ভালোবাসার গল্প – ভালোবাসা বয়স মানে না
ভালোবাসার গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন ভালোবাসা বয়স মানে না। চলুন পড়ে ফেলি আজকের গল্প
ভালোবাসার গল্প
“তুমি আমার থেকে গুনে গুনে ১৯ বছরের ছোট।আর তুমি নাকি এসেছো আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে।ব্যাপারটা খুব হাস্যকর হয়ে যায়না? ” রাফি সাহেব রুহামাকে বললেন।
“দেখুন আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি।তাছাড়া আমি আপনাকে ভালোবাসি।আর আমি জানি আপনিও আমাকে ভালোনাসেন।এখানে বয়সের ব্যাবধান দিয়ে কি হবে?”
রাফি সাহেবের রাগে এবার হাত পা কাঁপছে।এইটুকানি একটা মেয়ে তাকে তাকে নাকি আবার প্রপোসাল দেয়। – অসমত
“ঠাটিয়ে থাপ্রিয়ে তোমার ভালোবাসা আমি বের করবো।সবে তো ২০ বছর হয়েছে বেশি বার বেরো না বলে দিলাম।”
“আপনি আমাকে মারুন কাটুন জাই করুন না কেনো আমি আপনাকে ভালোবাসি।আর সারাটা জীবন আপনার সাথেই থাকতে চাই।”
“তুমি যদি এখন আমার অফিস থেকে বের না হয়েছো আমি বাধ্য হবো তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করতে।” একটু ধমক দিয়েই কথাটা বললেন রাফি সাহেব।
রুহামা আর এক মিনিট ও সেখানে দাড়ালো না।দ্রুত সেখান থেকে বেড়িয়ে এলো।
রাফি,রুহামার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।তার ভাবতেই অবাক লাগে এইটুক একটা মেয়ের এতো বড় সাহস হয় কিভাবে। নেহাৎ সে তার ফ্রেন্ডের ভাগ্নি।তা না হলে এই মেয়েকে মেরে সিধে বানিয়ে দিতো।
রুহামা কাঁদতে কাঁদতে রাস্তা দিয়ে হাটছে।ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে তার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড তমাল কে ফোন দিয়ে পার্কে আসতে বললো।
রুহামা পার্কে বসেও কাঁদছে।পাশে তমাল বসা।তমার আরহার মাথায় হাত দিয়ে বললো,”দোস্ত একটু তো কান্না থামা।”
রুহামার কান্নার বেগ এখন আরো বেড়ে গেলো।সে কাঁদতে কাঁদতে বললো,”আবার রাফি সাহেব আমাকে প্রত্যাক্ষাণ করেছে।তুই বল আমি তার কাছে আর কত ভিক্ষে চাবো? আর তাছাড়া তাকে দেখলে কি বুঝা যায় তার বয়স এতো।এখনো কত ইয়াং।আর ভালোবাসায় কি বয়স কোনো ফ্যাক্ট তুই বল।”
এবার রুহামা তমাল কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। তমাল কোনো রকম সান্তনা দিয়ে রুহামাকে বাড়ি পৌঁছে দিলো।
রুহামা বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে রুমে ঘাপটি মেরে বসে রইলো।তার মধ্যে এক ধরনের জিদ চেপে গিয়েছে যে করেই হোক তার রাফিকে চাই ই চাই।আর এটার জন্য সে সব কিছু করতে রাজি।
রাফি বাসায় এসে দেখলো তার বন্ধু শফিক মানে রুহামার মামা বসে আছে। রাফি টাই খুলতে খুলতে বললো,”কিরে কখন এলি? আর বললিও না যে।”
“রুহামার ব্যাপারটা নিয়ে কিছু ভেবেছিস?”
রুহামার কথা শুনে রাফি সোফায় বসতে বসতে বললো,”এটা নিয়ে ভাবার আমি কিছু দেখছিনা।ওর বয়স এখন খুব কম।হয়তোবা আমার কোনো কিছু ওকে মুগ্ধ করেছে।ধীরে ধীরে এই মুগ্ধতা কেটে যাবে।তখন নিজেই বুঝবে।
“আর যদি না কাটে?”
