স্বাস্থ্য

কুকুর কামড়ানোর সাথে সাথেই যা করতে হবে

পথে ঘাটে চলতে ফিরতে কখন যে কী ঘটে যায়, তা কে বলতে পারে! যেমন, কুকুরে কামড়ানো। কুকুরের কামড় অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক এবং মারাত্নক। কুকুরের কামড় থেকে জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে। রেবিস নামক ভাইরাস থেকে জলাতঙ্ক রোগ হয়ে থাকে। এটি একটি স্নায়ুর রোগ। রেবিস ভাইরাস কুকুরের লালা থেকে ক্ষতস্থানে লেগে যায় এবং সেখান থেকে স্নায়ুতে পৌঁছে জলাতঙ্ক রোগে সৃষ্টি কেরে। সময় মতো চিকিত্সা না করানো গেলে জলাতঙ্কের কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে কুকুর কামড়ালে সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কুকুর কামড়ানোর পর সময় মতো এই কাজগুলি করতে পারলে তেমন আর কোনও ঝুঁকি থাকে না। আসুন এ বিষয়ে সবিস্তারে জেনে নেওয়া যাক।

 

প্রাথমিক করণীয়: শুরুতেই আক্রান্ত স্থানে ক্ষত ও রক্তপাতের তীব্রতা খেয়াল করতে হবে। কুকুরে কামড়ালে প্রথমে ক্ষতস্থান চেপে ধরুন, যেন তাড়াতাড়ি রক্তপাত বন্ধ হয়। এরপর টিউবয়েল বা কলের পানি দিয়ে প্রবহমান পানির ধারার নিচে ন্যূনতম দশ মিনিট ধরে ক্ষত পরিষ্কার করুন। সম্ভব হলে কোনো অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করতে পারেন ক্ষতটি ভালোভাবে পরিষ্কারের জন্য। এটি ক্ষতের ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে। যতটা সম্ভব আক্রান্ত স্থানকে উঁচু করে রাখার চেষ্টা করুন।

 

ক্ষত পরিষ্কার হয়ে গেলে দেরি না করে ক্ষতপরবর্তী সংক্রমণের হার কমানোর জন্য নিকটস্থ চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে ক্ষতস্থানে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক অয়েনমেন্টের প্রলেপ প্রয়োগ করে একটি জীবাণুমুক্ত গজ কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ করে ফেলুন। প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পথ্যের পাশাপাশি অবশ্যই প্রতিদিন কামড়ের ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে হবে। ধুলো-বালি ও ময়লা যেন না লাগে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। ক্ষতপ্রদাহ শুকিয়ে আসা অবধি এ নিয়ম মেনে চলা উচিত। যদি ক্ষতস্থানে অনেক বেশি ব্যথা হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্যারাসিটামল বা অন্য ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে পারেন।

READ MORE:  আম পাতার যত উপকারিতা

 

সম্ভব হলে আক্রমণকারী কুকুরের দিকে লক্ষ্য রাখুন। কামড়ানোর কিছুদিনের মাঝে কুকুরটি মারা গেলে আপনাকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এরকম হলে প্রয়োজনে বিষয়টি অবশ্যই আপনার চিকিৎসককে অবগত করুন।

 

বর্জনীয়: খালি হাতে কখনোই ক্ষতস্থান স্পর্শ করবেন না। ক্ষতস্থানে কোনো তেল, মাটি, গাছের রস, পানের পাতা, গোবর, চকের গুঁড়া ইত্যাদি কোনো প্রকার অপদ্রব্য প্রয়োগ করা যাবে না। ক্ষতস্থানে কোনো সেলাই দেবেন না এবং ক্ষতে চিনি, লবণ বা কোনো ক্ষারক পদার্থ ব্যবহার না করাই ভালো।

 

