মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ির ইতিহাস পর্ব – ৬
জিতেন্দ্র কিশাের আচার্য চৌধুরী
১৮৮৪ সালে জিতেন্দ্র কিশােরের জন্য। ১৮৯৯ সালে নাটোরের আমহাটি গ্রামের সারদাপ্রসাদ রায় কন্যা। জ্যোতির্ময়ী দেবীর সাথে তার বিয়ে হয়। ১৯০৩ সালে জিতেন্দ্র কিশাের এর পুত্র জীবেন্দ্র কিশাের জন্মগ্রহণ করার সময় জ্যোতির্ময়ী দেবী মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের যে কয়জন রাজা বা জমিদার তৎকালীন ভারতের সঙ্গীত চর্চায় আবদ্ধ ছিলেন, তাদের মধ্যে জমিদার জিতেন্দ্র কিশাের আচার্য চৌধুরী অন্যতম। অনেক খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী মুক্তাগাছার রাজপরিবারে বেতনভােগী কর্মরত ছিলেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গীত সাধক কোন অতিথি হিসেবে সংগীত পরিবেশনা করতে মুক্তাগাছায় আসতেন। তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযােগ্য নগেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য, শ্যামবাবু প্রমুখ।
Raja J People here practice Rabindra Sangeet, Nazrul Sangeet, Kirtan, Lalon Geeti etc. In addition, various cultural activities are held around the year. The artist association of Muktagacha is Aymon Tirer Shillpy Somaj’ according to the name of Aymon River. (Wiki)
জিতেন্দ্র কিশােরের বয়স যখন মাত্র নয় তখন থেকেই তিনি গান গাইতে পারতেন। তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। বিভিন্ন জায়গায় তিনি গান গেয়েছেন এবং সঙ্গীতের প্রতি তার ছিলাে অগাধ ভালােবাসা। তৎকালীন সঙ্গীতজগতে তিনি ছিলেন বাংলার এক খ্যাতিমান পুরুষ। সংগীত সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ, হাফিজ আলি খান, দিদার খান মুক্তাগাছায় আসতেন। মুক্তাগাছার সংস্কৃতি চর্চা দলকে আয়মান তীরের শিল্পী সমাজ” বলা হতাে কেননা মুক্তাগাছা আয়মান নদীর তীরে ছিল। এলাহাবাদ কলকাতা সহ বিভিন্ন জায়গায় এই দল গান গেয়েছে। এদলের অন্যতম প্রানপুরুষ ছিলেন জিতেন্দ্র কিশাের আচার্য। ভােজনবিলাসী হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেছে, প্রচুর খেতে পারতেন। মাত্র চল্লিশের ৪০ বছর বয়সে বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রােগে আক্রান্ত হন। ১৯৪১ সালে নেফ্রাইটিস এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
জীবেন্দ্রকিশাের আচার্য চৌধুরী
১৯০৩ সালে জীবেন্দ্র কিশােনাের জন্ম হয়। তিনি প্রথমে মুক্তাগাছার আর কে স্কুলে এবং পরবর্তীতে কলকাতার মিত্র ইন্সটিটিউশন ভর্তি হন। জীবেন্দ্র কিশােরদের জীবনযাত্রা কেমন ছিল তা তার আত্মজীবনী “আমি”- এর প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড থেকে শােনা যাক:
“আমাদের বাড়িতে বসবাস শুরু হবার সময় মুক্তাগাছার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ভালাে ছিলাে না এবং জমিদারী কর্মচারীদের মধ্যে সম্পর্ক বেশি ভালাে ছিল না। পিতার বিরােধিতার পর মদ্যপান কিছুটা কমে আসে। জমিদারি সাধারণ কর্মচারী তাে বটেই এমনকি অন্যান্য অধীনস্থ লোকেরাও রীতিমতাে মদ্যপান করে। মোটকথা সমাজে বাধা সমুখীন হইতাে না, মদের অবাধ প্রচলন ছিল। বাবা এই বিষয়ে খুবই সচেতন ছিলেন শেষে আমরাও যদি অভ্যস্ত হইয়া পড়ি সেজন্য তিনি সর্বদা আমাদের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন।*
জীৰেন্দ্র কিশাের সাহিত্য চর্চা করতেন। তাদের বাড়িতে অর্থাৎ এখন যা মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত সেখানে একটি লাইব্রেরি ছিলাে। এ লাইব্রেরীর সংগ্রহ ছিলাে ঈর্ষা করার মত। পরবর্তীতে এটি পূর্ব পাকিস্তানের একটি উল্লেখযােগ্য লাইব্রেরি হিসেবে স্বীকৃত হয়। জীবেন্দ্র কিশাের আচার্য চৌধুরী রচিত গ্রন্থটি কলকাতার পাইওনিয়ার পাবলিকেশন থেকে ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ সালে জীবেন্দ্র কিশাের বাবু বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডে তিনি বলেছেন: “নেতাজি ময়মনসিংহে ৪ দিন অবস্থান করে। তিনি মুক্তাগাছা নেত্রকোনা ময়মনসিংহ পৌরসভায় আলেকজান্ডার ক্যাসেলে অবস্থান করে মিছিলে অংশগ্রহণ সহ ইত্যাদি অনেক কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।”
প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি সঠিক নয়। প্রকৃত ঘটনা হলাে, নেতাজি ময়মনসিংহ রেলযােগে এসে স্টেশনে গাড়ি দাঁড়ানাে। | অবস্থায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেশপ্রেম মূলক বক্তব্য রেখে ওই ট্রেনে করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা | দেন। এ পর্যন্ত নেতাজি সম্পর্কিত অনেক গবেষণামূলক গ্রন্থ লেখা হয়েছে যেখানে জীৰেন্দ্র বাবুর দেয়া তথ্য | কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জীৰেন্দ্ৰ বাৰু জমিদারির দায়িত্ব বুঝে বুঝে নেন। এ সময় তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পান
আর কে স্কুলের সেক্রেটারি এবং পৌর পিতার পদ। | জীৰেন্দ্ৰ নাৰু ১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ অর্থাৎ ভারত-পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার সময়, কলকাতায় অবস্থান করছিলেন।
দেশভাগ হবার কারণে জীবেন্দ্র বাবুর মন খারাপ ছিল। মনকে প্রফুল্ল করার জন্য নামকরা সমস্ত ধর্মীয় স্থান চষে | বেরিয়েছিলেন একটু শান্তির জন্য। কিছুদিন পর মাতৃভূমে ফিরে এসে দেখলেন জমিদারী বিলােপের ফনামান। | সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করলেন এবং মামলায় হারলেন। অবশেষে ১৯৫৭ সালে মূল্যবান রিলিক্স | অৰ্থা যতটুকু বহনযােগ্য নিয়ে সাত পুরুষের ভিটা মাটির মায়া ত্যাগ করে কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন..!
পরবর্তী পর্বে মুক্তাগাছা রাজপরিবারের বর্তমান অবস্থা এবং ১৯৪৭ সালের পরবর্তী অবস্থা নিয়ে আলােচনা করা হবে