মূল পার্থক্য: বিবলিওগ্রাফি ও রেফারেন্স

একটি লেখায় যে লেখাগুলির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উল্লেখ থাকে সেগুলির তালিকাকে বলে রেফারেন্স। আর যে লেখাগুলির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উল্লেখ থাকে না কিন্তু লেখক লেখাটি লেখার জন্য যে সকল বিষয় পড়াশুনা করেন বা ঘাটাঘাটি করেন এবং যার প্রচ্ছন্নতা বা প্রভাব লেখাটিতে বর্তমান থাকে তাকে বলে বিবলিওগ্রাফি। অনেক সময়ে কোন একটি বিষয় হয়ত প্রচ্ছন্নভাবেও লেখকের লেখায় উপস্থিত নেই কিন্তু লেখক যদি মনে করেন পাঠক সেই বইটি পড়লে বিষয়ভিত্তিক উপকৃত হতে পারেন, তাহলেও সেটিও তিনি বিবলিওগ্রাফিতে উল্লেখ করতে পারেন। ফলে একই লেখার শেষে পৃথকভাবে রেফারেন্স ও বিবলিওগ্রাফির তালিকা থাকতে পারে। রেফারেন্স বা সূত্র ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে যেখান থেকে লেখাটি লেখার ব্যাপারে সাহায্য নেওয়া হয়েছে পাঠককে প্রামাণিকভাবে সে লেখাটির উৎস সম্পর্কে অবগত করানো। একারণেই রেফারেন্স বা সূত্র হতে হবে নির্ভুল এবং সম্পূর্ণ যেন পাঠক তার প্রয়োজনে লেখাটির সূত্র ধরে মূল লেখাটি খুঁজে পেতে পারে। রেফারেন্স বা সূত্র ব্যবহারের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে লেখা কপি করার সমালোচনার দায় থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং আরেকজন লেখককে তার যথাযথ ও প্রাপ্ত সম্মান দেওয়া। পৃথিবীব্যাপী রেফারেন্স বা সূত্র ব্যবহারের বেশ কয়েকটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি আছে। যদিও এর মধ্যে প্রধানত দুটি পদ্ধতিকেই সার্বজনীনভাবে সারা পৃথিবীতে ব্যবহার করা হয়। এর একটি হচ্ছে হারভারড পদ্ধতি অন্যটি ভ্যাঙ্কুভার পদ্ধতি। এছাড়াও গবেষণার ক্ষেত্রে আরও দুটি পদ্ধতির ব্যবহার আছে তবে তা সীমিত আকারে। এর একটি এএমএ পদ্ধতি এবং অন্যটি এপিএ পদ্ধতি । তাহলে বিবলিওগ্রাফিতে এর লিংকটা হবে নিচের মত, Philipov, Dimiter and Jasilioniene, Aiva (2008). ‘Union Formation and Fertility in Bulgaria and Russia: A Life Table Description of Recent Trends’, Demographic Research, vol: 19, article: 62, pages: 2057-2114. কোন কোন ক্ষেত্রে দেখবেন লেখা আছে- Philipov, Dimiteret et al (2008). ‘Union Formation and Fertility in Bulgaria and Russia: A Life Table Description of Recent Trends’, Demographic Research, vol: 19, article: 62, pages: 2057-2114. এক্ষেত্রে Philipov, Dimiteret et al মিন করে, আরো এক বা একাধিক অথার ছিলেন যাদের নাম ঐ মুহুর্তে এভেইলেবল ছিল না l রেফারেন্স: American Psychological Association. (2003).

 

‘গ্রন্থ’ শব্দের সাথে ‘পঞ্জী’ শব্দ যোগ করে তৈরি হয়েছে ‘গ্রন্থপঞ্জী’। গ্রন্থ অর্থ বই পুস্তক ইত্যাদি এবং পঞ্জী ( বানানভেদঃ পঞ্জি, পঞ্জিকা) অর্থ বিবরণী। দুটো শব্দ একত্রে মিলে অর্থ দাঁড়ায় গ্রন্থের বিবরণী। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Bibliography’ এসেছে গ্রীক শব্দ Bibliographia থেকে। Biblion অর্থ বই এবং Graphia শব্দটির দ্বারা ‘লেখা’কে বোঝায়। উৎপত্তিগত দিক থেকে Bibliography শব্দের অর্থ বই লেখা। তবে পরবর্তীকালে শব্দটি দিয়ে বই সম্পর্কিত লেখাকে বোঝায়। তবে বর্তমানে এর ব্যবহারিক অর্থ আরও ব্যাপক ও আধুনিক।

 

গ্রন্থপঞ্জী কাকে বলে, এর সংজ্ঞা কী সে সম্পর্কে একাধিক মণীষী বিভিন্নরকম মন্তব্য প্রদান করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি হলঃ

জার্মান Bibliographer হলবার্ট বলেছেনঃ “Bibliography হলো একটি বিজ্ঞান যা সাহিত্য সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা করে”। পরে অবশ্য এই সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়। বলা হয় এটি ‘বই’ এর বিজ্ঞান।

  1. W. Gregg বলেন “কোন জিনিসকে পাবার জন্য বই পড়াই হল গ্রন্থপঞ্জী যা সাহিত্যের দলিল সম্পর্কিত প্রচার বিজ্ঞান”।

Girija Kumar এবং Krishan Kumar বলেন “Bibliography is an organized list of documents which is not limited to a particular collection” অর্থাৎ “গ্রন্থপঞ্জী হলো দলিলসমূহের সুসংগঠিত তালিকা যা নির্দিষ্ট গ্রন্থাগারের সংগ্রহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়”।

Dr. Hume এর মতে “Bibliography is the science of organizing written knowledge” অর্থাৎ “লিখিত জ্ঞান সংগঠনের বিজ্ঞানই হলো গ্রন্থপঞ্জী”।

মো. সা’দত আলী বলেন “প্রকাশনা জগতে যাবতীয় পাঠোপকরণ ও সহায়ক তথ্য সামগ্রীর সার্বজনীন তালিকার নাম গ্রন্থপঞ্জী”।

প্রখ্যাত গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞানী Louis Shores বলেছেন “হাতে লেখা হোক বা মুদ্রিত হোক অথবা অন্য যে কোনভাবে প্রণীত হোক না কেন, গ্রন্থপঞ্জী হলো মূলত সভ্যতার লেখা। যার অন্তর্ভুক্ত হবে বই, পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী, ছবি, মানচিত্র, পুঁথি অথবা ভাব বিনিময়ের যে কোন মাধ্যম। এসব লিখিত উপাদানের তালিকাকে যেমন গ্রন্থপঞ্জী বলা হয়, তেমনি এ তালিকা প্রণয়নের শিল্পরীতিকেও বলা যায় গ্রন্থপঞ্জী”।

 

 

এছাড়াও বিভিন্ন উৎস থেকে গ্রন্থপঞ্জী’র সংজ্ঞা পাওয়া যায়।

 

Encyclopedia of Library and information science এ রয়েছে-

 

“Everything which is a part of the book considered as a book is the concern of Bibliography”

 

UNESCO এর বর্ণনায় “গ্রন্থপঞ্জী হচ্ছে লিখিত বা প্রকাশিত বিবরণী সমূহের নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রকাশিত বর্ণনানুক্রমিক তালিকা”।

সার্বিক বিবেচনায় সহজে গ্রন্থপঞ্জী’র সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায় –

 

 “Bibliography is a scientific systematic listing of books”

এবং

“Bibliography is the art or science of description of the books”

 

 

সুতরাং বিভিন্ন মণীষীগণের মতামত থেকে আমরা বুঝতে পারি গ্রন্থপঞ্জী হল এমন একটি বিজ্ঞানসম্মত সুসংহত তালিকা যা বই, পাণ্ডুলিপি ও অন্যান্য প্রকাশনাসমূহকে এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে। এর মাধ্যমে কোন প্রকাশনার লেখক, শিরোনাম, প্রকাশক, প্রকাশনার স্থান, প্রকাশনার তারিখ, মূল্য, পৃষ্ঠাসংখ্যাসহ অন্যান্য তথ্য জানা যায়। এই বিজ্ঞানসম্মত তালিকা পুস্তক, পাণ্ডুলিপিসহ অন্যান্য পাঠোপকরণের পরিচয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ বা আংশিক বিবরণী প্রদান করে। তাই একে বইপত্রের জীবনচরিত বা জীবনীকোষও বলা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *