স্বাস্থ্য

দেশি হরলিক্স ছাতু খাওয়ার উপকারিতা

ছাতু কি 

 

ছাতুকে বলা হয়ে থেকে ‘দেশি হরলিক্স’। এটি অনেক পুষ্টিকর খাবার হওয়া সত্ত্বেও আমাদের খাদ্যাভাসে আজ ছাতু অবহেলিত। ছাতুর উৎপত্তি অবাঙালিদের হাত ধরে। ভারতের উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে এটির প্রচলন দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে প্রােটিনে ভরপুর হলেও আমাদের নিত্যদিনের খাবারে জায়গা করে উঠতে পারেনি। প্রতি ১০০ গ্রাম ছাতুতে প্রায় ৬০-৬৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। ছাতু খাওয়ার উপকারিতা অনেক। বর্তমান আধুনিক সময়ে ফাস্টফুড খাবারের আড়ালে উপাদেয় এই খাদ্যটির কথা মানুষ  প্রায় ভুলেই গেছে। ৮ – ৮০ বছরের সবাই এটিকে। নিশ্চিন্তে গ্রহণ করতে পারেন এবং নিজেদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারেন।

 

ছাতু তৈরি করার পদ্ধতি 

 

প্রধানত ছােলার ডাল থেকেই ছাতু তৈরি করা হয়। প্রথমে ডালকে ভেঙ্গে মিহি করা হয়। এরপর এটিকে ছেকে পাউডারে পরিণত করা হয়। মাঝে মাঝে আবার এতে ছােলার ডালের সঙ্গে মটর দানার পাউডার মিশিয়ে ছাতু বানানাে হয় স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য। তবে একেক ধরনের ছাতু একেকভাবে তৈরি করা হয়।

 

ছাতু খাওয়ার উপকারিতা 

 

  একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ছাতু খেলে শরীরের নানাবিধ উপকার তো হয়ই, সেই সঙ্গে অনেকক্ষণ পেট ভরে থাকার কারণে বারে বারে খাবার খাওয়ার প্রবণতাও কমে। ফলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। শুধু তাই নয়, মেলে আরও অনেক উপকার। যেমন ধরুন…

 

১. শরীরকে রোগমুক্ত করে:

বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত এই পানীয়টি খাওয়া শুরু করলে দেহের ভিতরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যে তার প্রভাবে রক্তে উপস্থিত টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ছোট-বড় নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।

 

২. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:

প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এই দুটি উপদান ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একদিকে শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, আর অন্যদিকে, প্রোটিন শরীরের ভিতরে যে ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণ করে। ফলে সার্বিকভাবে শরীর, ত্বক এবং চুলের জেল্লা বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, এইসবকটি উপাদানই ছাতুতে প্রচুর মাত্রায় রয়েছে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পয়েছেন কেন প্রতিদিন ছাতু খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

 

৩. এনার্জির ঘাটতি দূর হয়:

ছাতু খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিমেষে উপকারি উপাদানগুলি রক্তে মিশে যায়। ফলে সঙ্গে সঙ্গে এনার্জির মাত্রা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে শরীরের ভিতরে ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি পূরণ হওয়ার কারণে সার্বিকভাবে শরীর এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই কারণেই তো চিকিৎসকেরা নিয়মিত প্রাতঃরাশে ছাতুর সরবত খাওয়া পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

 

৪. বয়স্কদের জন্য উপকারি পানীয়:

বয়স যত বাড়তে থাকে, তত নানাবিধ শারীরিক সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এক্ষেত্রেও কিন্তু ছাতু বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ৬০ বছরের পর থেকে যদি নিয়মিত ছাতু খাওয়া যায় তাহলে একাধিক বয়সকালীন রোগ শরীরে বাসা বাঁধার কোনও সুযোগই পায় না। ফলে শেষ বয়সটা বেজায় নিশ্চিন্তেই কেটে যায়।

 

