জীবনীসাহিত্য

মাওলানা তারিক জামিল জীবনী | Biography of Maulana Tariq Jamil

মাওলানা তারিক জামিল (Maulana Tariq Jamil) এর জন্ম ১৯৫৩ সালের ১ আক্টোবর পাকিস্তান অধ্যুষিত পাঞ্জাবের খানেওয়াল প্রদেশের তুলাম্বা এলাকায়। বংশগত ভাবে তিনি চৌহান রাজপুত। তাঁর বাবা ছিলেন এলাকার জমিদার আলাবাক্স খান। বাবার খুব ইচ্ছে ছিল তিনি ছেলেকে ডাক্তার বানাবেন, গভার্মেন্ট কলেজ লাহোর থেকে প্রি-মেডিকেল শেষ করে মেধা গুনে ভর্তি হয়ে গেলেন কিং এডওয়ার্ড মেডিকেলে কলেজে । মেডিকেল এর প্রথম বছর ভালই মজায় কাটছিল সব স্টুডেন্টদের যেমন কাটে । লেখা পড়ার পাশাপাশি গান , সিনেমা , আড্ডা সবই চলছিল। তো তাঁর একজন খুব কাছের বন্ধু ছিলেন যিনি এক বানাগালি ছেলের সাথে মিশে তাবলীগে মন দিয়েছেন।

 

তো তাঁর সে বন্ধু তাঁকে বললেন জামিল (Maulana Tariq Jamil) আজকে বিকেলে রেডি হয়ে থেকো আমরা এক জায়গায় যাবো ।তো তিনি ভাবলেন হয়তো নতুন কোন সিনেমা মুক্তি পেয়েছে সেটার শো তে যাবে। তিনি পরিপাটি হয়ে রেডি হয়ে রইলেন। এবং সময় মতো বন্ধুর সাথে বের হয়ে গেলেন। তো যখন দেখলেন বন্ধু আসলে সিনেমা হলের দিকে যাচ্ছেন না তখন জিজ্ঞাসা করলেন আসলে আমরা যাচ্ছি কোথায় ?? তখন সে বন্ধু বললেন তাবলীগে অমুক মসজিদে। প্রথমে অবাক হয়ে যেতে গড়িমসি করলেও গভীর বন্ধুত্ব আর বন্ধুর নাছোড়বান্দা স্বভাবের জন্য চলে গেলেন, ভাবলেন থাক ৩ দিনের ব্যাপার কি আর হবে দেখে আসি! কিন্তু এখান থেকেই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায় । এরপর চলে যান ৪০ দিনের চিল্ললার জন্য।

বাসায় ফিরে এসে বাবাকে জানান যে, বাবা আমি ডাক্তার হতে চাইনা, আমি আলেম হতে চাই। বাবা শুনেই খুব রেগে গেলেন!! বললেন আমি চেয়েছি তুমি ডাক্তার হবে , ডাক্তারিতে যেমন সম্মান তেমন টাকা!! আর তুমি মোল্লা হতে চাও?? বলা বাহুল্য তখন সে সমাজে ইমাম মুয়াজ্জিন মৌলভিদের তেমন সম্মান ছিলনা। ছোট পেশা হিসেবে দেখা হতো। তাই তাঁর বাবা ব্যপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না যে জমিদারের ছেলে হবে মোল্লা আর তাঁর খাবারের ব্যবস্থা হবে বাড়ী বাড়ী ঘুরে। বাবা বললেন তোর যদি মোল্লাই হওয়ারই ইচ্ছা থাকে আমার বাড়ী থেকে বেরিয়ে যা তারপর হ। বাড়ী থেকে বের করে দিলেন। তাঁর মা তাঁকে মায়ের জমানো টাকার কয়েক হাজার টাকা দিয়ে বললেন যে, নে বাবা , আপাতত এই কয়টা টাকা আর দোয়াই দিতে পারি, অনেক বড় হও”

READ MORE:  আব্দুল হাই মােহাম্মাদ সাইফুল্লাহ জীবনী | Biography of Abdul Hai Muhammad Saifullah

চলে আসলেন লাহোরের কাছের ইসলামিক শিক্ষাকেন্দ্র জামিয়া আরাবিয়া রেইমান্ড । পাকিস্তানের নামকরা ইসলামিক শিক্ষাকেন্দ্রে কোরান ,হাদীস, শরীয়াত, ফিকাহ ,তাসাউফের শিক্ষা গ্রহন করে কাটিয়ে দিলেন ১৪ বছর । এর মাঝে বাড়ী থেকে বাবাও মেনে নিলেন কয়েক বছরের মাঝে।

তাবলীগের সাথে জরিত থেকে দেশে বিদেশে ইসলামের বাণী পৌছে দিচ্ছেন। তিনি দেশে-বিদেশে ইসলামিক  মাহফিল বা বয়ান করার জন্য কোন সম্মানী নেন না। তিন বলেন এর প্রতিদান আমি আল্লাহর থেকে নিবো,আখিরাতে নিবো। কিন্তু আল্লহ তাঁর বান্দাকে দুনিয়াতেই প্রতিদান দেয়া শুরু করেছেন। তাঁর দরদ ভরা কন্ঠ লাখো লাখো মানুষের হেদায়েতের উসিলা হিসেবে কাজ করছে । পাকিস্তানের মিডিয়া অংগনের আন্তর্জাতিক সুপারস্টার জুনায়েদ জামশেদ। পাকিস্তানের মডেল এবং বলিউড অভিনেত্রী ভিনা মালিক তাঁর মাধ্যমে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন। পাকিস্তানি খ্রিষ্টান ক্রিকেটার ইউসুফি ইউহানা তাঁর সংস্পর্শে এসে ইসলামকে ভালবেসে মুহাম্মদ ইউসুফ হন, সাইদ আনোয়ার , ইঞ্জামাম উল হাক , শাহীদ আফ্রিদি সহ অসংখ্য তারকা ব্যক্তিত্ব তাঁর থেকে ইসলামি দীক্ষা গ্রহন করেন ।

তাবলীগের দাওয়াত পৌছাতে কোথায় যাননি তিনি ? বলিউডে আমির খানের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব হয়ে যায় এই ইসলামের বাণী প্রচারের করতে গিয়ে। ইউরোপ আমেরিকা , আফ্রিকা সব দেশে দেশে মুসলমানদের দ্বরে দ্বরে ঘুরে বেরিয়েছন আল্লাহ্‌র নবীর সাঃ ভালবাসার বানী আল্লাহর ক্ষমার বাণী মুসলামানদের কাছে পৌছে দিয়েছেন। ছুটে গেছেন প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে পতিতালয় পর্যন্ত। মাওলানা সাহেবের শহর পাঞ্জাবে এক বিখ্যাত পতিতালয় ছিল। একদিন মাওলানা সাহেব ভাবলেন যদি হাশরের দিন আমার এই কণ্যারা আমার কাছে জবাবদিহি চায় যে ।“মাওলানা তুমি ইসলাম প্রচার করতে বিদেশে গেছো,আমি তো তোমার বাড়ীর কাছে ছিলামা,আমার কাছে কেন গেলানা” মওলানা সাহেব ইসলামের দাওয়াত নিয়ে চলে আসলেন পতিতালয়ে এসে বললেন

 “আমার মেয়েরা আমি আপনাদের ইসলামের সম্মানের চাদরে আবৃত করে দিতে এসেছি”

কিছু মেয়েরা সেদিনই তওবা করে ফিরে আসে, অনেকে এ কাজ ছেড়ে দিতে চাওয়ায় তাদের পরিবারের থেকে মার-জুলুমের স্বিকার হয়। এদের অনেকের বিয়ে ও হ্বজের ব্যবস্থা করে দেন মাওলানা তারিক জামীল।

READ MORE:  আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান জীবনী | Biography of Abu Taha Muhammad Adnan

মাদ্রাসা পরিচালনাঃ মাওলানা তারেক জামিল ইসলামে দাওয়তের তাবলিগের পাশাপাশি পাকিস্তানে তাঁর একাধিক মাদ্রাসায় শিক্ষাদান করেন। একাজে তাঁর ছেলে মাওলানা ইউসুফ জামিল তাঁকে সহায়তা করেন।

এ মাদ্রাসার অধীনে হাজার হাজার মুসলামান দ্বীন এলেম শিক্ষা করেন।

তারিক জামীল (Maulana Tariq Jamil) কন্ট্রোভার্সিঃ

২০২০ সালে এসে মাওলানা তারিক জামিল (Maulana Tariq Jamil) সবন্ধে পাকিস্তানি মানবাধিকার কর্মী এবং মিডিয়ার কিছু অংশের মাধ্যমে একটি কন্ট্রোভার্সি ছড়ানো হয় যে মাওলানা তারেক জামিল নারীদের দোষারোপ করেছেন করো না ভাই রাস ছড়ানোর জন্য। যা একটি অর্ধসত্য বিষয়ের উপর রং মেখে তৈরি করা হয়েছে।

মূল ঘটনা ছিল, “ করনা ছাড়ানোর পর পাকিস্তান সরকার এক মোনাজাত এর আয়োজন করে যা টিভি রেডিওতে একযোগে প্রচারিত হচ্ছিল। আমরা জানি কোন মোনাজাত করতে নিলে আল্লাহ্‌ আমাদের যে যে কাজে অসন্তুষ্ট হতে পারেন তা উল্লেখ করে সে কাজ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া সবচেয়ে উত্তম উপায়। তখন সে মোনাজাতে মাওলানা বলেছিলেন  “আল্লাহ্‌ আমাদের সমাজে আমারা দুর্নীতিতে জরিয়ে গেছি , মিথ্যা ,সুদ , ঘুষ কে প্রতিদিনের সঙ্গী করে ফেলেছি তাই হয়তো তুমি আমাদের উপর নারাজ। আমাদের স্ত্রী কন্যারা হয়তো বেহায়া চলাফের করছে তাই হয়তো তুমি রাগ করেছো আল্লাহ্‌। তাইতো এই গজব দিয়েছো। আল্লাহ্‌ আমরা ক্ষমা চাই আমাদের মাফ করে দাও “ ১৫ মিনিট উর্ধো সে মনাজাতের ৫ সেকেন্ডের একটি কথা মাওলানাকে নারীবিদ্বেষী ট্যাগ দেয়া হয়।

শিয়া পন্থীঃ মাওলানা তারিক জামিল এর ব্যাপারে আরেকটি মহলের অভিযোগ তিনি নাকি শিয়া আকিদার প্রতি বিশ্বাসী। কিন্তু তিনি সুন্নত ওয়াল জামাত এর অনুসারী দেওবান্দের সুন্নী আকিদার প্রচারক। কিন্তু আহলে বাইয়াত (নবী সাঃ পরিবার হযরত মা ফাতিমা, মাওলা আলী, ইমামা হাসান হুসাইন) কে অনেক ভালবাসেন এবং তাঁর বিভিন্ন বয়ানে বেশি হাইলাইট  করেন বলে কিছু কিছু পন্থার আলেম তাঁকে এই শিয়া পন্থী ট্যাগ দিয়েছিন।

READ MORE:  শৈশব, কোথায় হারালো?

ওয়াহাবী পন্থীঃ তাবলীগে জীবন ব্যায় করা এবং শরীয়া ও সুন্নাতে মানুষকে উদ্দবুদ্ধ করা এবং ইসলামের নামে অযাচিত কিছুকে সাপ্পোর্ট করেন না বলে তিনি ওয়াহাবী পন্থী বলেও ট্যাগ খেয়েছেন।

কিন্তু এত সব কিছুর পরেও মাওলানা তারেক জামিল আল্লহর ক্ষমা এবং নবী (সাঃ) এর ভালবাসার পয়গামের ফেরিওয়ালা হয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন। কোন পন্থা, কোন মাজহাব সবাই তাঁর কাছে আল্লাহর বান্দা, মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উম্মাত । বন্ধু শত্রু নির্বিষেশে তিনি সবাইকে আল্লাহ্‌র জন্য ভালবাসেন। আল্লাহ্‌ তাঁকে নেক হায়াত দান করুক এবং সম্মানের সাথে আমৃত্যু কাজ করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *