কদমবুসি করার ব্যাপারে ইসলাম কি বলছে?
তিনটা দৃষ্টিকোণ থেকে কদমবুসি করার আলোচনা:
১) ইসলামি দৃষ্টিকোণ: কদমবুসি করা শিরক। কিছু মানুষ বলে কদমবুসি করা কিভাবে শিরক হয় আমরা তো সিজদা করিনা শুধু মাথা নুয়ে সালাম করি! অথচ মাথা নুয়ানো মানে সিজদাহ করা। কিছু মানুষ আছে যারা বলে আমরা কদমবুসি করার সময় চোখ উপরে তুলি তাই আমাদের সিজদাহ হয়না অতএব এই রকম চোখ উপরে তুলে কদমবুসি করা জায়েজ!! কি অদ্ভুত যুক্তি! এইদের যুক্তি মেনে নিলেও তবুও কদমবুসি করা হারাম। কেননা রাসুল (সা) বলেন, যে ব্যাক্তি অন্য কওমের সাদৃশ্য অবলম্ব করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে (মিশকাত হা/৪৩৪৭) যেহেতু কদমবুসি করা বিধর্মীদের রীতি।
অতএব কদমবুসি করা হারাম।
২) চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন: চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে মানুষের শরীরের সবচেয়ে অপরিষ্কার ও আনহাইজেনিক স্থান হল পা। তাহলে আপনি কিভাবে পা-কে ধরছেন? আপনি হয়তো কদমবুসি করার কারনে অসুস্থ হতে পারেন।
৩) আকল বা বিবেক বুদ্ধির দৃষ্টিকোণ: যদি আপনার বিবেক বুদ্ধি সুস্থ হয় তাহলে আপনি অবশ্যই বলবেন মাথা নুয়ে কারও পা- ধরা বেয়াদবি ও চরম অসম্মানজনক। কেননা আপনি যদি কাউকে ভালবাসেন অথবা সম্মান করেন তাকে আপনার পা-এ নয় বুকে জায়গা দিবেন।
ইসলামে পা-এ ধরে সালাম করার কোনো বিধান নেই। এটি একেবারেই ইসলাম পরিপন্থী কাজ। এবং কাফির মুশরিকদের সাদৃশ্যতায় উদ্ভাবিত একটি বিদাত। আর বিদাত এর ব্যপারে- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- “যে কেউ কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্যতা ধারণ করলো, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” [আল হাদীস]
পা- ছুঁয়ে সালাম বা কদমবুসি করা শরী‘আত সম্মত নয়। আনাস (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ আমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যখন তার কোন ভাই বা বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তখন সে কি মাথা ঝুঁকাবে বা তাকে জড়িয়ে ধরবে বা চুমু খাবে? তিনি বললেন, না! লোকটি বলল,তাহলে কি কেবল হাত ধরবে ও মুছাফাহা করবে? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,-হ্যাঁ’ [তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬৮০ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়, মুছাফাহা ও মু‘আনাক্বা অনুচ্ছেদ-৩]
সামাজিকতার দোহাই দিয়ে আমাদের দেশের মুসলীমরা অনেক সময় বড় কাউকে সালাম দেবার সময় ও মুসাফাহা করার সময় কিছুটা ঝুঁকে যান। অথবা পা ছুয়ে সালাম করেন। অথচ সালাম করার রীতি রাসুল ﷺ ১৪৫০ বছর আগেই আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। তাছাড়া কারো সম্মানার্থে মাথা বা ঘাড় ঝুঁকানোর অনুমতি ইসলাম ধর্মে নেই।
যেমন-রাসূল ﷺ কে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো, কোনো ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হলে কি মুসাফাহা করবো”? এ প্রশ্নের উত্তরে রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন,হ্যাঁ, মুসাফাহা কর। এরপর জিজ্ঞাসা করা হলো, তার সামনে কি ঝুঁকতে পারি? তিনি ﷺ ইরশাদ করলেন, না, ঝুঁকা যাবে না। [জামে তিরমিযী হা/২৭২৮; সুনানে ইবনে মাজাহ হা/৩৭০২]