স্বাস্থ্য

গরমকালের উপযুক্ত পানীয়

এই গরমে বাইরে বের হয়েছেন?তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি। কোন পানীয়তে ভরসা রাখবেন?

 

সামার ড্রিংকস: গরমের দিনেও শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এই পানীয়। গরমে তাৎক্ষণিক শীতল প্রভাব ফেলে শরীরে।

 

হেলথ ড্রিংকস: তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গিয়েছে। এই গরমে বেঁচে দায় হয়ে পড়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি। সুস্থ থাকতে একমাত্র দাওয়াই হাইড্রেশন। এই অবস্থায় কোনও ভাবেই শরীরকে ডিহাইড্রেটেড হতে দেওয়া যাবে না। এর জন্য প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে। এর সঙ্গেও এমন কিছু শরবত পান করুন যেটা শরীরে জলের চাহিদা পূরণ করবে এবং শক্তি জোগাবে। বাজারে একাধিক হেলথ ড্রিংক্স পাওয়া যায়। কিন্তু সেই সব প্রিসার্ভ ড্রিংক্সের চেয়ে ভাল হয় যদি আপনি ভাজা কোনও শরবত পান করেন। এর জন্য সেরা হল ছাতুর শরবত। ছাতু আপনি অনেক ভাবে খেতে পারেন। কিন্তু গরমে ছাতু খাওয়ার উপকারিতাগুলি কী-কী, তা জানেন?

 

ছাতুর মধ্যে রয়েছে আয়রন, সোডিয়াম, ফাইবার, প্রোটিন এবং ম্যাগনেসিয়াম। অন্যদিকে, ছাতু প্রোটিনের একটি ভাল উৎস, বিশেষ করে যাঁরা নিরামিষ খাবার খান এবং যাঁরা একটি ভেষজ প্রোটিন শেক খুঁজছেন তাদের জন্য। ছাতু দিয়ে তৈরি প্রোটিন শেকও আপনার পেশীর ওজন বাড়াতে সহায়তা করে।

 

গরমে ছাতুর শরবত পান করলে হ্রাস পায় হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি। গরমের দিনেও শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এই পানীয়। গরমে তাৎক্ষণিক শীতল প্রভাব ফেলে শরীরে। তাছাড়া খালি পেটে এক গ্লাস ছাতুর শরবত পান করলে সারাটা দিন আপনি ফুরফুরে থাকতে পারেন। এটি আপনার মধ্যে শক্তির জোগান দেয় যার ফলে সারাদিনের কর্মেও আপনি এনার্জি পান।

 

ছাতুর শরবত খেলে শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলের ভারসাম্য বজায় থাকে। খালি পেটে ছাতুর শরবত পান করলে শরীর থেকে সমস্ত টক্সিন পদার্থ বেরিয়ে যায়। নুন, আয়রন ও ফাইবারের সংমিশ্রণ হজমে সাহায্য করে। সহজেই পেট পরিষ্কার করে দেয় এবং মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে। যার ফলে ওজনও কমে যায় সহজেই।

 

গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ছাতুর শরবত পান করলে দেহের ভিতরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যে, তার প্রভাবে রক্তে উপস্থিত টক্সিক উপাদানে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শরীরে বৃদ্ধি পায়।

 

গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ার জন্য ছাতুর শরবতে থাকা শর্করা ধীরে ধীরে রক্তে মেশে, যেখান থেকে ডায়বেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে। তার সঙ্গে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও ধীরে ধীরে কমে যায় এবং এই সব কারণে হার্টও সুস্থ থাকে।

 

ঋতুস্রাব চলাকালীন মহিলারা শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। এই সময় তাঁদের শরীরে বেশি করে ভিটামিন ও মিনারেলের প্রয়োজন হয়। এই সময় যদি ছাতুর শরবত পান করা যায় তাহলে ঋতুস্রাব চলাকালীন যে সব শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তা অনায়াসে প্রতিরোধ করা যায়।

