জন্মবিরতিকরণ এর প্রণালী শিখে নিন

বর্তমানে নবদম্পতিরা চান সংসার ও পেশাগত জীবন গুছিয়ে দু-এক বছর পর সন্তান নিতে। আবার প্রথম সন্তানের পর আরেকটা সন্তান নেওয়ার মধ্যে কেউ কেউ বেশ বিরতি চান। কোন সময় কী ধরনের জন্মনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করলে ভালো হয়, এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন অনেকে। এর মধ্যে অন্যতম দুশ্চিন্তা হলো জন্মবিরতিকরণ বড়ি নিয়ে। এটা সবচেয়ে সহজ ও নির্ভরযোগ্য হলেও নানা প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে পিছিয়ে আসেন অনেকে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রজননক্ষম যেকোনো নারীই জন্মবিরতিকরণ বড়ি খেতে পারেন।

 

কাদের গ্রহণ করা উচিত নয়

 

  • বয়স ৪০ বছরের ওপর।

 

  • নতুন মা যাঁরা স্তন্যপান করাচ্ছেন।

 

  • উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি বা ধমনিতে চর্বির আস্তর পড়েছে।

 

  • ধমনি বা শিরায় রক্ত জমাট হওয়ার রোগ আছে যাদের।

 

  • মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক ও হৃদ্‌রোগের ইতিহাস।

 

  • জন্ডিসের রোগী ও যকৃৎরোগ বা যকৃতের টিউমার আছে এমন রোগী।

 

  • স্তন ক্যানসারের রোগী, মাইগ্রেনের রোগী।

 

জন্মবিরতিকরণ

 

মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন নামের এক জাতীয় পদার্থ রয়েছে। এ প্রোজেস্টেরনের মাত্রা একেক জনের শরীরে একেক রকম থাকে, এটি নারীদের মাসিকের ওপর প্রভাব ফেলে। স্বল্পমাত্রার বড়িতে কিছু পরিমাণ ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন থাকে। ইনজেকশন ইমপ্ল্যান্ট মধ্যেও প্রোজেস্টেরন থাকে। ইনজেকশন ইমপ্ল্যান্ট নেওয়ার পর অনেক মায়েরা এসে অভিযোগ করেন, মাসের মাঝখানে একটু একটু করে রক্তপাত হচ্ছে, ওজন বেড়ে যাচ্ছে, মাথা ঘোরাচ্ছে, এ সামন্য সমস্যাগুলো হতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসকরা কাউন্সিলিং করে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এগুলো খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক বিষয়। সাধারণ চিকিৎসার মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করা যায়। এর জন্য গর্ভনিরোধক বড়ি বা ইনজেকশন পরবর্তীতে জন্মবিরতিকরণ ও গর্ভধারণেও কোনো রকম অসুবিধে হবে না। এক্ষেত্রে কাউন্সিলিং একটি বড় ভূমিকা পালন করে। 

 

একেক জন দম্পতির জন্য একেক পদ্ধতি উত্তম। যেমন: স্বামী বিদেশ থাকেন বা একসঙ্গে থাকছেন না, তিনি হয়তো দুই-তিন বছর পরপর আসছেন, এক্ষেত্রে স্বল্পমাত্রার বড়ি এবং কনডম ব্যবহার সবচেয়ে উপযুক্ত। যারা নিয়মিত একসঙ্গে থাকেন তাদের জন্য তিন বছর বা পাঁচ বছর মেয়াদি ‘ইমপ্ল্যান্ট’উপযুক্ত পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত।

 

দম্পতির সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে জন্মবিরতিকরণের সঠিক পদ্ধতির সম্পর্কে জ্ঞানদান করতে হবে। যেটি চিকিৎসক সমাজ ,পরিবার পরিকল্পনা ও চিকিৎসাসেবাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করে থাকেন। জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি দুই প্রকার। যথা-১.স্বল্প মেয়াদি ২. দীর্ঘমেয়াদি। নবদম্পতিদের স্বল্পমেয়াদি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন: আমাদের দেশে সাধারণত বেশি ব্যবহার হয় জন্মবিরতিকরণ পিল। এটি খুব প্রচলিত রয়েছে। যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় এবং সেবনের পদ্ধতি সঠিকভাবে বুঝতে পারে তাহলে এর চেয়ে সুবিধাজনক পদ্ধতি আর নেই। 

 

দ্বিতীয়ত, আরেকটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলো-কনডম ব্যবহার। এটিও খুব ভালো একটি পদ্ধতি। এটির সুবিধা হলো-প্রতিদিন ওষুধ গ্রহণের বিড়ম্বা নেই। এ ছাড়া আরও আছে বিভিন্ন ধরনের ইনজেকশন ‘ইমপ্ল্যান্ট। এর মধ্যে খুব স্বল্পমাত্রার একটি হরমোন দেওয়া থাকে। যেটি জন্ম নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এসকল পদ্ধতি যখন দম্পতি গর্ভধারণ করতে চাইবেন তখন বন্ধ করে দিলে সাথে সাথে গর্ভধারণ করতে পারবেন। এতে গর্ভধারণ ও গর্ভধারণ পরবর্তীতে কোনো অসুবিধা হবে না। এসব বিষয়ে নিয়ে নবদম্পতির সঙ্গে আলাপ করে পরমার্শ দিতে হয়। তাহলে বিরতিকরণ সমস্যা হয় না।  এজন্য কাউন্সিলিংয়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *