ছোট গল্পসাহিত্য

পাণ্ডুলিপি – গল্প নং ২

অনেকদিন কোন জায়গায় সাজ্জাদ ভাই আর মুকুল কোন রহস্যময় জায়গায় যাচ্ছে না খবর সংগ্রহ করতে। তাই তাদের মন ভাল নেই। তখনই টেলিফোন বেজে উঠলো। মুকুলের খুশি দেখে কে? তখনই উঠে সে ফোন ধরলো৷ ধরে শুনতে পেলো প্রোফেসর সিমান্ত! সে তখনই বলে উঠল সীমান্ত স্যার আপনি! ভাল আছেন স্যার? তিনি উত্তর দিলেন হ্যাঁ! ভাল আছি। তোমাকে তো অনেকদিন কোন খবরে দেখি না? ব্যাপার কী? সেরা সাংবাদিক হয়ে কী সাংবাদিক এর কাজ শেষ? মুকুল বলল, না স্যার। অনেক দিন কোন ভাল কেস নেই তো, তাই আসছে না। প্রোফেসর বললেন, আচ্ছা তাহলে তোমার কাছে এখন সময় আছে! তোমরা কী আমার একটা প্রজেক্টে কাজ করবে? মুকুল মনে বলল, এত মেঘ না চাইতেই বৃস্টি! তখনই বলে উঠলো হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই! প্রোফেসর বললেন, তাহল আজই আমার অফিসে চলে আসো! মুকুল হতভম্ব হয়ে বলল, স্যার আপনার অফিস না নিউ-ইয়র্কে? স্যার বললেন হ্যাঁ! তো চলে আসো! সব খরচ আমি দিবো! আর তোমার সহকর্মীকেও নিয়ে এসো৷ পরের দিন রাতেই মুকুল আর সাজ্জাদ ভাই রওয়ানা হলেন নিউ-ইয়র্কের উদ্দেশ্য৷ পরদিনই পৌছে গেলো ওরা। পৌছে তারা রওয়ানা দিলো প্রোফেসর সিমান্তর বাড়ির উদ্দেশ্য৷ পৌছেও গেলো কয়েক ঘন্টায়। প্রায় ২৮ ঘন্টার জার্নিতে তারা অনেক ক্লান্ত৷ তাই, তারা গিয়েই বিশ্রাম নিলো। এরপর রাতে প্রোফেসর এর সাথে তারা কথা বলা শুরু করলো। প্রোফেসর তাদের প্রজেক্ট সম্পর্কে বললেন৷ প্রোফেসর এর এবারের প্রজক্ট হচ্ছে মহাকাশে পাড়ি জমানো। তিনি এই লক্ষ্যে অনেক দূর কাজ করেছেন৷ তিনি সফলও হয়েছেন। মুকুল আর সাজ্জাদ ভাইয়ের প্রথমে মিথ্যা মনে হলেও, প্রোফেসর এর বিশাল রকেট দেখে তারা বুঝতে পারে৷ তারপর প্রোফেসর তাদের প্ল্যান বলা শুরু করেন। প্রোফেসর মহাকাশে শুধু যাবেনই না! সেখানে দিন (৪৮ ঘন্টা) অবস্থানও করবেন। সেখান থেকে বিভিন্ন তথ্য তিনি আনবেন এবং বাংলাদেশ সরকার এর কাছে হস্তান্তর করবেন। কারণ, এটি বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণাকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে যাবে৷

READ MORE:  মৎস্য মায়া

 

ঘরে বসে মাসে আয় করুন 1000 ডলার

 

 

মুকুল একটু ভয় পেলেও সাজ্জাদ তাকে আশা দেয়। সাজ্জাদ বলে, মুকুল আমরা প্রথম এমন একটা মিশনে যেতে পারবো! এটা কী আমাদের জন্যে বড় ব্যাপার নয়? ভাগ্যে জা আছে তাই তো হবে! মুকুল তারপর রাজি হয়। প্রোফেসর তাদের বলে, আমাদের এখনো যেতে কিছুদিন বাকি আছে। তোমরা কয়দিন জীবনের ইচ্ছাগুলি পুরণ করতে পারো। কারণ, হয়তো মিশন আমাদের সফল নাও হতে পারে।

মুকুল সাজ্জাদ এরপরের কয়দিন পরিবারের সাথে টেলিফোনে অনেকক্ষন কথা বলে। যে যে খাবার খুব পছন্দ সেগুলি খায়। আমেরিকার কিছু জায়গায় বেড়াতে যায় এভাবেই ১০ দিন চলে যায়৷

অবশেষে মিশনের দিন চলে আসলো। তারা খুশি থাকলেও কিছুটা ভয়ে ভয়েও ছিল।

রাত ১২ টায় তাদের রকেট টেক অফ করবে৷ তাদের সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আগে থেকেই নেয়া ছিল। তারা প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানীয় নিয়েছিল সাথে। অক্সিজেনও ছিল পরিমাণমতোই। চলে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! প্রায় ৫০০০ নির্মাতার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কস্ট করে বানানো রকেটটি আকাশে উড়াল দিলো প্রোফেসর, মুকুল এবং সাজ্জাদকে নিয়ে। রকেট উড়ার সময় তাদের অনেক চাও অনুভুত হয়। কিন্তু, কিছুক্ষণ পর সেটি ঠিক হয়্র যায় ঠিক কিছুক্ষণ পরেই তারা মহাকাশে পৌছায়। তারা আনন্দিত! কারণ, প্রথম কোন বাংলাদেশী মহাকাশে আসিতে পেরেছে। তারা গবেষণা শুরু করলো।

এর মধ্যে তারা অনেক নতুন অভিজ্ঞতার অধিকারী হয়! তাদের ফিটনেস বজায় রাখার জন্যে প্রচুর শরীরচর্চা করতে হয়। অনেক তথ্য তারা সংগ্রহ করতে পারে তাদের দিনগুলি খুব খারাপ না গেলেও তেমন ভালও যায়নি। অবশেষে তিনদিন পর তারা পৃথিবীতে ফিরে আসতে সক্ষম হয়।

সাজ্জাদ ভাই বললেন, মুকুল চট্টগ্রাম যেতে হবে আমাদের। সেখানে একটি মন্দিরের রহস্য উদঘাটন করতে। মুকুল বলল, সব রহস্যময় জায়গা কী আমাদের ভাগ্যেই পড়ে? যাইহোক! ভাল কথা৷ তো আমরা কবে যাচ্ছি? সাজ্জাদ ভাই বললেন এক সপ্তাহ পর।

এক সপ্তাহ পর…..

সাজ্জাদ ভাইকে ফোন করলো মুকুল৷ মুকুল বলল, সাজ্জাদ ভাই আমি আপনার বাড়ির নিচে। চলে আসুন। সাজ্জাদ ভাই নিচে নামার পর তারা দুজন রওয়ানা হলো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। তাদের সেখানে পৌছাতে অনেকক্ষন লেগে গেলো। যাওয়ার সময়ের প্রায় পুরোটুকুই সাজ্জাদ ভাই ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। আর মুকুল চিন্তা করছিল মন্দিরটি নিয়ে। কী এমন আছে? যে তাদের সেখানে যেতে হচ্ছে?। তারা একটি সুন্দর হোটেলে উঠেছে। তারা দুপুরে খেয়েদেয়ে একটু ঘুমিয়ে নিয়ে মন্দিরের উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়। তারা সেখানে পৌছানোর পর দেখতে পায় মন্দিরে পুরোহিত বসে আছেন। তারা তার কাছে যায় । তারপর তাকে জিজ্ঞেস করে মন্দিরের আদ্যপান্ত সম্পর্কে। কেন এ মন্দিরটি রহস্যময় তাও তারা জিজ্ঞেস করে। পুরোহিত উত্তরে বলেন,

এ মন্দির ১৭ শতকের দিকে রাজা দেব বানিয়েছিলেন। তিনি প্রতিদিনই এখানে আসতেন পূজা করতে৷ প্রায় ১০০ লোকের সমাগম হতো এই মন্দিরে প্রতিদিন। কিন্তু, কিছুদিন পর রাজা দেব মারা গেলে এ মন্দিরকে অনেকে ভুতের আড্ডাখানা বলে দাবি করেন৷ আবার অনেকে বলেন এ মসজিদে নাকি রাজা দেবের আত্মা থাকে৷ এসব কথার কারণে, মানুষ রর সমাগম এ মন্দিরে বন্ধ হয়ে যায় । তবুও কিছু মানুষ আসলেও এখন তা আর একদমই নেই। মুকুল তখনই তাকে প্রশ্ন করে বসে, তো আপনি কী মনে করেন এটি একটি ভৌতিক মন্দির? পুরোহিত একটু কাচুমাচু করে বলেন, না না! তা হতে যাবে কেন? ওগুলা শুধু মানুষ এর ধারণা। তারপর সেদিনের মতো মুকুল আর সাজ্জাদ হোটেলে ফিরে আসে। আসার পর মুকুল বলে, সাজ্জাদ ভাই, আমার ঐ পুরোহিতকে একটু সন্দেহজনক মনে হয়েছে। সাজ্জাদ ভাই বললেন, আমারও তাই মনে হচ্ছে । কিন্তু সেটা কী হতে পারে? মুকুল বলে, উনি বলেছিলেন যে ঐ মন্দির নাকি রাজা দেব বানিয়েছিলেন । রাজা দেব সম্পর্কে আগে আমাদের কিছু জানতে হবে। কাল আমরা একটু লাইব্রেরিতে যাবো । যদি রাজা দেব সম্পর্কে কোন ধারণা পাই?