৫. স্টমাকের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:

প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে ছাতুর সরবত নিয়মিত খেলে কনস্টিপেশনের মতো সমস্যার প্রকোপ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে। এখানেই শেষ নয়। আরও নানা উপকারে লাগে ফাইবার। যেমন ধরুন, প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে যে পরিমাণ তেল আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, তা স্টমাক থেকে বের করে দিতে এই উপাদানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

৬. সুস্থ থাকতে শিশুদের খেতেই হবে:

শরীরের যথাযত বৃদ্ধির জন্য যে যে উপাদানগুলির প্রয়োজন পরে তা সবই উপস্থিত রয়েছে ছাতুতে। তাই তো বাজার চলতি হেলথ ড্রিঙ্কের পরিবর্তে নিয়মিত যদি শিশুদের ছাতু খাওয়ানো যায়, তাহলে দারুন উপকালে লাগে।

 

৭. ডায়াবেটিকদের জন্য উপকারি পানীয়:

গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ার কারণে ছাতুতে উপস্থিত শর্করা খুব ধীরে ধীরে রক্তে মিশে থাকে। ফলে এই ধরনের খাবার খেলে হঠাৎ করে শরীরে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। সেই কারণেই তো ডায়াবেটিক রোগীরও ইচ্ছা হলে ছাতু খেতে পারেন। প্রসঙ্গত, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ছাতুর সরবত খেলে রক্তচাপ অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাই যারা হাই ব্লাড প্রেসারে ভুগছেন, তারা এই খাবারটি নিয়মিত খেলে উপকার পেতে পারেন।

 

৮. মেয়েদের শারীরিক ক্ষমতা বাড়ে:

পিরিয়ডের সময় শরীরে দেখা দেওয়া পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে ছাতুর সরবতের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। ছাতুতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ এবং ভিটামিন থাকে, যা শরীরের সচলতা বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

ছাতু খাওয়ার নিয়ম

 

 ছাতুকে নানাভাবে খাওয়া যায়। এটিকে খাওয়া বিভিন্ন উপায় নীচে উল্লেখ করা হলাে:

  • পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন কুঁচি কুঁচি করে কেটে ছাতুর সাথে মিশিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন ঝাল ছাতু। 
  • ছাতু দিয়ে লাড়ু, হালুয়া বা বরফিও বানিয়ে ফেলতে পারেন।
  • ডায়বেটিসের সমস্যা না হলে দুধ, চিনি, কলা মিশিয়ে খান।
  • এটির শরবত বানিয়ে পান করুন, এতে শরীর ঠান্ডা থাকে।
  • যদি ওজন কমাতে চান তাহলে পাতি লেবুর রস এবং বীট লবণ দিয়ে মেখে খেতে পারেন। বা এই নিয়মে সামান্য পানি মিশিয়ে শরবত বানিয়েও খেতে পারেন। 
  • ছাতুর পুর দিয়ে রুটি, পরােটা এমনকি কাবাবও বানিয়ে ফেলতে পারেন।
  • বাচ্চাদের জন্য এটিকে একটু জুসের মতাে খাওয়ানাে যেতে পারে যেনাে তাদের এটির প্রতি উৎসাহ তৈরি হয়। 
  • অনেকে আবার মুড়ি কলা গুড় বা চিনি দিয়েও এটি খেতে পছন্দ করেন। আবার অনেকে চিনি, গুড় পানি বা দুধের সাথে মেখেও খেতে ভালােবাসেন।

 

ছাতু খাওয়ার অপকারিতা

 

 আপাতদৃষ্টিতে এটি খাওয়ার কোনাে অপকারিতা নেই। যেহেতু এটি সম্পূর্ণভাবে ভেষজ তাই এটির কোনাে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে দিনের বেলায়ই এটি খাওয়া ভালাে কেননা এটি হজমে সামান্য সময় নেয়। ছাতু অত্যন্ত উপাদেয় একটি খাদ্য। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link