১৭ বছরে গোল করা কে এই মোরসালিন?
Sheikh Mursalin। Football। Goal। Bangladesh Football।
একটু খেয়াল করে দেখেন তো আপনার ফেসবুকের স্ক্রিনের একটি ছোট্ট গোলের ক্লিপ..
বসুন্ধরার বিপক্ষে বক্সের বাইরে থেকে আগুনে এক শট ১৬ বছর বয়সি এক মিডফিল্ডারের। প্যারেন্ট ক্লাবের বিপক্ষে শেখ মোরসালিনের এ গোল তাকে এনে দিয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রে।
শেখ মোরসালিন ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং চরভদ্রাসন উপজেলার আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন স্থানীয় টুর্নামেন্ট মাধ্যমে খেলা শুরু করেন। ২০১৪ সালে যখন চরভদ্রাসনে অনূর্ধ্ব-১২ জাতীয় ফুটবল দলের ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হয়, তখন মোরসালিন অভিজ্ঞ কোচ আবুল কাশেম ভোলের নজরে পড়েন। তবে পারিবারিক সমস্যার কারণে মোরসালিন মূল শিবিরে যোগ দিতে পারেননি। ২০১৫ সালে তার চাচা সুবাহান রহমানের সহায়তায় মোরসালিন কর্মজীবনে পুনরায় শুরু হয়, কারণ বাফুফে যুব ফুটবল কোচ আব্দুর রাজ্জাক একটি ট্রায়ালের সময় তার সম্ভাবনা দেখেছিলেন এবং মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত একটি যুব টুর্নামেন্টের জন্য তাকে অনূর্ধ্ব-১৩ জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
২০১৬ সালে মোরসালিন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ভর্তি হয়, তিনি যেখানে ২০২০ সালে ৯ম বাংলাদেশ গেমস সহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টে বিকেএসপির ফুটবল দলের হয়ে খেলার সময় তার শিক্ষা অব্যাহত রাখেন। টুর্নামেন্ট চলাকালীন মোরসালিন সাতক্ষীরা ফুটবল দলের বিপক্ষে একটি উল্লেখযোগ্য স্কোরও পরিচালনা করেন। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ২০১৯-২০ ঢাকা তৃতীয় বিভাগ লিগ বিলম্বিত হওয়ার পর, বিকেএসপি মোরসালিনকে আলমগীর সমাজ কল্যাণ কেএস- এ স্থানান্তরের ব্যবস্থা করে, কারণ ক্লাবটি ২০২১ সালে বিলম্বিত লিগ মৌসুমে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধিত হয়েছিল। তার প্রথম বছরে ঘরোয়া ফুটবল খেলার সময়, মোরসালিন তার ক্লাবকে লিগ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উন্নীত করার জন্য নির্দেশনা দেন এবং ১৬ ম্যাচে ১৮ গোল করে সর্বোচ্চ স্কোরার হিসেবে মৌসুম শেষ করেন।
তার ঠিক ১১ মাস পর আবারও বসুন্ধরা মুখোমুখি মোহামেডানের। এবারও আলোচনায় সেই শেখ মোরসালিন। তবে এবার তার ক্লাব গেছে বদলে। কোচ অস্কার ব্রুজন হয়তো সেদিনই বুঝে গিয়েছিলেন, একে আর ধারে রাখা উচিত হবে না। তাকে ফেরানো হলো এক মৌসুমের চুক্তি শেষেই। তিনি ফিরলেন। মোহামেডানের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও বসুন্ধরা যে ম্যাচটা জিতল কিংস অ্যারেনায়, সেটা তো তার বদৌলতেই! তার বুদ্ধিদীপ্ত দুটো অ্যাসিস্টই যে গড়ে দিয়েছিল ম্যাচের ভাগ্য!
