ছোট গল্পসাহিত্য

ভালোবাসার গল্প রোমান্টিক

সকলেই সবসময় ভালোবাসা সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে থাকে। এ কথাটা শুনলেই মানুষ অন্য রকম একটা মনের ভাব চলে আসে। আর এর সাথে সম্পর্কিত যে কোন ঘটনা বা কাহিনী গল্প শুনতে মানুষ বেশি পছন্দ করে। চলুন দেখি আজকের ভালোবাসার গল্প

 

আমার স্বামী আমার হাতে একটি শপিং ব্যাগ  তুলে দিয়েই বলতে লাগলেন :

অরু তুমি যতো যাই বলো না কেন আমার মতো করে তোমাকে কেউই এতো ভালো বাসবে না। মাস না পেরুতেই প্রতিবার বায়না ধরো তোমাদের বাড়ি যাবে বলে। বুঝি না বাবা বাড়ি কি আছে তোমার? এখানে কি কম যত্নে থাকো নাকি তুমি, নাকি আমার মা তোমাকে কম ভালোবাসাে?  

 

আদিবের মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললাম, আপনে তো আপনার মার সাথে থাকেন, তাই আপনে বাবা-মা অনুপস্থিতি আপনে বুঝবেন না। বলেই জামা কাপড় গুছাতে লাগলাম। 

_ বলছি তো অরু তুমি যেতে পারবে না ওই বাসায়।তুমি কেন শুনছো না আমার কথা? নাকি আমার কথা তোমার কাছে মূল্যহীন? এখানে কিসের অভাবে আছো তুৃমি? 

বাবা-মার অভাবে আছি। আমি তো সারাজীবনের জন্য চলে যাচ্ছি না, দুই- তিন দিন থেকেই তো চলে আসবো। কেন শুনছেন আমার কথা? 

 

আদিব যে কিছুতেই শুনছে না আমার কথা। এবার তো শুরুই করে দিয়েছে আমাকে যে কতো ভালোভাবে রেখেছি। তুমি আমাকে এখনো ভালোবাসতে পারোনি, কিসের অভাব তোমার? মাসের প্রথম সপ্তাহে তোমার  জন্য নতুন ড্রেস কিনে আনি। যে খাবার পছন্দ করো, সেই খাবারই বাসায় নিয়ে আসি। তবু এতে তোমার মন ভরে না। বুঝি না তুমি কি চাও? আমার মাকে তুমি এখনো নিজের মা করে নিতে পারোনি। তোমার যা ইচ্ছে তুমি করো। 

 

এবার আর আদিবের কথা চুপ করে হজম করতে পারলাম না। আদিবকে নিয়ে খাটের কোনে দুইজন একসাথে বসলাম।

__ আপনে আমার স্বামী, বাবা মার কষ্ট আপনে এখনো বুঝবেন না। কথা গুলো না বলে পারছি না, তবে শোনার পর মন খারাপ করবেন না। কিছু দিন আগে মনে আছে আমাদের বাড়ি থেকে দুধকুলি পিঠা পাঠায়? কেন জানেন?  এই দুধকুলি পিঠা আমার খুব পছন্দের । হঠাৎ এই কথা কেন বলছি সেটাই তো বলবেন?এই পিঠা দেখে কি খুশি হয়েছিলাম।আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না।  পিঠা  সবার আগে আপনাকে দেই, দেখলাম আপনে খুব মজা করে খাচ্ছেন।আমাকে বললেন খেতে, চুলোতে রান্না বসানো তাই না খেয়ে রান্না ঘরে চলে আসি। তারপর মাকে (শাশুড়ী) বাটিতে করে দেই, অনেক গুলো পিঠেই দিয়েছিলাম। দেখলাম আমার শাশুড়ী ও খুব আয়েশ করে খাচ্ছে। তারপর আমি আমার রান্নার কাজে চলে আসলাম। মা জিজ্ঞাসা করলো না তুই খেয়েছিস কি না। যাই হোক সবার খাওয়া শেষের দুই পিস পিঠা আমি ফ্রিজে তুলে রাখি। হাতের কাজ শেষ করে আমি খাবো বলে তখন হাতের কিছু কাজের জন্য খাওয়া হয়নি।। বিকালে যখন আপনে, আমি, মা সবাই মিলে গল্প করছি তখন ভুলেই গিয়েছি, ফ্রিজেতে যে আমার জন্য পিঠে তুলে রেখেছিলাম। হঠাৎ মা বলে ওঠলো এই অরিন, আদিব কে পিঠে গুলো দেও ফ্রিজ থেকে। আপনাকে তো পিঠে দিতে আমার কষ্ট হয়নি, বরং তখন কষ্ট লেগেছে, যখন মা আমি পিঠে খাইনি জানা সত্বেও, আমাকে বললো না পিঠে খেয়ে নে। আপনাকে যখন পিঠে দিলাম তখন আপনেও খুব মজা করে খাচ্ছিলেন।আমি খেয়েছি কি না জিজ্ঞেসা করার প্রয়োজন করেননি। 

__তারপর আমাদের বাসায় যাই আপনে আর আমি। দুপুর খাবারের শেষে মা আমাকে হাতে একটি বাটি তুলে দেয়। বাটিতে চার পিস পিঠা ছিলো। পিঠা গুলো দেখে অবাক হই আমি। মাকে কিছু বলার আগেই মা বলে ওঠে —

পিঠা গুলো তুর বাবার জন্য রেখেছিলাম।কিন্তু তুর বাবা কি তেমন যে মেয়ে কে ছাড়া খাবে? তুর এই পিঠা পছন্দের তাই পিঠা  গুলো তুর জন্য রেখে দিয়েছে। কতোবার বললাম যে অরিনের জন্য পিঠা পাঠিয়ে দিয়েছি, কিছুতেই শুনলেন না আমার কথা। তারপর বাবা আর আমি দুইপিস পিঠা খেয়ে,আর বাকি পিঠা আপনার জন্য নিয়ে আসি।আমি ও বুঝেছিলাম আপনার ও এই পিঠা পছন্দের। 

 _আদিবের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আদিব মাথা নিচু করে বসে আছে। এতোক্ষণে আমি আমার চোখ গুলো মুছে নিলাম। 

_ আদিব আপনে যে বললেন মাসের প্রথম সপ্তাহে আমার জন্য নতুন জামা কিনে আনেন। আমার বাবা হয়তো প্রতি মাসে জামা কিনে দিতেন না, কিন্তু বেতন পাওয়ার সাথে সাথেই আমাদের নিয়ে ঘুরতে বের হতেন। পরিবারের সবাই আনন্দ করে বাসায় ফিরতাম। 

মাসে মাসে জামা কাপড় না কিনতে পারলে ও বছরে দুটো ঈদে মনের মতো করে আমাকে ঈদের শপিং করে দিতেন। জানো একবার কি হয়েছিল?  মা আর আমাকে নিয়ে গেছে জামা কিনতে বাবা যে কি মুশকিলে পরেছিলো। অনেক দোকান ঘুরার পর একটা ড্রেস আমার পছন্দ হয়। কিন্তু একই ড্রেস কিন্তু দুটো জামার দুটো রং।৷ বাবার পছন্দ হয়েছে গোলাপি রঙের জামা।আর মার পছন্দ হয়েছে  নিল রঙের জামা। পরে বাবা দুইটা জামাই কিনে নেয় আমার জন্য। কারন আমার পছন্দ হয়েছে তাই। 

 

__আমার বাবার কাজ শেষে আাসার সময় সব সময় আমার পছন্দের চকলেট নিয়ে আসতেন।আমি এতো বড়ো হওয়া সত্বেও আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসতে ভুল করতেন না। কারন আমি ভালোবাসি চকলেট খেতে।

আমাকে এতো আগলে রাখা সত্বেও আমি বাবাকে বলিনি ভালোবাসি। আমি যখন বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম না তখন, বাবা বলেছিলেন সবাইকে দাওয়াত করা হয়ে গেছে, এখন যদি তুৃমি না চাও – আমি জোর করবো না।তখনও দেখেছিলাম বাবার চোখে আমার প্রতি ভালোবাসা। 

_ যেই আপনে আমাকে বলেছিলেন আমার যতোটুকু ইচ্ছে পড়াশোনা করাবেন,সেই আপনেই আমার পড়াশোনা করানো নিয়ে অনিহা দেখালেন। আমার বাবা তারপর  মাোটা অংকের টাকা দিয়ে প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করান। যখন ফরমফিলাপ এর  সময় চলে আসলো, আপনে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন আমি যেন ফর্ম পুরন না করি। সেদিন আপনে আমার ইচ্ছের কোনো গুরুত্ব দেননি। আমার বাবা সেদিন ও চেয়েছিলেন আমি যে ফরমফিলাফ করি। আমার বাবা সেদিন আমাকে টাকা ও দিয়েছেন, কিন্তু সেদিন আপনার চাওয়া পুরন করাতে ফরমফিলাফ করিনি। সে আপনে জানতে চাননি আমি কি চাই?  সেদিন আমার বাবা মন খারাপ করে ছিলেন কারন আমি আমার ইচ্ছে পুরন করতে পারিনি বলে। 

__বাবারা তাদের সন্তানকে ভালোবাসে, কিন্তু তারা কখনো প্রকাশ করেন না। এই যে আপনে আমার প্রতি একটু খুশি হলেই বলেন ভালোবাসি কিংবা ধন্যবাদ। বাবারা কিন্তু তা করে না। তারা মুখ লুকিয়ে হাসে। যাতে তার হাসি অন্য কেউ দেখে না ফেলে। বাবারা ভালোবাসে খুব যত্নে, আড়ালে, মুগ্ধতায়। তারা কখনো প্রকাশ করে না। আর যাই হোক বাবা কখনোই লোক দেখানো ভালোবাসে না। ( এই কথাটা যে আদিবকে বলেছি,আদিবের বুঝতে ভুল হয়নি) 

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।ধন্যবাদ সবাইকে) 

 ( সমাপ্ত )

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link