আপনার শিশুর জন্য ৬টি পুষ্টিকর খাবার রেসিপি
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। শিশুদের সঠিক পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালে ভবিষ্যতে প্রজন্ম হবে সুস্থ এবং রোগহীন।শিশু মানেই সুন্দর। আর নবজাতক মানে আদরের আর যত্নের আরেক নাম। জন্মের পর বাচ্চার জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই। মায়ের দুধই উত্তম খাদ্য। দুধ খাওয়ানোর জন্য কোন সময় নির্ধারণের দরকার হয় না। বাচ্চার ক্ষুধা লাগলে মা তা টের পায়। তখনই বাচ্চাকে খাওয়ানো যায়। কিন্তু শিশু যখন বড় হতে থাকে তখন মায়ের দুধের পাশাপাশি তার অন্য খাবারের প্রয়োজন হয়। তাই আজ নিয়ে এসেছি আপনার শিশুর জন্য ৬টি পুষ্টিকর খাবার রেসিপি।
ফিরনি
শিশুকে খিচুড়ি, চিড়ার পােলাও, সুজি এসব ছাড়াও দিতে পারেন ফিরনি। ফিরনি বানিয়ে শিশুকে খাওয়াতে পারেন। এটিও শিশুর জন্য পুষ্টিকর একটি খাবার। পাশাপাশি এটি শিশুর খাবারের স্বাদে ভিন্নতা আনতে সাহায্য করবে। আসুন জেনে নিই ফিরনি প্রস্তুত প্রণালী।
উপকরণ: পােলাও চাল, আধা লিটার দুধ, চিনি পরিমাণ মতাে, এলাচি, দারচিনি, কিসমিস।
রেসিপি
- পােলাও এর চাল ভালাে করে ধুয়ে নিন। এবার এটিকে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। আধা ঘন্টা পর এটি থেকে পানি ঝরিয়ে নিন।
- পােলাও চাল গুলাে এবার ভালাে করে বেটে নিন। তবে পুরােপুরি বাটবেন না। অর্ধেক বেটে নিবেন।
- এবার রান্নার পাত্রে দুধ, এলাচি, দারচিনি, কিসমিস দিয়ে ভালাে করে জাল দিয়ে নিন। তারপর এতে আধ বাটা চাল মিশিয়ে দিন। এরপর এতে পরিমাণ মতাে চিনি মিশিয়ে নাড়তে থাকুন।
- ভালােভাবে রান্না হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে আপনার শিশুর জন্য পরিবেশন করুন ফিরনি।
ডিমের খিচুড়ি
এটিও দারুণ এক খাবার শিশুর জন্য। আসুন এবার জানি শিশুর জন্য ডিমের খিচুড়ি বানানাের রেসিপি।
উপকরণ: চাল, ডাল, ডিম, তেল, লবণ, হলুদ, পরিমাণ মতাে পানি, পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা।
রেসিপি
- চাল, ডাল ভালাে করে ধুয়ে নিন। একটি পাত্রে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে পানি ঝরিয়ে নিন। একইসাথে সকল সবজিও ধুয়ে কেটে নিন।
- একটি পাত্রে পরিমাণ মতাে তেল দিয়ে গরম করে নিন। গরম তেলে পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা দিয়ে ভালাে করে নাড়তে থাকুন।
- পেঁয়াজ কুচি ও অন্য মসলা ভালাে করে ভাজা হয়ে এলে
এতে চাল ও ডাল দিয়ে ভালাে করে ভাজতে থাকুন। চাল, ডাল ভাজা হয়ে এলে এতে পরিমাণ মতাে পানি ও লবণ দিয়ে দিন। এবার পরিষ্কার একটি পাত্র দিয়ে এটি ঢেকে অল্প আঁচে রান্না করুন ও সেদ্ধ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন।
