সুমেরীয় সভ্যতা (The Sumerian Civilization)
সুমেরীয় সভ্যতা (The Sumerian Civilization) প্রাচীন মিসরে যখন সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল (আনু: খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে) তখন বর্তমান ইরাক ও এর পার্শ্ববর্তী টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর অববাহিকায় কালপরিক্রমায় কতকগুলাে সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। একই ভূখণ্ডে গড়ে ওঠায় সভ্যতাগুলাে একত্রিতভাবে ‘মেসােপটেমীয় সভ্যতা’ নামে পরিচিত। মেসােপটেমিয়া একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমি।
একে অনেকে ‘Fertile Crescent’ বা ‘অর্ধ চন্দ্রাকৃতি উর্বর ভূমি’ও বলে থাকে। মেসােপটেমীয় ভূখণ্ডে যে সভ্যতাগুলাে গড়ে উঠেছিল এগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হচ্ছে সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, এসিরীয় সভ্যতা ও ক্যালডীয় সভ্যতা। সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দের দিকে সুমেরীয়রা সর্বপ্রথম উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এলেমের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছিল।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দে কৃষি ও কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ এ জাতি বর্তমান ইরাকের উর’কে কেন্দ্র করে মেসােপটেমিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন এ সভ্যতার উন্মেষ ঘটিয়েছিল । সুমেরীয়দের সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতি: মেসােপটেমীয় সভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন ও সমৃদ্ধ সভ্যতা হলাে সুমেরীয় সভ্যতা।
কয়েকটি নগরকে কেন্দ্র করে সুমেরীয়রা সভ্যতার Sumerian Civilization বিকাশ ঘটিয়েছিল । এগুলাের মধ্যে তাদের রাজধানী উর ছাড়াও উরুক, লারমা, ইরুদু, কিশ, লাগাস অন্যতম। সুমেরীয় সভ্যতায় ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় নেতাদের পদবি ছিল ‘পাতেজী। ক্ষমতাধর পাতেজীরা ছিলেন একাধারে ধর্মযাজক, সমরনেতা ও সেচব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক। সুমেরীয়দের আয়ের মূল উৎস ছিল কৃষি। প্যাল্টাজেনেট সমারসেট ফ্রাই বলেন, “তারা ছিল দক্ষ কৃষক, মেসােপটেমিয়ার উর্বর মাটিতে দক্ষতার সাথে চাষাবাদ করত।
বেশ দ্রুত তারা নিজেদের প্রয়ােজন মিটিয়ে উদ্বৃত্ত উৎপাদন দিয়ে তাদের অদক্ষ প্রতিবেশীদের সাথে বাণিজ্য শুরু করেছিল।”১৭ তারা ফিলিস্তিন, ফিনিশিয়া, ক্রিট, ইজিয়ান দ্বীপমালা, ভারত, এশিয়া মাইনর ও মিসরের সাথে বাণিজ্য করত। কৃষি ও বাণিজ্য ছাড়াও বাড়িঘর নির্মাণ শিল্প, মাটির আসবাবপত্র তৈরি, নৌকা তৈরি ইত্যাদি কর্মমুখী ।
পেশায়ও সুমেরীয়রা নিয়ােজিত ছিল। সুমেরীয় সমাজব্যবস্থা মূলত তিনটি শ্রেণিতে বিন্যস্ত ছিল। পুরােহিত, অভিজাত, বণিক এবং উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের নিয়ে উচ্চশ্রেণি, চিকিৎসক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, প্রকৌশলী, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীশ্রেণি মধ্যশ্রেণিতে এবং নিম্নশ্রেণিতে অবস্থান ছিল ভূমিদাস ও শ্রমিকদের। সুমেরীয় সমাজে শিল্প ও ব্যবসা পরিচালনায় মেয়েদের অধিকার দেওয়া হয়েছিল।