করোনা ভাইরাস মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করে।
মস্তিষ্কের ওপর করোনা ভাইরাসের প্রভাব-
Effects of Coronavirus on the brain-
করোনা ভাইরাস আমাদের মস্তিষ্কের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
The corona virus can have a devastating effect on our brain.
ভাইরাস সংক্রমণের স্থান ভেদে করোনা রোগের উপসর্গেও তাই বেশ কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। করোনা ভাইরাসটি যেহেতু প্রধানত আক্রমণ করে ফুসফুসকে, তাই বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগটি শুরু হয় কাশি, গলাবেথা, জ্বর এবং শ্বাস কস্ট দিয়ে। আবার ভাইরাসটি যখন আমাদের নাকের মিউকাস মেমব্রেনকে সংক্রমণ করে তখন রোগীদের ঘ্রানশক্তি লোপ পায়। অন্ত্রের কোষকে সংক্রমণ করলে শুরু হয় অন্ত্রের গোলযোগ এবং ডায়রিয়া।
কোভিড রোগীরা মাথা ব্যাথা, বিভ্রান্তি, ভ্রম বা প্রলাপের মত মানুষিক উপসর্গ প্রদর্শনের মাধ্যমেও রোগ প্রকাশ করতে পারে। আর এ থেকেই চিকিৎকগণ ধারনা করেন যে করোনা ভাইরাসটি হয়তো ব্রেইনের স্নায়ু কোষকেও সংক্রমণ করে।
সম্প্রতি লন্ডনের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪৩ জন করোনা রোগীর উপর একদল বৃটিশ বিজ্ঞানী একটা গবেষনা চালান । রোগীদের ক্লিনিক্যাল ডাটা এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে তারা দেখতে পান যে এদের ভেতরে ১০ জনের এনসেফালোপ্যাথি হয়েছিল এবং তারা ছিল অনেকটা বিকারগ্রস্থ। তবে তাদের ব্রেইনের এমআরআই এবং স্নায়ু রসের (সিএসএফ) পরীক্ষায় কোন প্রকার অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি।
বাকিদের ভেতর ১২ জনের হয়েছিল মস্তিষ্কে প্রদাহ বা এনসেফালাইটিস এবং এনসেফালোমায়েলাইটিস (এডিইএম)। এদের ভেতরে ৫ জনের ব্রেইনে রক্তক্ষরন এবং এক জনের নেক্রোসিস পাওয়া যায়। এছাড়াও ৮ জনের মস্তিষ্কে রক্তনালিকা ব্লক হয়ে স্ট্রোক হয় এবং ৭ জনের হয় গুলেইন-বেরী সিনড্রোম- এটা এক ধরনের প্যারালাইসিস রোগ। এগুলো ছাড়াও রোগীরা বিভিন্ন ধরনের আরও কিছু স্নায়োবিক উপসর্গ প্রদর্শন করে। তবে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরন এবং রক্তনালিকার অস্বাভাবিকতাই ছিল উল্লেখযোগ্য। আশ্চর্য্যজনক ব্যাপার হল, মস্তিষ্কের সমস্যা করোনার তীব্রতার সাথে সম্পর্কিত ছিল না। অর্থাৎ অনেক মাইল্ড করোনা রোগীরও মস্তিষ্কের উপসর্গ প্রদর্শন করেছে।
করোনাভাইরাস মস্তিষ্কে সরাসরি কতোটুকু সংক্রমণ করে তা দেখতে হলে দরকার মস্তিষ্কের ব্যবচ্ছেদ। আর এ কাজটিই করেন ইতালির বিজ্ঞানীরা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ১৮ জন মানুষের ব্রেইনে অটোপ্সির মাধ্যমে। রোগীদের সবাই সিভিয়ার কোভিডে ভুগে হাসপাতালে ভর্তির ২ থেকে ৯ দিনের মধ্যে মারা যান। এবং এদের ভেতরে কারো কারো নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়ুতন্ত্রীয় উপসর্গও ছিলো।
logo
সম্পাদকীয় মতামত সম্পাদকের কলম থেকে উপসম্পাদকীয়
মস্তিষ্কে করোনাভাইরাসের ভয়ংকর দিক
ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম
ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম
এমবিবিএস, এমএসসি, পিএইচডি,
সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য।
২৮ জুলাই, ২০২০ ০৭:২৪ পিএম
মস্তিষ্কে করোনাভাইরাসের ভয়ংকর দিক
retina medical admission coaching
টিস্যু ট্রপিজমের কারনে করোনাভাইরাস শুধুমাত্র আমাদের শ্বাসনালী এবং ফুসফুসকেই আক্রমণ করে না বরং এ ভাইরাসটি শরীরের আরও কিছু অঙ্গ এবং টিস্যুকে সংক্রমন করে। মূলত শরীরের যেসব কোষে এসিই-২ রিসিপ্টর রয়েছে সে সব কোষ এবং কলাকেই এই ভাইরাসটি সংক্রমণ করতে পারে। আর এ কারনেই ফুসফুস ছাড়াও এই ভাইরাসটির সংক্রমণ দেখা যায় রক্তনালীর এন্ডোথেলিয়াম, অন্ত্রের এপিথেলিয়াম এবং কিডনীতে।
ভাইরাস সংক্রমণের স্থান ভেদে করোনা রোগের উপসর্গেও তাই বেশ কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। করোনা ভাইরাসটি যেহেতু প্রধানত আক্রমণ করে ফুসফুসকে, তাই বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগটি শুরু হয় কাশি, গলাবেথা, জ্বর এবং শ্বাস কস্ট দিয়ে। আবার ভাইরাসটি যখন আমাদের নাকের মিউকাস মেমব্রেনকে সংক্রমণ করে তখন রোগীদের ঘ্রানশক্তি লোপ পায়। অন্ত্রের কোষকে সংক্রমণ করলে শুরু হয় অন্ত্রের গোলযোগ এবং ডায়রিয়া।
কোভিড রোগীরা মাথা ব্যাথা, বিভ্রান্তি, ভ্রম বা প্রলাপের মত মানুষিক উপসর্গ প্রদর্শনের মাধ্যমেও রোগ প্রকাশ করতে পারে। আর এ থেকেই চিকিৎকগণ ধারনা করেন যে করোনা ভাইরাসটি হয়তো ব্রেইনের স্নায়ু কোষকেও সংক্রমণ করে।
সম্প্রতি লন্ডনের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪৩ জন করোনা রোগীর উপর একদল বৃটিশ বিজ্ঞানী একটা গবেষনা চালান । রোগীদের ক্লিনিক্যাল ডাটা এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে তারা দেখতে পান যে এদের ভেতরে ১০ জনের এনসেফালোপ্যাথি হয়েছিল এবং তারা ছিল অনেকটা বিকারগ্রস্থ। তবে তাদের ব্রেইনের এমআরআই এবং স্নায়ু রসের (সিএসএফ) পরীক্ষায় কোন প্রকার অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি।
বাকিদের ভেতর ১২ জনের হয়েছিল মস্তিষ্কে প্রদাহ বা এনসেফালাইটিস এবং এনসেফালোমায়েলাইটিস (এডিইএম)। এদের ভেতরে ৫ জনের ব্রেইনে রক্তক্ষরন এবং এক জনের নেক্রোসিস পাওয়া যায়। এছাড়াও ৮ জনের মস্তিষ্কে রক্তনালিকা ব্লক হয়ে স্ট্রোক হয় এবং ৭ জনের হয় গুলেইন-বেরী সিনড্রোম- এটা এক ধরনের প্যারালাইসিস রোগ। এগুলো ছাড়াও রোগীরা বিভিন্ন ধরনের আরও কিছু স্নায়োবিক উপসর্গ প্রদর্শন করে। তবে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরন এবং রক্তনালিকার অস্বাভাবিকতাই ছিল উল্লেখযোগ্য। আশ্চর্য্যজনক ব্যাপার হল, মস্তিষ্কের সমস্যা করোনার তীব্রতার সাথে সম্পর্কিত ছিল না। অর্থাৎ অনেক মাইল্ড করোনা রোগীরও মস্তিষ্কের উপসর্গ প্রদর্শন করেছে।
করোনাভাইরাস মস্তিষ্কে সরাসরি কতোটুকু সংক্রমণ করে তা দেখতে হলে দরকার মস্তিষ্কের ব্যবচ্ছেদ। আর এ কাজটিই করেন ইতালির বিজ্ঞানীরা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ১৮ জন মানুষের ব্রেইনে অটোপ্সির মাধ্যমে। রোগীদের সবাই সিভিয়ার কোভিডে ভুগে হাসপাতালে ভর্তির ২ থেকে ৯ দিনের মধ্যে মারা যান। এবং এদের ভেতরে কারো কারো নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়ুতন্ত্রীয় উপসর্গও ছিলো।
মৃত্যুর পরে রোগীদের ব্রেইন টিস্যু নিয়ে করোনা ভাইরাস সনাক্তের জন্যে আরটি পিসিআর এবং ইমিউনোস্টেইনিং করা হয়।
পিসিআর করে ১৮ জনের মধ্যে ৫ জনের ব্রেইন টিস্যুতে সামান্য পরিমান করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। তবে ইমিউনোস্টেইনিং করে কোনো রোগীর ব্রেইন টিস্যুতে কোনো প্রকার ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। স্নায়ু কোষে ভাইরাস ইনফেকশন হলে কোষ বা কলার যে পরিবর্তন হয়, সেই রকম পরিবর্তন কোন রোগীর ব্রেইনেই পরিলক্ষিত হয়নি। তবে সব রোগীর ব্রেইন টিস্যুতেই মাইক্রোসকপিক ইস্কেমিয়া বা অক্সিজেনের ঘাটতি জনিত ইনজুরি দেখতে পাওয়া যায়।
এসব থেকে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হন যে, করোনাভাইরাস মানুষের মস্তিষ্কে হয়তো সরাসরি সংক্রমন করে না। ব্রেইন কোষে যে সামান্য পরিমান ভাইরাসের আলামত পাওয়া যায় তা সম্ভত ব্রেইনের রক্ত নালীকার ভেতরে ছিল। করোনা ভাইরাস রক্তনালীর কোষকে সংক্রমণ করে। এই গবেষনাটি প্রকাশিত হয় নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে।
এ দুটো গবেষণা থেকে এটা পরিস্কার যে করোনা ভাইরাস মস্তিষ্কে মারাত্মক জটিলতা সৃস্টি করতে পারে। অতএব, করোনা রোগীদের রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিউরোলোজিক্যাল পরিক্ষা নিরিক্ষার দরকার রয়েছে। তাই আমাদের উচিত আজই সচেতন হওয়া।