কী এবং কেন?

ইয়াজুজ মাজুজ কি? কোথায় আছে এবং কখন আসবে?

আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন বলবেন হে আদম, (আদম উত্তরে বলবেন) আমি আপনার ডাকে সব সময় হাজির, হে আমাদের প্রতিপালক। আমি আপনার আনুগ্যত্যে চির সৌভাগ্যবান।

তখন উচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা করা হবে – তোমার বংশধর থেকে জাহান্নামিদের বের করে দেওয়ার জন্য আল্লাহ তোমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আদম বলবেন, হে আমার প্রতিপালক, জাহান্নামি কারা ? তিনি বলবেন প্রত্যেক এক হাজার থেকে নয়শত নিরানব্বইজন।

এটাই সেই সময় যখন অন্তঃসত্তা নারী তার গর্ভপাত করে দিবে। ছোট বাচ্ছার চুল পেকে যাবে।

আর তখন তুমি লোকদের দেখবে উন্মাদ অথচ বাস্তবে তারা উন্মাদ নয়। কিন্তু আল্লাহর শাস্তি খুবই ভয়াবহ।’

(রাবি বলেন) উপস্থিত মানুষদের উপর এই কথাটি কষ্টদায়ক হয়ে গেলো,‘যার ফলে তাদের চেহারা পরির্বতন হয়ে ওঠে।

এরপর রাসুলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – বলেন, ‘(সেই) নয়শত নিরানব্বইজন হবে ইয়াজুজ মাজুজদের মধ্যে থেকে।

আর (জান্নাতি) একজন হবে তোমাদের মধ্য থেকে।’ ( সহিহ বুখারি – ৭০৮৫)

এই হাদিসটিতে ইয়াজুজ মাজুজদের আদম – আলাইহিস সালাম – ‘র বংশধর বলা হয়েছ। কাজেই ইয়াজুজ মাজুজ মানুষের শ্রেণিভুক্ত।

এভাবে পবিত্র কোরআনে নুহ – আলাইহিস সালাম – ‘র যে ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে সেটাও প্রমাণ করে ইয়াজুজ মাজুজ মানুষের শ্রেণিভুক্ত।

 

ইয়াজুজ মাজুজ দেখতে কেমন হবে?

 

রাসুলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম – বলেন –

আল্লাহ তায়ালা আদমকে ষাট হাত লম্বা আকৃতিতে সৃষ্টি করেন। অতপর তাকে সৃষ্টি সম্পন্ন করার পর বলেন –

তুমি এই উপবিষ্ট ফেরেস্তাদের জামাতকে সালাম দাও এবং ভালো করে শুনো তারা তোমার সালামের জবাবে কী বলে।

কেননা এটাই হবে তুমি ও তোমার পরবর্তী বংশধরদের সালামের প্রতিউত্তর। অতপর আদম (ফেরেস্তাদের কাছে গিয়ে) বললেন আসসালামু আলাইকুম।

ফেরেস্তারা জবাবে বললো ওয়া আলাইকুমস সলাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। তাঁরা রাহমুতুল্লাহ বৃদ্ধি করলো।

যেই জান্নাতে প্রবেশ করবে সে আদমের আকৃতিতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আদমকে সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত সৃষ্টি আকৃতি ছোট হয়ে আসছে।’ ( সহিহ বুখারি – ৫৮৭৩ )

এই হাদিসটি প্রমাণ করছে আদম – আলাইহিস সালাম – সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত তাঁর বংশধরদের আকৃতি ছোট হয়ে আসছে।

আর ইয়াজুজ মাজুজ যেহেতু তাঁর বংশধর তাই তাদের আকৃতিও দিনেদিনে ছোট হচ্ছে।

এ জন্যই ইয়াজুজ মাজুজের আকৃতি মানুষের আকৃতির মতোই হবে। হয়তো একটু কম বেশ হবে।

কিন্তু তাদের স্বভাব হবে হিংস্র রাক্ষুসে নির্দয় ও ভয়ঙ্কর। তারা অত্যাচারের বন্যা নিয়ে আবির্ভূত হবে।

এমনকি তাদের অত্যাচারে ঈসা নবি পাহাড়ের চূড়ায় আশ্রয় গ্রহণ করবেন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে তাদের এমন স্বভাব সম্পর্কে পর্যাপ্ত দালায়িল রয়েছে।

কিন্তু তারপরও তারা মানুষ। এই হিংস্র স্বভাব তারা মানুষ হওয়া থেকে দূরে রাাখবে না।

ইতিহাসে চেঙ্গিস খান ও তার বাহিনী সম্পর্কে খুবই ভয়ঙ্কর তত্ত্ব পাওয়া যায়। কিন্তু চেঙ্গিস খান ও তার বাহিনী মানুষ ছিলো।

এভাবে ইয়াজুজ মাজুজরা যদি চেঙ্গিস খান থেকে কয়েকগুণ বেশি হিংস্র হয় তবুও তারা মানুষই থাকবে।

 

ইয়াজুজ মাজুজ কখন আসবে?

 

নাস্তিকগুষ্টি মনে করে ইয়াজুজ মাজুজ বলতে বাস্তবে কেউ নেই। এমনিভাবে কিছু মুসলিম দাবি করেন ইয়াজুজ মাজুজ বলতে আলাদা কোনো সম্প্রদায় নয়।

বরং দুনিয়ার সকল কাফির ও জাহান্নামিরা হলো ইয়াজুজ মাজুজ। কিন্তু তাদের এই দাবি কোরআন হাদিস ও সালাফের বক্তব্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।

আমরা নিম্নে কোরআন হাদিস সালাফের উদ্ধৃতি ও যুক্তির আলোকে তাদের দাবিকে খণ্ডণ করছি।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন –

অবশেষে সে যখন দু-পাহাড়ের মধ্যখানে পৌঁছুলো, তখন সেখানে এক জাতির সাক্ষাত পেলো। যারা খুব কমই কোনো কথা বুঝতে পারতো।

তারা বললো, হে যুল কারনাইন, ইয়াজুজ মাজুজ এ দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। আমরা কি তোমাকে এ কাজের জন্য কর দেবো যে, তুমি আমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবে।

সে বললো, আমার রব আমাকে যা কিছু দিয়ে রেখেছেন তাই যথেষ্ট। তোমরা শুধু শ্রম দিয়ে আমাকে সাহয্য করো।

আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যখানে প্রাচীর নির্মাণ করে দিচ্ছি। আমাকে লোহার পাত এনে দাও।

তারপর যখন দু-পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা সে পূর্ণ করে দিলো, তখন লোকদের বললো এবার আগুন জ্বালাও,

অবশেষে (লোহার গুলো) পুরোপুরি আগুনের মতো লাল করার পর সে বললো, আনো! এবার আমি এর উপর গলিত তামা ঢেলে দেবো।

(এ প্রাচীর এমন ছিলো যে) ইয়াজুজ মাজুজ এটা অতিক্রম করে আসতে পারতো না আবার এতে সুড়ঙ্গ করতেও সক্ষম ছিলো না।

যুল কারনাইন বললো এ আমার রবের অনুগ্রহ। কিন্তু যখন আমার রবের প্রতিশ্রুতির নির্দিষ্ট সময় আসবে তখন তিনি একে ধূলিস্মাত করে দিবেন।

আর আমার রবের প্রতিশ্রুতি সত্য।’ ( সুরা কাহাফ – ৯৩-৯৭ )

 

ইয়াজুজ মাজুজ কোথায় আছে?

 

হুজাইফা ইবনে আসিদ আলগিফারি থেকে বর্ণিত তিনি বলেন –

নবি কারিম – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – আমাদের দিকে তাকালেন তখন আমরা পরস্পর আলোচনা করছিলাম।

তিনি বললেন তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করছো? তারা বললো, আমরা কিয়ামত নিয়ে আলোচনা করছি।

তিনি বললেন – দশটি নিদর্শন দেখার আগ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। অতপর তিনি সেই দশটি নিদর্শন উল্লেখ করলেন –

ধোঁয়া, দাজ্জাল, দাব্বা, পশ্চিমদিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া, ঈসা ইবনে মারইয়াম – আলাইহিস সালাম – এর অবতরণ, ইয়াজুজ মাজুজের আত্মপ্রকাশ, তিনটি ভূমিধ্বস – একটি হবে পূর্বদিকে, একটি হবে পশ্চিমদিকে আর অন্যটি হবে জাযিরাতুল আরবে।

আর সবশেষে আগুন যা ইয়ামান থেকে উঠে মানুষকে তাদের সমবেত হওয়ার স্থানের দিকে নিয়ে যাবে। ( সহিহ মুসলিম,৭৪৬৭ )

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link