- চাল ও ডাল কিছুটা সেদ্ধ হয়ে এলে এবার এতে সকল সবজি দিয়ে দিন। পরিমাণ মতাে হলুদের গুড়া দিয়ে দিন। সবজি গুলাে মিশিয়ে আবার ঢেকে দিন। সবজি ও চাল, ডাল সেদ্ধ হয়ে গেলে এতে একটি ডিম ফাটিয়ে। দিয়ে দিন। এবার ডিমটি ভালাে করে মিশিয়ে রান্না
করতে থাকুন ৫ থেকে ১০ মিনিট।
- ৫ থেকে ১০ মিনিট রান্না করে এবার নামিয়ে চুলা থেকে। প্রস্তুত হয়ে গেলাে আপনার শিশুকে খাওয়ানাের জন্য ডিমের খিচুড়ি।
কলিজার খিচুড়ি
শিশুর খাবারের রেসিপির শুরুতেই আমরা জানবাে কলিজার খিচুড়ি সম্পর্কে। অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু একটি খাবার হল কলিজার খিচুড়ি। এটি কিভাবে বানাতে হয় এবার আমরা সেটিই জেনে নিবাে।
উপকরণ: মুরগীর কলিজা, চাল, ডাল, সবজি, পেঁয়াজ, আদা বাটা, রসুন বাটা, অন্যান্য মসলা, তেল, লবণ।
রেসিপি
- মুরগির কলিজা ছােট করে কেটে ভালাে করে ধুয়ে নিন।
- চাল, ডাল ভালাে করে ধুয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন এবং এর পর এ থেকে পানি ঝরিয়ে নিন। পাশাপাশি সকল শাকসবজিও ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
- এবার রান্নার পাত্রে তেল নিয়ে গরম করে নিন। গরম
তেলে পেঁয়াজ কুচি, রসুন ও আদা বাটা দিয়ে দিন।
- পেঁয়াজ ও অন্যান্য মসলা ভালাে করে ভাজা হয়ে এলে এতে চাল ও ডাল দিয়ে দিন। এবার এটি নাড়াচাড়া করতে থাকুন। স্বাদমতাে লবণ ও হলুদের গুড়া দিয়ে দিন।
- চাল, ডালের মিশ্রণ হালকা ভাজা হলে এতে পরিমাণ মতাে পানি দিয়ে দিন। এবার এটি ঢেকে দিন। এবার অপেক্ষা করুন। চাল, ডাল সেদ্ধ হয়ে এলে এবার এতে সকল সবজি ও কলিজা দিয়ে উপকরণ গুলাে ভালাে করে মিশিয়ে নিন।
- সব উপকরণ সেদ্ধ হয়ে এলে এবার এটি নামিয়ে নিন। হয়ে যাবে আপনার শিশুর জন্য কলিজার খিচুড়ি।
চিড়ার পােলাও
কলিজার খিচুড়ি তাে জানলাম। এবার জানবাে চিড়ার পােলাও এর রেসিপি সম্পর্কে। এটিও শিশুদের জন্য একটি দারুণ খাবার হতে পারে। আসুন জেনে নিই চিড়ার পােলাও কিভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
উপকরণ: চিড়া, সবজি, পেঁয়াজ, ডিম, লবণ।
রেসিপি
- ভালাে করে চিড়াগুলাে ধুয়ে নিন এবং এরপর ফুটানাে।
পানিতে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে এর পর পানি ঝরিয়ে নিন। একই সাথে পেঁয়াজ ও অন্যান্য সবজিও ধুয়ে নিন। • এবার রান্নার পাত্রে তেল নিয়ে গরম করে নিন। তেল । গরম হয়ে এলে এতে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে দিন। পেঁয়াজ সামান্য বাদামী রঙের হয়ে এলে এতে অন্য সকল সবজি দিয়ে দিন। এর সাথে পরিমাণ মতাে লবণ যােগ করে নিন। এবার এটি ভালাে করে নেড়েচেড়ে মিশিয়ে নিন। • এবার সবজি সেদ্ধ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। সবজি সেদ্ধ হয়ে এলে এতে একটি ডিম ফাটিয়ে দিয়ে দিন।