মোহামেডানে যত সুযোগ পাচ্ছিলেন, বসুন্ধরা কিংসে এসে সে সুযোগটা খানিকটা কমে গিয়েছিল। পুরো মৌসুমে সব মিলিয়ে খেলেছিলেন ৩২০ মিনিটের মতো সময়। তবে আলো কাড়ছিলেন ঠিকই। সে রোশনাই যেন পূর্ণতা পেল শেষ দুই ম্যাচে এসে। বসুন্ধরা কিংসের লিগ নিশ্চিত করার ম্যাচে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের ম্যাচে করলেন এক গোল, করালেন আরও একটি। এরপর সাবেক ক্লাব মোহামেডানের বিপক্ষে দুই গোল করিয়ে জেতালেন বসুন্ধরাকে।
শুধু অ্যাসিস্টেই চোখ জুড়ানোর কাজটা সারেননি তিনি। দরিয়েলতনের অনুপস্থিতিতে রবসন রবিনহো মোহামেডানের বিপক্ষে খেলছিলেন খানিকটা ওপরে। আক্রমণের দায়িত্বটা পড়েছিল সদ্য কৈশোর পেরোনো মোরসালিনের কাঁধে। ত্রেকোয়ার্তিস্তার ভূমিকাটা তিনি পালন করেছেন দারুণভাবেই, মাঝমাঠ পেরোলেই তার সরব উপস্থিতি নজর কাড়ছিল বারবার।
মোরসালিনকে অনূর্ধ্ব-১৮ ক্লাব ফুটবলের জন্য এনেছিল কিংস। কিছুদিনের মধ্যে এই তরুণ নিজেকে চেনান। কিন্তু কিংসের মূল দলে তারকার ভিড়ে জায়গা পাচ্ছিলেন না। গত প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে বেঞ্চে কাটানো মোরসালিনকে দ্বিতীয় পর্বে ধারে মোহামেডানে খেলতে দেয় কিংস। খেলার সুযোগ পেয়ে গত লিগের দ্বিতীয় পর্বে কিংসের বিপক্ষেই দূরপাল্লার এক শটে গোল করে বসেন মোরসালিন। সেই গোলেই কিংসকে ১-১ গোলে রুখে দেয় মোহামেডান। এই গোলের পরই মোরসালিন আলোচনায় চলে আসেন।
এবার ঘরোয়া মৌসুমে বিশেষ এক দক্ষতার জন্য নজর কাড়েন মোরসালিন। দূরপাল্লার শটে আচমকা গোলকিপারকে ভড়কে দিয়ে গোল আদায় করে নিতে বেশ পারদর্শী তিনি। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকেও এমন একটা চেষ্টা ছিল।
সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ ২০২৩ এর জন্য যখন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচ হাভিয়ের ফের্নান্দেস কাবরেরা ৩৫ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেন। ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়ায় ঐ দলে মোরসালিনের জায়গা হয়নি। কিন্তু বসুন্ধরা কিংসের দুজন খেলোয়াড় সাদ উদ্দিন ও মতিন মিয়া চোটের কারণে ইনজুরি হয়ে ৩৫ সদস্যের স্কোয়াড থেকে ছিটকে যায়।তাই পরবর্তী ৩০ সদস্যের স্কোয়াডে মোরসালিনকে রাখা হয়।[৮] জুন মাসের ফিফা আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলী ম্যাচে ১৫ জুন ২০২৩ তারিখে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে জামাল ভূইয়ার পরিবর্তে হিসেবে ৭০ তম মিনিটে মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছে মোরসালিন।
২৫ জুন ২০২৩ তারিখে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের তৃতীয় ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে তার আন্তর্জাতিক প্রথম গোল করেন।
মোরসালিনকে একজন বহুমুখী খেলোয়াড় হিসেবে দেখা হয়, এমন একজন যিনি একজন স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতে পারেন, অথবা একজন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে, এবং যদিও গতির অভাব, তার কারিগরি ড্রিবলিং তাকে একটি সম্পদ করে তোলে।
মোরসালিন প্রকাশ করেছেন যে তিনি ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনের খেলার ধরন অনুসরণ করার চেষ্টা করেন। তিনিব্এ কটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন যে বিকেএসপিতে থাকাকালীন তিনি নিয়মিত বেলজিয়াম মিডফিল্ডারদের ভিডিও অনলাইনে দেখেন। মোরসালিনের দূরপাল্লার গোল করার ক্ষমতাও রয়েছে, যা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তার অভিষেক মৌসুমে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে গোল করার পর প্রমাণিত হয়েছিল। মোহামেডান এসসি- তে তার লোন স্পেলের সময় ডান-পায়ের মোরসালিন প্রধানত সৃজনশীল মিডফিল্ডার হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।