বন্ধ্যাত্ব এর কারণ এবং চিকিৎসা
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বন্ধ্যাত্ব সমস্যার নিয়ে অনেক দম্পতিই চিন্তিত। বাঙালীর তুলনায় মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপে এ সমস্যা বেশি। আমাদের দেশের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যে পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব সমস্যা আরো বেশি।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
এক বছর বা এর বেশি সময় ধরে কোন রকম জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ছাড়া সন্তান ধারণে ব্যর্থ হলে অবশ্যই যে কোন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ নিতে হবে। তবে বয়স ৩৫ এর অধিক থাকলে ৬ মাস চেষ্টা করে যদি ব্যর্থ হন, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অতি জরুরী।
প্রকারভেদ-
বন্ধ্যাত্বকে ২ ভাবে ভাগ করা যায়:-
প্রাথমিক বন্ধ্যাত্ব: যখন কোন মহিলার কখনোই গভধারণ হয় নি।
সেকেন্ডারী বা অর্জিত বন্ধ্যাত্ব: অতীতে কখনও গর্ভধারণ হয়েছিল বা সন্তান জন্মদানের পরে দম্পতি কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করে একসাথে থাকার পরও গর্ভধারণে সক্ষম হয়নি।
নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণ
১. প্রেগন্যান্সির জন্য জরুরি পলিসিস্টিক ওভারি, যার মাধ্যমে একটা করে ওভাম আসার কথা, সেটা আসে না।
২. জরায়ুর কিছু সমস্যা থাকে যা জন্মগত হতে পারে আবার অসুখের কারণে হতে পারে।
৩. জন্মগত সমস্যার কারণে হয়ত ডিম আসছে না, তার টিউব ব্লক, জরায়ু যেটা আছে সেটা বাচ্চাদের মতো।
৪. আরও কিছু অসুখ আছে, যেমন: ওভারিয়ান চকলেট সিস্ট, এন্ডোমেট্রিওসিসের কারণে হতে পারে।
৫. হরমোনের কারণেও হতে পারে। যেমন থাইরয়েডের সমস্যার কারণে হতে পারে।
৬. আর যৌনবাহিত রোগের কারণে মেয়েদের প্রজনন অঙ্গগুলোর ক্ষতি করে। সেজন্য বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের কারণ
১. একটা কারণ এজোস্পার্মিয়া, অর্থাৎ বীর্যের মধ্যে শুক্রাণু নেই। তার নালির কোথাও বাধা সৃষ্টি হয়েছে তাই শুক্রাণু মিলতে পারছে না।
২. শুক্রাণু তৈরি হওয়ার যে স্থান অণ্ডকোষ, কোন কারণে সেটি তৈরিই হয়নি।
৩. অনেক সময় শুক্রাণু থাকে কিন্তু পরিমাণে কম থাকে।
৪. আবার শুক্রাণুর পরিমান ঠিক আছে কিন্তু মান ঠিক নেই। যার ফলে সে ডিম ফার্টিলাইজ করতে পারে না।
৫. এছাড়া টেস্টোস্টেরন হরমোনও ‘সিক্রেশন’ হতে হবে।
৬. প্রজনন অঙ্গে কোন ধরনের আঘাত
৭. অস্ত্রোপচারের কারণে সৃষ্ট বাধা
৮. প্রজনন অঙ্গে যক্ষ্মা
৯. ডায়াবেটিস
১০. ছোটবেলায় মাম্পস
১১. এমনকি মাথায় চুল গজানোর ঔষধও পুরুষদের সন্তান ধারণের অক্ষমতার উৎস।
বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে করণীয়
মেয়েদের ক্ষেত্রে –
১. মেয়েদের খাদ্যাভ্যাস ঠিক করতে হবে।
২. ক্যালরি খাওয়া কমাতে হবে।
৩. ঘরে রান্না খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
৪. ব্যায়াম করতে হবে।
৫. শরীরের স্বাভাবিক ওজন রক্ষা করতে হবে।
জীবনাচারণ পরিবর্তন করতে হবে।
৬. দিনে ঘুমানো, রাতে জেগে থাকার মত অভ্যাস বদলাতে হবে।
৭. বয়স থাকতে বাচ্চা নিতে হবে।
ছেলেদের ক্ষেত্রে-
১. ঔষধ দিয়ে শুক্রাণু বাড়ানো যেতে পারে।
২. স্বাভাবিক হচ্ছে প্রতি মিলিতে চল্লিশ থেকে ১২০ মিলিয়ন শুক্রাণু থাকার কথা। যদি সংখ্যাটা ১০ মিলিয়নের নিচে নেমে যায়, তাহলে কৃত্রিম গর্ভধারণে যেতে হবে।
৩. যদি পুরোপুরি ‘অবস্ট্রাকশন’ হয়ে থাকে যে, শুক্রাণু আসছে না, তাহলে দেখতে হবে অণ্ডকোষটা সক্রিয় আছে কিনা।
৪. অণ্ডকোষ সক্রিয় থাকলে সেখান থেকে সুঁই দিয়ে শুক্রাণু নিয়ে এসে টেস্টটিউব পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেয়া যায়।
বিশ্বব্যাপী পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় সাফল্যের হার কম। নারী পুরুষ দুজনের জন্যই বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি।
এক সপ্তাহের ডোজেই এটি সেরে যায় না। তাই এক্ষেত্রে ধৈর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এটি প্রায়শই ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। বিশেষ করে টেস্টটিউব পর্যন্ত যদি বিষয়টি গড়ায়।
বেসরকারি পর্যায়ে এর খরচ দুই থেকে আড়াই লাখ। কিন্তু এটি একবারে সফল নাও হতে পারে।
আর বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা অনেক কষ্টকর। ঢাকায় একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদক ফারিহা আফসানা কান্তা সন্তানহীন হওয়ার সামাজিক যতরকম হয়রানি সবকিছুই সামাল দিয়েছেন।