 

এসব পানীয় পান করলে শরীর থাকবে সুস্থ ও সুন্দর। এছাড়াও পান করতে পারেন-

 

ডাবের পানি: গরমে এই জনপ্রিয় পানীয় আমরা প্রতিদিনই পান করতে পারি। ডাবের পানিতে আছে বেশ ভালো পরিমাণে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম। ক্যালরিও কম নয়। তাই খুব গরমে পরিশ্রান্ত অবস্থায় এটি দ্রুত চাঙা হতে সাহায্য করে। গরমে ডায়রিয়া হলেও ডাবের পানি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। শরীর ঠান্ডাও রাখে।

 

কাঁচা আমের শরবত: এখন বাজারে কাঁচা আম পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচা আমের সঙ্গে লবণ-চিনি-পুদিনা পাতা সামান্য কাঁচা মরিচ দিয়ে ব্লেন্ড করে শরবত করে খেতে পারেন। এতে আমের পুষ্টি ও ভিটামিন খনিজের সঙ্গে পানির অভাবও পূরণ হবে।

 

পুদিনা পাতার শরবত: লেবুর রসের সঙ্গে বা শুধু পানির সঙ্গে পুদিনা পাতা ব্লেন্ড করে এই শরবত তৈরি করতে পারেন। অথবা লেবু পানি বা শরবতের মধ্যে কয়েকটা তাজা কাঁচা পুদিনা পাতা ছেড়ে দিয়ে মিশিয়ে দিতে পারেন। এই পানীয় গরমে প্রশান্তি ও আরাম দেবে। এ ছাড়া পুদিনা পাতায় পটাশিয়াম আছে। এটি বমি ভাব দূর করে দেহ-মন তাজা করে।

 

বাদাম দুধঃ পুষ্টিতে ভরপুর বাদাম দুধ গরমে শরীর ঠান্ডা করতেও রাখে দারুণ ভূমিকা। কাজু বা কাঠবাদামের সাথে কিছুটা এলাচ মেশালে বাদামের কাঁচা গন্ধ দূর হবে।

 

 ক্যামোমাইল চাঃ ক্যামোমাইল চা জ্বাল দিয়ে ছেঁকে নিয়ে লিকারটা কিছুক্ষণ ফ্রিজে ঠান্ডা করুন। খাওয়ার আগে মধু মিশিয়ে নিন। যাদের ঘাম বেশি হয় তাদের ডিহাইড্রেশনের হাত থেকে বাঁচাবে এই চা।

 

লেবু-পানি: লেবুর রস ও সামান্য লবণমিশ্রিত এক গ্লাস পানি এই গরমে কেবল প্রশান্তিই দেবে না, লবণশূন্যতাও পূরণ করবে। যাঁদের ডায়াবেটিস নেই, তাঁরা চিনি দিয়ে শরবত করেও খেতে পারেন। লেবুতে আছে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি, লবণে সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং চিনিতে সহজ শর্করা, যা দ্রুত শক্তি জোগায়। এ ছাড়া লেবুর রস অন্ত্রে লৌহ শোষণে সাহায্য করে, খাবারে রুচি বাড়ায়।

 

সতর্কতা 

 

গরমের পানীয় বেছে নেওয়ার সময় যে বিষয়গুলো লক্ষ রাখবেন তা হলো, অনেক বরফ মিশিয়ে বা খুব ঠান্ডা পানীয় পান করবেন না। স্বাভাবিক তাপমাত্রার বা ঠান্ডার সঙ্গে স্বাভাবিক পানি মিশিয়ে পান করুন। এতে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি কমবে। ডায়াবেটিস ও স্থূল রোগীরা চিনি মেশাবেন না। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা লবণ একটু কম দেবেন। আর কিডনি রোগীদের জন্য অতিরিক্ত পটাশিয়াম ক্ষতিকর হতে পারে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link