পরবর্তী করণীয়: কুকুরের আঁচড় বা কামড়ের পরে দেরি না করে নিকটস্থ হাসপাতাল বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে জলাতঙ্ক ও ধনুষ্টংকারের টিকা গ্রহণ করা উচিত। জলাতঙ্কের রোগলক্ষণ প্রকাশ পেলে তা কিন্তু শতভাগ প্রাণঘাতী। এ রোগ একবার হলে মৃত্যু অনিবার্য। সাধারণত লক্ষণ দেখা দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই রোগী মৃত্যুবরণ করে। কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না। কেবল উপশমমূলক চিকিৎসাই দেওয়া সম্ভব। কুকুরের কামড়ের পর জলাতঙ্কের লক্ষণ প্রকাশ পেতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। জলাতঙ্কের জন্য দুই ধরনের টিকা রয়েছে। ক্ষতের তীব্রতা ও আধিক্যের উপর ভিত্তি করে কারো ক্ষেত্রে একধরনের, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে উভয় ধরনের টিকা প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে। যত তাড়াতাড়ি জলাতঙ্কের টিকা নেওয়া যায়, ততই মঙ্গল। জলাতঙ্কের আধুনিক টিকার ৫টি ডোজ রয়েছে। সবক’টি ডোজ সময়মত যথানিয়মে নিয়ে টিকার কোর্স সম্পন্ন করা জরুরি।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কুকুর আক্রমণ করেছে এরকম ব্যক্তিদের তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়, যেমন-

 

ক্যাটাগরি-১: যাদের কুকুর চেটেছে কিংবা শরীরের সাথে কুকুরের লেজের বাড়ি লেগেছে বা কুকুরের শরীরের কোনো লোমশ অংশ আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের সংস্পর্শে এসেছে অথবা কুকুরকে খাওয়ানোর সময় শরীরে কুকুরের লালা লেগেছে কিন্তু কোনো ক্ষত তৈরি হয়নি এবং রক্তপাত হয়নি, কেবল তারাই ক্যাটাগরি-১ এর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের রোগীর জলাতঙ্কের টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আক্রান্ত স্থান শুধু সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেললে কিংবা এন্টিসেপটিক দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করলেই হবে।

READ MORE:  ডালে- ভাতে বাঙালি ; মসুর ডালের ১০টি উপকারিতা

 

ক্যাটাগরি-২: যদি ক্ষতস্থানে কুকুরের আঁচড় বা কামড়ের দাগ দেখা যায় কিন্তু ক্ষতস্থান থেকে কোনো রক্তপাত না হয়, তাহলে তারা ক্যাটাগরি-২ এর অন্তর্গত। এসব আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষতস্থান পরিষ্কারের পাশাপাশি অবশ্যই জলাতঙ্কের টিকা নিতে হবে। জলাতঙ্কের এ টিকা চামড়ার নিচে কিংবা মাংসে দেওয়া যায়। কুকুর আঁচড় বা কামড় দেওয়ার ৫ দিনের মধ্যে এ টিকা নিলে সবচেয়ে ভালো হয়। কুকুর দ্বারা আক্রান্ত গর্ভবতী নারীকেও এটি দেওয়া যাবে।

 

ক্যাটাগরি-৩: কুকুরের আঁচড় বা কামড়ে যদি রক্ত বের হয়, কুকুর দাঁত বসিয়ে দেয় বা মাংস কেটে নিয়ে যায়; তবে আক্রান্ত ব্যক্তি ক্যাটাগরি-৩ এর অন্তর্গত। আবার ক্যাটাগরি-২ ক্ষত যদি মাথা, গলা, বুক বা কাঁধে হয়; তবে সেটিও ক্যাটগরি-৩ এর অন্তর্গত হবে। ক্যাটাগরি-৩ এর ক্ষেত্রে ক্ষতস্থান যথাযথভাবে পরিষ্কার এবং জলাতঙ্কের টিকার পাশাপাশি হিউম্যান র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইনজেকশনও অবশ্যই দিতে হবে।

 

অনেকেই মনে করেন যে, পাগলা কুকুর কামড়ালে আক্রান্তের পেটে কুকুরের বাচ্চা হয়ে যায়, যা মোটেই ঠিক নয়। পরিবারের কারো এ জলাতঙ্ক রোগ হলে বা কুকুর কামড়ালে আক্রান্ত ব্যক্তির খাওয়ার পরে প্লেটের অবশিষ্ট খাবার অন্যদের খাওয়া উচিত নয়। জলাতঙ্কের পাশাপাশি ধনুষ্টংকারের সংক্রমণ ঠেকাতে কুকুর আক্রমণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ধনুষ্টংকারের টিকা নেওয়া উচিত। কুকুরের আক্রমণের পর আঁচড় বা কামড় জনিত যেকোনো জটিলতায় নিকটস্থ চিকিৎসকের সাথে বা হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *