ছোট গল্পসাহিত্য

ভালোবাসার গল্প – স্কুল জীবনের গল্প

ভালোবাসার গল্প > প্রথম দেখাতে পছন্দ, ভাব- ভালোবাসা হয়ে গেল। ছেলেটি ফুল নিয়ে ঘুরাঘুরি করতে দেখে মেয়েটি প্রশ্ন করলো তোমার হাতে ফুল কেন? তখন ছেলেটি বলে গোলাপ ফুলটা তোমার জন্য এনেছি নাও? মেয়েটি খুশিতে আত্মহারা হয়ে ফুলটা হাতে নিয়ে বললো, থ্যাংককিউ। ছেলেটি বললো আমি থ্যাংককিউ নেবনা। মেয়েটি বললো তাহলে কি চাও? ছেলেটি বললো আগামীকাল বলবো।

 

আজ মেয়েটি বললো গতকাল ফুলটা দিয়েছো কেন বল? ছেলেটি বলে ধরো আজও এই ফুলটা তোমাকে দিলাম নাও? গতকাল ছিলো রোজ ডে তাই তোমাকে গোলাপ ফুল দিলাম। আর আজ প্রোপজ ডে, তাই আজও তোমাকে ফুল দিলাম। মেয়েটি থ্যাংকস দিলে ছেলেটি বলে থ্যাংকস আমি চাইনা। আমি চাই তোমার মুখের মিষ্টি হাসি। প্রতিদিন আমার সামনে এসে আমাকে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে যেও। আর সারাজীবন তুমি এভাবেই হাসি-খুশিতে থেকো এটাই আমি চাই। ভালোবাসার গল্প তখন মেয়েটি বললো আমিও চাই তুমি সারাজীবন হাসি খুশিতে থাক । ১১ফেব্রুয়ারি উভয় প্রমিজ করলো ক্লাস রুম সাজিয়ে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে প্রপোজ করা। প্রপোজের দিন নির্ধারন হলো ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ । ছেলে-মেয়ে দু’জনই একই স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়তো। গোলাপ ফুল দিয়ে মেয়েকে প্রপোজ করলো ছেলেটি। ছেলেটি প্ররমিজ করলো প্রতি বছর আজকের এই দিনে তোমাকে সারাটি জিবন পছন্দের গোলাপ আমি দেব।

মেয়েটিও ফুল পছন্দ করতো, তাই প্রতি মাসের ১৪তারিখসহ বছর ঘুরে আসলে ১৪ফেব্রুয়ারি ছেলেটি মেয়েটিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে গোলাপের তোড়া দিতো আর সাথে থাকতো একটি চিঠি। যেখানে লেখা থাকতো সে তাকে কতোটা ভালোবাসে। ভালোবাসার গল্প

ক্লাস এইটে উঠার পরে এক দুর্ঘটনায় ছেলেটি মাথায় আঘাত পায়। এতে তার দু’চোখে আঘাতের প্রভাব পড়ে। স্বাভাবিক ভাবে সবকিছু দেখতে পারেনা। তখন তার সুন্দর আনন্দোময় জীবন ব্যাহত হয়। মেয়েটি এখন আর ছেলেটিকে আগের মতো ভালোবাসে না। ৯ম শ্রেণীতে উঠার পর হঠাৎ একদিন স্কুলে খেলা ধুলার অনুষ্ঠানের দিন ছেলেটি স্কুলের বারান্দায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আশপাশের ছাত্র-ছাত্রী এ অবস্থা দেখে ছেলেটির কাছে ছুটে আসে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলে ছেলেটির মৃত্যু হয়। কিন্তু ছেলেটি মারা যাওয়ার এক বছর পরের ভ্যালেন্টাইন্স ডে তেও মেয়েটি একি ভাবে চিঠি সহ গোলাপের তোড়া পেল। চিঠিতে লেখা ছিল“আমি গত বছরের এই দিনে তোমাকে যতটুকু ভালবাসতাম, এখন তার থেকে আরও বেশি ভালবাসি। প্রতিটি বছর পার হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তোমার জন্যে আমার এই ভালোবাসা আরো শতগুণ বাড়বে”।

READ MORE:  মুসা বিন শমসের বাংলাদেশী ধনকুবের রহস্য! | Moosa Bin Shamsher Biography

মেয়েটি ভাবল, ছেলেটি মারাগেল। ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে আমার বাসায় গোলাপের তোড়া আর চিঠি কোথায় থেকে এল!! মন খারাপ করে ভাবতে লাগলো এমন একটা দিনে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দু’জন হেটে ছিলাম। তার বাড়ীতে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু সে নেয়নি তাই যাওয়া হয়নি। অথচ বাড়ীর নিকটবর্তী সেই হাটা চলার পথের পাশে তার কবর দেখতে হয়েছে আমাকে। ভাবতে ভাবতে মেয়েটি ফুলগুলিকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখল। ভালোবাসার গল্প

 

ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর দিন বাসায় সকালে বন্ধু মাসুদ এসেছিল। তার সাথে দেখা হয় দরজার সামনে। সে চিঠিসহ গোলাপের তোড়া দেয় আমায় গত বছর। স্কুল বন্ধ থাকায় মিসু সরাসরি আমায় দিতে পারেনি। বাবা-ভাইদের ভয়ে সে বাসায় আসেনি। তাই বন্ধু মাসুদের মাধ্যমে চিঠি আর গোলাপ পাঠায়। অবাক হয়ে চিঠিটি পড়ে দেখলাম এটা তার ভালোবাসা পাঠিয়েছে।

কিন্তুু এখন আবার কে আমার সাথে মজা করছে?

মেয়েটি তার বন্ধু নায়েবকে ফোন করে জানতে চাইলো এই কাজ কে করেছে। নায়েব তাকে যা বলল তা হল “আমি জানি যে ছেলেটি তোমাকে পছন্দ করতো, সে অনেক দিন আগে মারা গিয়াছে। আমি এও জানি তুমি আজকে আমাকে ফোন করেছ কেন? নিশ্চয়ই তার জীবনের সব জানতে চাইবে?

তাহলে শুন, তোমার ভালোবাসা অনেক আগেই একদিন তোমার জন্য ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে গোলাপ ফুল আর চিঠি তোমাকে দিতে আমাকে দিয়ে ছিলো। তখন গোলাপ আর চিঠি তোমাকে না দিয়ে আমার কাছে রেখে দিয়েছিলাম। ভালোবাসার গল্প

অনেক দিন পর বাসায় পুরনো জিনিষ পত্র খুঁজতে গিয়ে এই চিঠিটি পেলাম। ভাবলাম এটা তার আমানত তোমার জন্য, আগে না দিলেও এখন তোমাকে দেয়া দরকার।

তাই এখন সেই চিঠির সাথে ফুল কিনে দিয়ে বন্ধু বিপুলের মাধ্যেমে তোমার কাছে পাঠিয়ে দিয়াছি। সে তোমাকে তিনদিন বাসায় না পেয়ে দরজার সামনে রেখে চলে আসে।

READ MORE:  প্রথম প্রেম - কবিতা

মেয়েটি তখন বন্ধু নায়েবকে বেইমান,মির জাফর বলে তার উপর ভীষণ চটে গিয়ে ফোন কেটে দেয়।

যখন মেয়েটি চিঠির বাকী অংশ হাতে নিল পড়তে, তখন সে কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠিটি খুলে দেখতে পেল, সেখানে তার জন্যে আরো কিছু লিখে গেছে। সেখানে লিখা ছিল, এক সময় স্কুল জীবনে সবচেয়ে বেশি কথা তোমার সাথে হতো। আমাকে ছাড়া এক মহত্ত্ব ভালো লাগতোনা তোমার। তাই তোমার সাথে অধিক সময় কাটিয়েছি। একদিন না দেখলে কথা না বললে সেই দিনটা তোমার কষ্টে কাটতো। অভিমানে আড়ালে থাকলেও হৃদয় থেকে দূরে নয় তুমি। যে হৃদয়ে বৃন্দুবৃন্দ ভালোবাসার সিন্ধু গড়েছিলাম, খোদাই করে লিখেছিলাম তোমারই নাম। আর সেই তুমি স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়ে ব্যথার সাগরে ভাসিয়ে দুঃখের আগুনে জ্বালিয়ে নিশ্বঃ করে দিয়েছ। অন্তবিহীন এদু’চোখে স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমাকে নিয়ে। তুমি নিঃশ্ব করে দিলে তবুও তোমার প্রতি আমার নাই কোন অভিযোগ। শুধু মনেরেখ এ জীবনে প্রথম মনটা দিয়ে ছিলাম তোমাকে। ভালোবাসার গল্প

আমি এতোটা হতভাগ্য যে তোমার বিরক্তির কারন হয়ে গেলাম। জীবনটা তুচ্ছ মনে হচ্ছে, তাই অন্য স্কুলে গিয়ে ভর্তি হতে চেয়েছি, বন্ধুরা যেতে দেয়নি। আমি একেবারে চলে যাব। চলে গেলে তোমার কষ্ট লাঘব হবে, নিশ্চয়ই সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাবে তুমি। কিন্তু মনে রেখ আমি তোমাকে সব সময় হাসি সুখী দেখতে চেয়েছি, তোমার চোখের পানি নয়। ভালোবাসার গল্প

সারাজীবন তোমার সাথে থাকতে চেয়েছি। বিধির লিখন যে হৃদয়ে থাকে সে জীবনে আসেনা। তখন মানুষের কিছু করারও থাকেনা। ভালোবাসা জীবনে সত্যি হয়ে একবারই আসে। যখনই তুমি কোন ফুল দেখবে তখনি আমাদের ভালবাসার কথা মনে পড়বে। মনে পড়বে স্কুল জীবনে একসাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোকে। সব সময় হাসি খুশিতে থাকতে চেষ্টা করবে। আমি জানি এটা অনেক কঠিন হবে, তবুও আমি আশা করি তুমি পারবে।

READ MORE:  মানিক গাছ - ছোটগল্প

আজ ১৪ফেব্রুয়ারি ছেলেটির কবরের পাশে দাড়িঁয়ে মেয়েটি বলছে, তোমাকে ভালোবাসার ফুল দিচ্ছি, গ্রহণ কর। মনে রেখ তুমি, তোমারি ছিলাম আছি থাকবো। তুমি কি জীবনে একবার আমার সাথে কথা বলবে, দেখা করবে শুধু একবার! নিয়ে যাও তোমার কাছে চিরদিনের জন্যে আমায়। সব সময় মনে পড়ে তোমায়, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। “নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি” প্রতিবিম্বে প্রতিবিম্বে শুধুই তুমি।” ভালোবাসার গল্প

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *