ছোট গল্পসাহিত্য

স্বাধীন আবাস (২য় অংশ)

 

আঁকাবাঁকা  সিঁড়ির ও প্রান্তে দখিন হাওয়ার মস্ত  বড় খোলা বারান্দা খুঁজে পেল মেঘা। আসলে এটা কে কি বারান্দা বলা যায়? বারান্দা কি সাধারণত এতটা বড় হয়? বারান্দার চারপাশে ঘেরাও করা ফুলের টব। যেন পুরো বারান্দাকে সাত রঙা রঙের বর্ডারে  আবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চারপাশের এ টবের  বর্ডার এর পরও এখনো অনেকটা জায়গাই সত্যিকারের বারান্দার জন্য ফাঁকা পড়ে আছে।  অবশ্য এত খোলামেলা লাগার বড় কারণ এখানে কোন দেয়ালের অস্তিত্বই নেই । পুরোটাই থাই জানালায় ঘেরা। একদম ছাদ থেকে মেঝে পর্যন্ত। বারান্দার এ মেঝেতেও  সেই নরম ঘাসের মতো কার্পেট। এর ওপর  দাঁড়িয়ে থাকাতেও যেন কেমন মোলায়েম আর স্নিগ্ধতার একটা ব্যাপার আছে। এতক্ষণ খেয়াল করে নি মেঘা হঠাৎ খেয়াল করলো এখানেও বাচ্চা। একটা ছোট বাচ্চা বারান্দার কোণায়, এ নরম ঘাসের কার্পেটে শুয়ে বই পড়ছে। ম্যাচিং করা সবুজ ফুলহাতা গেঞ্জি আর সবুজ হাফপ্যান্ট পরা বাচ্চাটি এতক্ষণ একদম মিশেছিল কার্পেটের সাথে। ওপাশ থেকে কাত এপাশ ফেরাতে এতক্ষণে মেঘার দৃষ্টিগোচর হলো।

 

বাচ্চাটির ঠিক পিছনেই মেঘা আরেকটা জিনিস খেয়াল করল। বারান্দার কোণায়  আরও একটা সিঁড়ি এঁকেবেঁকে উপর দিকে উঠে গিয়েছে। বাচ্চাটিকে পাশ কাটিয়ে এ সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হতেই-

– আফামুনি, আফনে এই হানে? তাই তো কই, আফামনি গেল কই…

ঘুরে তাকাল মেঘা। বারান্দার দরজা ধরে, ট্রে হাতে, ঝকঝকে সাদা দাঁতের হাসি মাখা মুখ দেখতে পেল সে। মাটি ভাই। এ বাড়িতে আসার পর গেট দিয়ে ঢোকার সময় সর্বপ্রথম এ মাটি ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছিল মেঘার। পাহাড়ের মতো গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার ঐভাবে সুঠাম পাহাড়ের মত দাঁড়িয়ে থাকা বা তাঁর প্রকাণ্ড স্বাস্থ্যের জন্য তাকে দেখে ভয় পেয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও কোনো ভাবেই তাকে দেখে কেউই ভয় পাবেনা বোধহয়। তার এ জাহাজের মত দেহটার মাঝে ভয় পেয়ে যাবে কেউ এই ব্যাপারটাই নাই। কেমন নিষ্পাপ, এক গোবেচারা চেহারা আর সেই সাথে ঝকঝকে সাদা দাঁতের হাসিমাখা মুখ। থলথলে এ শরীরটাকে দেখে আর তার হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে কেউ ভয় পেতেই পারে না। তার সেই নিষ্পাপ হাসি মাখা মুখ শুধু সমগ্র মুখেই না সারা শরীরে ধরে রেখে বলেছিল –

READ MORE:  ফেসবুকে বিভিন্ন লেখকের দারুন ২০ টি গল্পের লিংক

 

– আফনে মেঘা আফামুনি না? আমগর স্বাধীন ভাইজানরে বিয়া করবার আইছেন না?

 

এমন অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দেওয়া প্রশ্ন শুনে অন্য সময় হলে মেঘা নির্ঘাত রেগে যেত। কিন্তু যখন বোঝা যাবে কেউ নিষ্পাপ মনে আর অত্যন্ত গোবেচারা একজন এমন থলথলে হাসিমাখা মুখ নিয়ে প্রশ্নটি করেছে তখন কোনোভাবেই রেগে ওঠা যায় না। তার সাথে তাল মিলিয়ে মেঘা বললো-

 

– না। তুমগর স্বাধীন ভাইজানকে বিয়ে করতে আসি নি আমি। মেঘার মুখে দুষ্টু মিষ্টি হাসি।

– তুমগর বাড়িটা দেখতে এসেছি। শুনেছি তুমগর বাড়িটা নাকি অনেক সুন্দর? দেখাবে আমাকে তুমগর বাড়ি?

 

 

চলবে..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *