মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ির ইতিহাস পর্ব – ১

বাংলা বিহার উড়িষ্যার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ (যার নামানুসারে মুর্শিদাবাদ,১৭১৭-১৭২৭)

এর আকস্মিক মৃত্যু ঘটে ১৭২৭ সালে! এ সময় মুর্শিদকুলি খাঁ এর জামাতা, সুজাউদ্দিন বাংলার মসনদে বসে।। এবং ১৭২৭ সালে বিনােদবাড়ি সহ দুইখন্ড কাওলা দলিলে, পুরাে আলেপসাহী পরগনার (ঈশা খাঁ এর ১২ পরগনার একটি) বন্দবস্ত গ্রহন করে শ্রীকৃষ্ণ আচার্য। তবে অনেক জায়গায় বলা আছে যে শ্রীকৃষ্ণ আচার্য, নবাব আলীবর্দি খাঁ হতে তার বন্দবস্ত গ্রহন করে। কিন্তু আলীবাদ খাঁ ১৭৪০ সালে বাংলার মসনদে বসে আর শ্রীকৃষ্ণু আচার্য ১৭২৭ সালে বন্দোবস্ত লাভ করেন। আর এখানেই একটা বিভ্রান্তি আছে!

শ্রীকৃষ্ণ আচার্য থাকতেন বগুড়ার “বাকরে”। ১৭৩৪ সালে শ্রীকৃষ্ণ আচার্য এর মৃত্যু ঘটে। শ্রীকৃষ্ণ আচার্য এর মৃত্যু পর এই জমিদারির মালিক হয় তার চার পুত্র।

এদের নাম:

১. রাম রাম আচার্য ২. হরিনাম আচার্য ৩. বিষ্ণু রাম আচার্য ৪. শিবরাম আচার্য

তারা সবাই থাকতেন বগুড়ায়, তারা তাদের সুবিধানুসারে প্রথমে যশােরের মনিরামপুর । উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে এবং পরবর্তীতে চারভাই নৌকাযােগে আয়মন নদীর (এখনাে এর অংশবিশেষ রয়েছে মুক্তাগাছায়) তীরবর্তী বিনােদবাড়ি অঞ্চলে আসেন। সে সময় এই অঞ্চল খুব একটা ঘনবসতি পূর্ণ ছিলনা, চারদিকে ছিলাে অরন্য এবং জলাভূমি।

তারা যে স্থানে নৌকা ভিড়িয়ে ছিলেন তা আজও “রাজঘাট” নামে পরিচিত। রাজঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে পরবর্তী সময়ে এলাকার অধিবাসীরা সে সময়ের প্রথা অনুযায়ী নাজরানা দিতেন। সে সময় বিনােদবাড়ির অধিকাংশই ছিল প্রান্তিক চাষী ও জেলে, জমিদারদের যারা নাজরানা দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ‘মুক্তারাম’ নামে এক কর্মকার তার। নিজের হাতের একটি পিতলের গাহ বা দীপাধার জমিদারদের নাজরানা দেন। জমিদাররা মুক্তারামের “মুক্তা” ও সঙ্গে “গাছা” লাগিয়ে সে অঞ্চলের নাম করে “মুক্তাগাছা’।

বর্তমানের যে জমিদার বাড়ি রয়েছে তা কেবল একটি অংশ। শ্রীকৃষ্ণ আচার্য এর চার ছেলে। আলাদা আলাদা বিলাসবহুল প্রাসাদ নির্মান করে বসবাস করতেন। | দক্ষিণাংশে বাস করতেন জ্যেষ্ঠ পুত্র রামরাম আচার্য। বর্তমানে যেখানে উপজেলা ভূমি অফিস এবং নবারুন বিদ্যানিকেতন প্রতিষ্ঠিত।

READ MORE:  পৃথিবীর অপরাজিত এক যোদ্ধা জেনারেল খালিদ বিন ওয়ালিদ 

চতুর্থপুত্র শিবিরাম আচার্যের মালিকানাধীন অংশে বর্তমানে শহিদ স্মৃতি কলেজের অবস্থান। পুরাকীর্তি হিসেবে জমিদার বাড়ির যে অংশটুকু অধিগ্রহনে সমর্থ হয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, সেখানে বসবাস করতেন দ্বিতীয়পুত্র হরিরাম আচার্য চৌধুরী। হরিরাম আচার্য চৌধুরী ও তার বংশধরদের মালিকানাধীন অংশটুকুই বর্তমানে “মুক্তাগাছার রাজবাড়ি” নামে পরিচিত।

উল্লেখ্য যে, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের পুলিশ একাডেমীতে অংশে বসবাস করতেন বিষ্ণু রাম আচার্য।