এবার ডিমটি ভালােভাবে মিশিয়ে নিন। • এবার এতে পানি ঝরানাে চিড়া গুলাে দিয়ে দিন। এবার ভালাে করে এটি নাড়াচাড়া করুন। ৫ থেকে ১০ মিনিট অল্প আঁচে রান্না করতে থাকুন। ৫-১০ মিনিট পর শিশুর জন্য পরিবেশন করুন গরম গরম চিড়ার পােলাও।
ডিমের সুজি
ডিমের সুজিও শিশুর জন্য খুবই উপাদেয় একটি খাবার। দারুণ সুস্বাদু এই খাবার শিশুর ক্ষুধা দূর করবে, পাশাপাশি শিশুর পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করবে। এছাড়াও শিশুরা এটি খেয়ে অনেক তৃপ্তিও পাবে। তাহলে দেরি না করে আসুন জেনে নিই ডিমের সুজি তৈরির উপায়।
উপকরণ: সুজি, প্রয়ােজন মতাে পানি, তেল, গুড়, সবজি।
রেসিপি
- রান্নার পাত্রে প্রয়ােজন মতাে সুজি নিয়ে হালকা ভাজতে থাকুন। সুজি বাদামী রঙের হয়ে এলে এতে পরিমাণ মতাে পানি মিশিয়ে নিন। এবার এতে সবজি গুলাে ভালাে ধুয়ে, কেটে দিয়ে দিন।
- সুজি হালকা নাড়তে থাকুন সারাক্ষণ। এতে সুজি রান্নার পাত্রে লেগে যাবে না। এবার সুজি ভালাে করে সেদ্ধ হয়ে গেলে এতে ডিম ফাটিয়ে দিয়ে দিন।
- ভালাে করে নাড়াচাড়া করতে থাকুন। অল্প আঁচে রান্না করুন ২ থেকে ৩ মিনিট, পাশাপাশি সুজি ও ডিমের মিশ্রণটি ভালােভাবে নাড়তে থাকুন।
- এবার এতে পরিমাণ মতাে তেল দিয়ে দিন, একই সাথে গুড়ও দিয়ে দিন। এবার এগুলাে একসাথে ভালাে করে মিশিয়ে নিন। এরপর পরিবেশন করুন।
সবজি খিচুড়ি
|চাল, ডাল সবজি এবং তেল ব্যবহার করে তৈরি করা সবজি খিচুড়ি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এটি একটি প্রধান খাবার যা শিশুদের প্রয়ােজনীয় | শক্তির চাহিদা পূরণ করার জন্য পর্যাপ্ত ক্যালােরি সরবরাহ করে। এছাড়াও চাল এবং ডালকে একত্রিত করার ফলে এদের সম্পূরক বৈশিষ্ট্যের কারণে এত আমিষের গুনগত মান বেড়ে যায়।
রান্নায় ব্যবহৃত তেলের কারণে শক্তির ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং এটি সবজি হতে প্রাপ্ত ভিটামিন ও বিটা ক্যারােটিনের শােষণকে বাড়িয়ে দেয়।
উপকরণ – চাল, ডাল, হরেক রকম সবজি
রেসিপি
প্রস্তুত প্রণালী
১.চাল এবং ডাল ভালােমত পরিষ্কার করে ধুয়ে ফুটানাে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পর ভালােমত পানি ঝরিয়ে নিন।
২. বাদাম হাল্কা ভেজে নিয়ে গুড়া করে নিন।
বিজ্ঞাপণ
৩. সব শাকসবজি এবং পেঁয়াজ ভালােমত ধুয়ে কেটে নিন।।
৪. একটি রান্নার পাত্রে তেল গরম করুন। তেল গরম হলে এতে পেঁয়াজ কুচি, আদা-রসুন বাটা| দিন। এরপর রান্না করে পরিবেশন করুন।