পরদিন সকালে……

লাইব্রেরির উদ্দেশ্যে বের হয় সাজ্জাদ আর মুকুল। মুকুল গিয়ে একটি বই খুলে দেখতে পারে। লাইব্রেরিয়ান লক্ষ করে তাদের। সে তাদের বলে আপনারা কী রাজা দেব সম্পর্কে জানতে চান? মুকুল মাথা নাড়ে। তিনি বলেন এ বইতে ততো বেশি তথ্য পাবেন না। আমি আপনাকে সব বলতে পারবো৷ তারপর তিনি বলা শুরু করেন,

রাজা দেব ছিলো এই চট্রগ্রাম এর এদিকের এক রাজা। সে তার জীবনে অনেক ভাল কাজ করেছিল। বিশেষ করে সে তার ধর্মের উপাসনালয় (মন্দির) তৈরি করেছিল প্রায় ২০ টির মতোন। লোকে মুখে এখনো শোনা যায় যে তিনি নাকি তার সব সম্পত্তি ওই ২০ মন্দির এর ভিতর লুকিয়ে রেখেছেন। আর তার আত্মা নাকি এখনো সেই মন্দিরগুলোতে পাহারা দেয়। একবার এক লোক সেই সোনা নেয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে যায় । কিছুদিন পর তার মৃতদেহ সেখান থেকে পাওয়া যায়।

মুকুল আর সাজ্জাদ খুব মনযোগ দিয়ে তার কথা শুনছিল। কথা শেষ করে তারা কাছ থেকে সেই ২০ টি মন্দির এর ঠিকানা নেয়। যার মধ্যে থেকে মাত্র ৫ মন্দিরই তারা খুঁজে পায়। সেই ৫ টা মন্দির সম্পর্কেই তারা একই কথা শুনতে পারে। ততোক্ষনে রাত হয়ে যায়৷ তারা হোটেলে ফিরে আসে৷ রাতে মুকুল সাজ্জাদকে বলে, সাজ্জাদ ভাই আজকে আমরা যেগুলা দেখলাম তা থেকে কী কিছু বুঝতে পারলেন? সাজ্জাদ ভাই না বললে, মুকুল বলে , আমরা যে কয়টি মন্দিরে গিয়েছি এখন অব্দি (৬ টি মন্দিরে) সব মন্দির এরই পুরোহিতদেরকে কেমন জানি সন্দেহজনক লেগেছে। সাজ্জাদ সাহেব শুধু মাথা নাড়ান। এখন আমাদের আজ গভীর রাতে যেতে হবে আমাদের একটি মন্দিরে। একটার রহস্য বের হলেই, বাকি কয়টা এমনিতেই বের হয়ে যাবে।

গভীর রাতে…….

সাজ্জাদ আর মুকুল সেই মন্দির এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। তারা সেখানে পৌছে চুপিচুপি মন্দিরের চারিপাশ ভাল মতো দেখে নিলো৷ তাদের ধারণা এত রাতে মসজিদে কেউ নেই। তবুও তারা পিছনের জানালা দিয়ে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে ভিতরে।

চারদিক নিস্তব্ধ, অন্ধকার। এর মধ্যে তারা এগিয়ে চলল তারা। মুকুল একটি ম্যাপ নিয়ে এসেছিল মন্দিরের। তারা জানতে পারে সেই লাইব্রেরিয়ানের কাছ থেকে যে, মূল পুজার স্থানেই রয়েছে সেই গুপ্তধন৷ তারা কিন্তু মোটেও ওই গুপ্তধন তারা ভক্ষণ করার জন্যে যায় নি! কয়জন মানুষ গুজব ছড়ায়৷ তাদের পর্দা ফাস করতেই তারা সেখানে গিয়েছিল

তারা তারপর সেখানে গিয়ে দেখতে পারে কিছু মানুষ কথা বলছে৷ মুকুল তাদের কথা টেপ রেকর্ডার দিয়ে রেকর্ড করে। যে লোকগুলি কথা বলছিল তাদের মধ্যে একজন সে পুরোহিত ছিল। তারা পরিকল্পনা করছিলি কীভাবে তারা এই সম্পদ নিয়ে কাল রাতে এখান থেকে চলে যাবে। সেই কথা রেকর্ড করে খুব চুপি চুপি সাজ্জাদ ভাই আর মুকুল চলে গেলো। তারপর তারা পরদিন সেই রেকর্ডগুলি পুলিশিকে শোনালো। পুলিশ তাদের সাথে সেখানে রাতে আবার গিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করতে রাজি হয়।

রাতের বেলা….

মুকুল আর সাজ্জাদ পুলিশকে প্রথমে গিয়ে ওদের সামনে আনে না! তাহলে তারা পালিয়ে যাবে। প্রথমে তারা পুলিশকে মন্দিরের ৪ পাশে খুব সুক্ষ্মভাবে লুকিয়ে রাখে। তারপর তারা সাধারণ মানুষ এর মতো তাদের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়। এমন সময় তারা মুকুল ও সাজ্জাদকে ধরে ফেললে পুলিশ এসে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করে। এভাবেই চমৎকার একটি অভিজান শেষ করলো মুকুল আর সাজ্জাদ! তারা এই কাজের জন্যে সে বছর সেরা সাংবাদিক এর পুরস্কার পায়।

 

লেখক,
মাহীর ফয়সাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *