুশকি হ্রাস করতে সহায়তা করে। এর অভাবজনিত কারণে শুষ্ক ত্বক, শুকনো চুল এবং খুশকি হতে পারে।
বেকিং সোডা
বেকিং সোডা খুশকি নিরাময় ও প্রতিকারে সহায়তা করার জন্য একটি দ্রুত, সুবিধাজনক এবং সাশ্রয়ী উপকরণ। আমাদের মাথায় মৃত ত্বকের কোষগুলি অপসারণ এবং চুলকানি কমাতে বেকিং সোডা ব্যাপকভাবে কার্যকরী। বেকিং সোডায় এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা খুশকি প্রতিরোধের জন্য উপকারী। ক্ষতিকর ছত্রাকগুলোর সাধারণ স্ট্রেনগুলি ধ্বংস করে দেয় বেকিং সোডা। বেকিং সোডা এর অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য ছত্রাকের বংশ বৃদ্ধিকে সম্পূর্ণরূপে বাধা দিতে সক্ষম। সেরা ফলাফলের জন্য, ভেজানো চুলের সাথে সরাসরি বেকিং সোডা প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন এবং এটি আপনার মাথার ত্বকে ম্যাসেজ করুন। এটি এক বা দুই মিনিটের জন্য বসতে দিন, তারপরে যথারীতি চুলগুলি শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার
রান্নাঘরে আমরা যে ভিনেগার ব্যবহার করি বিভিন্ন খাদ্য তৈরির জন্য তাকে অ্যাপল সিডার ভিনেগার বলে। খুশকি থেকে মুক্তি পেতে এই ভিনেগার কার্যকর ভূমিকা রাখে। ভিনেগারের অম্লতা মাথার ত্বকে মৃত ত্বকের কোষগুলির প্রসারণ করে। অ্যাপল সিডার ভিনেগার ছত্রাকের বৃদ্ধি কমাতে ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখে। আপনি যদি আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করে দেখতে চান তবে আপনার শ্যাম্পুতে কয়েক টেবিল চামচ যুক্ত করুন অথবা এটি সাধারণ নারকেল তেলগুলির সাথে মিশ্রিত করুন এবং সরাসরি চুলে স্প্রে করুন।
ঘৃতকুমারী ( অ্যালোভেরা)
আমরা যেসব মলম,প্রসাধনী এবং লোশন দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করি সে সব কিছুতেই প্রায় সময় অ্যালোভেরা হতে প্রাপ্ত নানারকম উপাদান ব্যবহার করা হয়। অ্যালোভেরা পোড়া, সোরিয়াসিস এবং কোল্ড ঘা এর মতো ত্বকের চিকিৎসায়ও ব্যবহার হয়। এটি খুশকির চিকিৎসার ক্ষেত্রেও উপকারী। অ্যালোভেরার অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যগুলি খুশকি থেকে রক্ষা করতে পারে। অ্যালোভেরা বেশ কয়েকটি প্রজাতির ছত্রাকের বিরুদ্ধে কার্যকর এবং মাথার ত্বকে খুশকি ও চুলকানির জন্য দায়ী ছত্রাকের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। অ্যালোভেরা বেটে রস করে তেলের সাথে মিশিয়ে মাথায় ত্বকে ব্যবহার করতে হবে। এতে মাথার চুলও সুন্দর হবে। খুশকিও দূর হবে।
স্ট্রেস কম নিন
স্ট্রেস তথা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা সুস্বাস্থ্যের পথে প্রধান অন্তরায়। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের শরীরের স্বাস্থ্যসহ সমস্ত কিছুকে প্রভাবিত করে। যদিও স্ট্রেস থেকে খুশকি সৃষ্টি হয় না তবে স্ট্রেসের কারণে মাথার ত্বকে নানা রকম বিরুপ প্রভাব দেখা দেয়। এটি মাথার ত্বকে শুষ্কতা এবং চুলকানির মতো লক্ষণগুলিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। একটি দুর্বল প্রতিরোধ ব্যবস্থা আপনার শরীরের কিছু ছত্রাকের সংক্রমণ এবং ত্বকের অবস্থার সাথে লড়াই করার ক্ষমতা কমাতে পারে যা খুশকিতে অবদান রাখে। তাই স্ট্রেস লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে কিছু চাপ কমানোর কৌশল যেমন মেডিটেশন, যোগা, গভীর শ্বাস প্রশ্বাস বা অ্যারোমাথেরাপি ব্যবহার করে দেখুন। স্ট্রেস ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করতে পারে এবং খুশকি সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয় আরও নানা রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন স্ট্রেস বেশি নিলে। তাই চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট ব্যবহার করুন
স্যালিসিলিক অ্যাসিড অ্যাসপিরিনের মধ্যে পাওয়া প্রাথমিক যৌগগুলির মধ্যে একটি যা এর প্রদাহ বিরোধী গুণাবলীর জন্য দায়ী। অ্যাসপিরিন ছাড়াও অনেক অ্যান্টি-ড্যানড্রফ শ্যাম্পুতে স্যালিসিলিক অ্যাসিডও পাওয়া যায়। স্যালিসিলিক অ্যাসিড শুষ্ক ত্বক এবং আলগা শিথিলতা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। স্যালিসিলিক অ্যাসিডযুক্ত শ্যাম্পু খুশকির তীব্রতা হ্রাস করতে অধিক কার্যকর। সিলিসিলিক অ্যাসিডযুক্ত শ্যাম্পু একইভাবে সেব্রোহাইক ডার্মাটাইটিস এবং খুশকি এর চিকিৎসার জন্য কার্যকরী। দুটি অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট পিষে গুড়ো করে পাওডার বানিয়ে তা আপনার স্যাম্পু এর সাথে মিশ্রিত করে চুলে ব্যবহার করুন।
এভাবে আমরা খুশকি থেকে মুক্তি পেতে পারি খুব সহজেই। খুশকি হলে অবহেলা করবেন না। খুশকি বেশি হওয়া আপনার টাক মাথার কারণ হতে পারে। খুশকি বেশি হলে মাথায় রক্ত চলাচল কমে যায়। ফলে ব্রেইনের কার্যকারীতা কমে যায়। তাই খুশকি হলে মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়। চুল আমাদের শরীরের অন্যতম সৌন্দর্যের বিষয়। খুশকির কারণে মাথার চুলের গোড়া নরম হয়ে তা পড়ে যাওয়া শুরু করে। খুশকি বেশি হলে মাথার ত্বকে চুলকানি ও প্রদাহ হয়। মাথায় চুলকানি বৃদ্ধি পেলে আমরা যখন চুলকাই তখন আমাদের চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়। ফলে চুল পড়ে যায়।