“তা হলে এটা ওর সমস্যা। দেখ তুই খুব ভালো করে জানিস আমার মনে রুহামার জন্য এমন কিছু নেই।আমার স্ত্রী মারার যাওয়ার পর থেকে আমি আমার জীবনে নতুন কোনো নারী চাইনা। তাছাড়া কদিন পর আমি দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছি।”
শফিক আর কিছু বললো না।
“আজ তাহলে আসি!”
“তোর ইচ্ছে।”- অসমত
শফিক বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো।তার নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে।কেননা তারা জন্যই তো রুহামার সাথে রাফির পরিচয় হয়েছে।আজ যদি তার আদরের ভাগ্নিটা কিছু করে ফেলে তাহলে। সব মিলিয়ে ভয় হয় তার। সে ঠিক করলো যে করেই হোক তাকে রুহামার সাথে কথা বলতেই হবে।
রুহামা বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে।কেনো রাফি তাকে ভালোবাসে না।সে কি একটুও তার মনের কথা বুঝেনা। এইসব ভাবতে ভাবতে কাঁধে কারো স্পর্শ পেলো।পিছে তাকিয়ে দেখলো তার মামা।
“কেমন আছিস?”
“যেমনটা দেখছো.।”
“তোর কি মনে হয় না তুই এখন পাগলামি করে ফেলছিস?”
“অবশ্যই না।আমি জানি আমার মাঝে কি চলছে।তোমরা বুঝতে চাচ্ছো না কেনো?”
“দেখ তোর কি মনে হয় এটা তোর বাসায় মেনে নিবে? আপু দুলাভাই জানলে কত বড় ক্যালেংকারি হয়ে যাবে তোর মাথায় আছে?”
“সবার কথা ভাবার জন্যে তো আমি বসে নেই তাইনা।আমাকে একটু নিজের কথা ভাবতে দাও।” শফিক আর কথা বাড়ালো না।কেনোনা সে জানে তার ভাগ্নি কতটা একরোখা।- অসমত
ঐদিনের পর থেকে শফিক আর রুহামাদের বাসায় যায়নি।এইদিকে রুহামা প্রায় প্রতিদিনই রাফির অফিসে যেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে।কিন্তু কোনো লাভ হয়না।রাফির দেখা মিলে না।এভাবেই কেটে যায় প্রায় একটা মাস।এখন রুহামার বাসায়ও সবাই সবটা জেনে গিয়েছে।তারা এখন চাচ্ছে যে করেই হোক রুহামাকে এখান থেকে বের করতে।আর এই জন্য তারা ছেলে দেখছে।কিন্তু রুহামা রাফি ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না।
ঘড়িতে তখন রাত ৮ টা বাজে।বাহিরে প্রচন্ড রকমের বৃষ্টি হচ্ছে।এরকম বৃষ্টি খুব কম ই হয়।রাফি যেহেতু বাসায় একাই থাকে তাই নিজেই যেয়ে কফি বানিয়ে নিয়ে এসে হল রুমে বসেছে। বৃষ্টির বদৌলতে কারেন্টও নেই।রাফি বেশ কয়েকটা মোম জ্বালিয়েছে।কেনোনা আইপিএস ও কাজ করছে না।হঠাৎ কলিং বেইল বেজে উঠলো রাফি বুঝতে পারছে না যে এই সময় কে আসতে পারে।সে কফির মগটা রেখে দরজাটা খুললো।খুলেও চমকে গেলো। কেনোনা রুহামা দাড়িয়ে আছে।পুরো ভিজে অবস্থা খারাপ।জামা কাপড় শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।চোখের কাজলটাও লেপ্টে গিয়েছে। আবছা আলোয় রুহামাকে অসম্ভব সুন্দর আর আবেদময়ী লাগছে। রুহামা খুব স্বাভাবিক ভাবেই রাফিকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকলো। রাফি দরজা বন্ধ না করেই রুহামার দিকে তাকিয়ে রইলো।
“কি হলো দরজাটা বন্ধ করো।” এই প্রথম সে রাফিকে তুমি করে বলেছে।রাফির বুকে কেমন যেনো ধক করে উঠলো।সে দরজা বন্ধ করে পিছনে ফিরতেই রুহামা এমন কান্ড ঘটিয়ে বসলো যে তার হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে।
রুহামা রাফিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।শরীরের সব শক্তিই হয়তোবা প্রয়োগ করেছে।রাফি হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে। সে ঠিক কিভাবে রিয়াক্ট করবে বুঝে উঠতে পারছে না। অনেক চেষ্টা করেও রাফি রুহামাকে সরাতে পারছেনা।রাফি ভেবে পাচ্ছে না হুট করে এই মেয়ের মাঝে এতোটা শক্তি কই থেকে উদয় হলো।দেখলে তো মনে হয় ফু দিলেই উড়ে যাবে।
কিছুক্ষণপর রুহামা নিজ থেকেই রাফিকে ছেড়ে দিলো।রুহামা ছেড়ে দিতেই রাফি যেনো হাফ ছেড়ে বাচঁলো।সে কিচেনে গিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে আবার রুহামার কাছে ফিরে এলো।মোমবাতিটি টেবিলের উপর রাখলো।মোমের আলোয় দুজন দুজনকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।মেয়েটি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাফির দিকে।রাফি রুহামার দিকে তাকাতেই কেমন যেনো ঘোর কাজ করতে লাগলো তার।রুহামার এই দৃষ্টি যেনো অনেক কিছু আবদার করছে তার কাছে।এই দৃষ্টিতে রয়েছে ভালোবাসা পাওয়ার আকুলতা।
রাফি দুহাত রুহামার গালে রেখে মুখটা একটু উঁচু করলো।সে যে ঘোরের মাঝে কি করছে সে নিজেও জানেনা। এই প্রথম রাফির ছোয়া পেয়ে রুহামার মাঝে এক অন্যরকম শীহরণ কাজ করছে।তার মনে হচ্ছে সময় টা যেনো এখানেই থেমে যায়। সে এক দৃষ্টিতে রাফির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।তার মনে হচ্ছে।রাফিও তাকে ভালোবাসে।
রাফি আর রুহামার মাঝে পার্থক্য মাত্র দু ইঞ্চির।দুজিনের ঠোঁট কাঁপছে।রুহামা চোখটা বন্ধ করে ফেললো।হঠাৎই রাফির মনে হলো সে খুব বড় ভুল করতে চলেছে।সাথে সাথে ধাক্কা দিয়ে রুহামাকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিলো।আচমকা এমন হওয়ায় রুহামা সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে যায়।
রাফি চোখ বন্ধ করে হাতের মুঠো শক্ত করে জোড়ে জোড়ে দুবার শ্বাস নিলো।রুহামা রাফির দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে যে রাফির মনে চলছে টা কি।রাফি হুট করেই রুহামার হাত ধরে উঠিয়ে এক প্রকার টেনেই তাকে বাসা থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দিলো।
রুহামা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বৃষ্টির মধ্যেই দাড়িয়ে রইলো।রাফি, শফিককে কল দিলো কিন্তু এতে কোনো লাভ হলো না।শফিক ঢাকার বাহিরে। এই মূহুর্তে তার পক্ষে রুহামাকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। রাফি বুদ্ধি করে শফিকের কাছ থেকে তমালের নম্বর নিয়ে তাকে ফোন দিলো,যেনো সে এসে রুহামাকে নিয়ে যায়। কেনোনা রুহামা এখন স্বাভাবিক অবিস্থায় নেই।যে কোনো কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে। রাফি জানালা দিয়ে রুহামাকে দেখছে।সে এখনো তার বাসার দরজার সামনেই দাড়িয়ে আছে।তার রুহামার জন্য প্রচন্ড মায়া লাগলেও সে নিরুপায়।
কিছুক্ষণ পর ই দেখলো তমাল বাইক নিয়ে এসেছে।তমালকে দেখে সে জানালাটা পর্দা দিয়ে ঢেকে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
তমাল রুহামার পাশে দাড়িয়ে আছে।রুহামা এখনো দরজা ধাক্কাছে। এবার সে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।তমাল কোনো রকমে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না।এর উপর বৃষ্টির বেগ যেনো আরো বেড়ে গেলো।আজ আকাশ ও যেনো রুহামার সাথে তাল মিলিয়ে কাঁদছে।একটা সময় রুহামা অজ্ঞান হয়ে পরলো।এই অবস্থায় তমাল কোনো ভাবেই নিজের বাইক দিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে যেতে পারবে না। সে কোনো উপায় না পেয়ে রাফিকে কল দিলো যেনো সে তার গাড়িটা দেয়।
রুমা জ্ঞান হাড়িয়েছে শুনে রাফি একপ্রকার ধরফরিয়ে দরজা খুলে তার গাড়ির চাবিটা তমাল কে দিয়ে বললো,
“তুমি প্লিজ ওকে এখান থেকে নিয়ে যাও যত দ্রুত সম্ভব।আর একটা কথা মনে রাখবে ও যাতে কোনোদিন এখানে না আসে।” বলেই মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো।
তমাল মনে মনে বললো,”যাক বাবা। এ কেমন অদ্ভুত লোক।আর এই রুহামাই কেমন পাগল।দুনিয়াতে এতো ছেলে থাকতেও এই বুড়ো বেটার প্রেমে পরলো।”
এইসব ভাবতে ভাবতেই সে রুহামাকে গাড়িতে উঠালো।তাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আবার রাফির বাসায় এসে তার গাড়ি তাকে ফেরত দিয়ে নিজের বাইক নিয়ে বাসায় চলে গেলো।
ঐদিন রাতেই রুহামার হাড় কাঁপানো জ্বর এলো।আর অবস্থা এতোটাই খারাপ হয়ে গেলো যে তাকে হসপিটালে ভর্তি করতে হয়েছে।এই জ্ঞান ফিরে আবার অজ্ঞান হয়ে যায়।যতক্ষন জ্ঞান থাকতো শুধু রাফি রাফি করে প্রলাপ বকে যেতো। এভাবেই কেটে যায় ১০ দিন।রুহামা এখন কিছুটা সুস্থ হলেও একা একা হাটাচলা করতে পারেনা।মাথা ঘুড়ে পরে যায়। কিন্তু এই অবস্থায়ও সে এক মুহুর্তের জন্য ও রাফিকে ভুলতে পারেনি।
আজকের আকাশ টা অন্যদিনের থেকে কিছুটা আলাদা লাগছে রুহামার কাছে। কিন্তু কেনো আলাদা সে নিজেও জানেনা।অন্যদিনের থেকে আজ তার নিজেকে বেশ ফুরফুরে মনে হচ্ছে।আজ তার রাফির সাথে দেখা করতেই হবে।যেই ভাবা সেই কাজ।সে রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পরে। প্রথমে রাফির অফিসে গিয়ে দেখে সে নেই।রাফির কথা জিজ্ঞেস করলেও কেউ কিছু বলেনি তাকে।অফিসের সবাই তাদের ব্যাপারে জানে।কেনোনা রুহামা অফিসে প্রায়ই এসে রাফির জন্য পাগলামি করতো।
রুহামার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।সে এবার রাফির বাসায় গিয়ে দেখলো তালা ঝুলছে।তার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো।সে সাথে সাথে তার মামাকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলো রাফির কথা।তার মামা তাকে কিছুই বললোনা।শুধু বললো রাফি তার জন্য একটা চিঠি পাঠিয়েছে।রুহামা যেনো এসে তা নিয়ে যায়।
রুহামা এক মূহুর্ত দেড়ি না করে তার মামার বাসায় চলে গেলো। শফিক রুহামাকে চিঠিটা দিয়ে বললো,
“এখন খুলবি না।একদম বাসায় গিয়ে দেখবি।”
“আচ্ছা”
কিন্তু শফিক ভরসা পেলো না।সে নিজেই রুহামাকে বাসায় ড্রপ করে দিলো।রুহামার ভেতর টা যেনো কেমন কু গাইছে।তার মনে হচ্ছে সে খুব বড় কিছু হাড়িয়ে ফেলছে।সে বাসায় এসেই দ্রুত রুমে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দিলো।তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠিটা খুললো।
প্রিয় রুহামা,
তুমি কখনো এটা ভেবোনা তুমি আমার কাছে অপ্রিয় কেউ।তুমি আমার খুব ই প্রিয় একজন মানুষ।কিন্তু যেই প্রিয়টা তোমার লাগবে সেটা তো কোনোদিন সম্ভব নয়।তোমার সাথে আমি একজন বন্ধুর মতো মিশেছিলাম।কেনোনা বন্ধুত্বের কোনো বয়স হয়না।ছোট বড় সবাই সবার বন্ধু হতে পারে।এই বন্ধুত্বের থেকে বেশি কিছু কোনোদিনো আমার দ্বারা সম্ভব নয়।
তোমার মনে এখন যা চলছে তা শুধু মাত্রই আবেগ ছাড়া আর কিছুনা।তোমার বয়স মাত্র ২০। আর আমি তোমার থেকে ১৯ বছরের বড়।আমাদের মাঝে যে অসমতাটা আছে আদৌকি তা সমতায় আনা সম্ভব। আর তাছাড়া তুমি এখনো খুব ছোট।হতেই পারে আমার প্রতি তোমার শুধু মুগ্ধতা কাজ করছে।আর এটাকে তুমি ভালোবাসা ভেবে ভুল করছো।কিন্তু সময় যত যাবে তত তুমি বুঝদার হবে।আর একটা সময় এই পাগলামির কথা মনে করে তুমি নিজেই লজ্জা পাবে।তোমার সামনে এখন তোমার পুরো জীবনটা পরে আছে। নিজের জীবনটাকে সুন্দর করে গোছাও।তোমার সাথে যায় এমন কাউকে পছন্দ করে।মনে রাখবে কিছু কিছু অসমতার কোনোদিন সমতা করা যায় না।আর ঐ অসমতাগুলোকে সমতায় আনতে চেষ্টা করাও নেহাৎ বোকামি ছাড়া আর কিছুনা।
আমি কোথায় আছি এটা সময় হলে তুমি জানতে পারবে।খোঁজার চেষ্টা কোনোদিন করবে না।ভাল থেকো।তোমার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা।
ইতি
তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী রাফি।
চিঠিটা পরে রুহামা স্তব্ধ হয়ে গেলো।হঠাৎই সে জোরে জোরে হাসতে লাগলো.।
১৫ বছর পর,
তমাল অফিদ থেকে এসে দেখতে পেলো তার স্ত্রী রুহামা বারান্দায় দাড়িয়ে আছে।এমনকি তাকে বেশ অন্যমনস্ক লাগছে। সে যেয়ে রুহামাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
অন্যমনস্ক থাকায় রুহামা খেয়াল করেনি তমাল কখন এসেছে।
“কি হয়েছে আমার বউটার?”
“কিছুনা।”
“তাহলে এমন অন্যমনস্ক লাগছে।”
“উহু কিছুনা।ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি নাস্তা আনছি।” বলেই রুহামা সেখান থেকে চলে গেলো।তমাল বুঝতে পারলো রুহামা তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবতে লাগলো সেই ১৫ বছর আগের কথা।
চিঠিটা পাওয়ার পর রুহামা এতোটাই ডিপ্রেসড হয়ে যায় যে সে তার মানসিক ভারসাম্য হাড়িয়ে ফেলে।প্রায় দু বছরের মতো সে এমন পাগলামি করে। কখনো রাফি বলে চিৎকার করে কান্না করা।বা কখনো একা একাই কথা বলা।বেশ কয়েকবার তো সুইসাইড এটেম্পট ও করেছিলো।তখন তার পাশে ছায়ার মতো ছিলো তমাল। তমালের আগে থেকেই রুহামার প্রতি ভালোলাগা থাকলেও ধীরে ধীরে তা ভালোবাসায় পরিণত হয়। সে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে রুহামাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার।এবং আল্লাহর অশেস রহমতে সে সফলও হয়ে।কিন্তু সে নিজ থেকে রুহামাকে নিজের মনে কথা বলে না।রুহামা নিজেই বুঝতে পেরে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।হয়তোবা তারও তখন ভালো থাকার জন্য কারো দরকার ছিলো।বা ছিলো রাফির প্রতি প্রচন্ড রকমের ক্ষোভ। দুই ফ্যামিলির সম্মতি তেই তাদের বিয়েটা হয়। এখন তাদের বিবাহিত জীবনের ১৩ বছর চললেও তাদের মাঝে কিছুটা হলেও দূরত্ব আছে।যদিও তাদের ৬ বছরের একটা ছেলেও আছে।কিন্তু তমালের এখনো মনে হয় রুহামার মনের কোথাও না কোথাও রাফির বসবাস আছে।আসলে কারো জায়গা তো কেউ নিতে পারে না।নতুন মানুষটাকে নতুন করেই জায়গা তৈরি করে নিতে হয়।তাই তমালও চেষ্টা করেছে রুহামার মনে নিজের একটা জায়গা তৈরি করার। এবং সে সফলও।তবুও কোথাও না কোথাও তার একটা কিন্তু রয়েই যায়।
ঘড়িতে ১১ টা বেজে ১৫ মিনিট।রুহামা তমালের বুকে শুয়ে আছে।তার আজ নিজেকে বেশ অপরাধী মনে হচ্ছে।সে খুব ভালো করে জানে তমাল তাকে কতটা ভালোবাসে।সে নিজেও তমালকে ভালোবাসে।কিন্তু আজও সে রাফিকে ভুলতে পারেনি।এই ১৫ বছরে সে রাফির জন্য বেশ কয়েকটা চিঠি লিখেছে।কিন্তু কখনো পাঠানো হয়নি।তার শুধু রাফিকে একটা কথাই বলার আছে।তাইতো কদিন আগে অনেক কষ্ট করে হলেও সে তার মামার কাছ থেকে রাফির ঠিকানা জানতে পারে।এবং সে এক মূহুর্ত দেড়ি না করে চিঠিটাও পাঠিয়ে দেয়।
রুহামা মাথাটা একটু উঁচু করে তমালের দিকে তাকায়। তারপর খুব শক্ত করে তমালকে জড়িয়ে ধরে। তমালও পরম আবেশে রুহামাকে জড়িয়ে ধরে।
রাফির টেবিলের উপর একটা খাম পরে আছে।খামের উপর স্পষ্ট রুহামার নাম দেখা যাচ্ছে।সেই ১৫ বছর আগে সে কানাডায় সিফট হওয়ার পর আজ প্রথম তার জন্য কোনো চিঠি এসেছে তাও আবার রুহামার তরফ থেকে। সে চোখে চশমাটা পরে টেবিলের কাছে চেয়ারটা টেনে বসে।তার বয়স এখন ৫৫ ছুই ছুই।মাথার চুলে অনেকটা পাক ধরেছে। চিঠিটা দেখেই তার অদ্ভুত এক শান্তি লাগছে।চিঠিটা খুলেই সে পরতে লাগলো।
প্রিয় রাফি,
আপনাকে চেয়েও আমি অপ্রিয় করতে পারিনি।মনে আছে, আজ থেকে ১৫ বছর আগে আপনি আমার ভালোবাসাকে আবেগ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।কিন্তু আপনি ভুল ছিলেন।আপনি আমার ভালো আসা কখনো বুঝতেও পারেননি আর বুঝতে চেষ্টাও করেননি।আপনি আমার ভালোবাসার যোগ্যই না।আমার নিজের উপর ই খুব রাগ হয় যে আপনি এখনো আমার মনে কোথাও না কোথাও রয়েই গিয়েছেন।জানেন আজও আমি আপনাকে ভুলতে পারিনি।আচ্ছা আপনি কি আজ ও এটাকে আবেগ বলে উপাধি দিবেন?
আর কিছু লিখা নেই চিঠিতে।রাফি চিঠিটা ভাজ করে রেখে দিলো।চোখের চশমাটা খুলে রেখে উঠে দাড়ালো।তার চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পরছে।বিছানায় যেয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই তার চোখে ভেসে উঠলো সেই ২০ বছরের রুহামার মুখটা।
সমাপ্তি।