রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা
পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ । আর কেউ যদি সঠিকভাবে পুরো রমজান মাসজুড়ে রোজা পালন করতে পারে তাহলে তার পুরস্কার আল্লাহতালা সেই বান্দাকে নিজ হাতে দিবেন। কিন্তু আমাদের কিছু অসতর্কতা বা না জানার কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ রোজা ভেঙে যেতে পারে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে । চলুন জেনে নেই রোজা ভঙ্গের কারণ ও মাকরূহ হওয়ার কারণগুলো। রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজা ভঙ্গের কারণ:
১. ইচ্ছা করে বমি করা রোজা ভঙ্গের কারণ
২. বমির বেশির ভাগ মুখে আসার পর তা গিলে ফেলা
৩. মেয়েদের মাসিক ও সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব
৪. ইসলাম ত্যাগ করলে
৫. গ্লুকোজ বা শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা সেলাইন দিলে
৬. প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করালে
৭. রোজাদারকে জোর করে কেউ কিছু খাওয়ালে
৮. ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে
৯. মুখ ভরে বমি করলে
১০. ভুলবশত কোনো কিছু খেয়ে, রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছা করে আরও কিছু খেলে
১১. বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা খেয়ে ফেললে
১২. কান বা নাক দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করালে
১৩. জিহ্বা দিয়ে দাঁতের ফাঁক থেকে ছোলা পরিমাণ কোনো কিছু বের করে খেয়ে ফেললে
১৪. অল্প বমি মুখে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেললে
১৫. রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় অজুতে কুলি বা নাকে পানি দেয়ার সময় ভেতরে পানি চলে গেলে। (ফাতাওয়ায়ে শামি ও ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)। রোজা ভঙ্গের কারণ
কিছু মাসআলা যেসব আমাদের জীবনে গুরুত্ববহ-
মাসআলা : ১- খাওয়া বা পানাহার করার সময় যদি বুঝা যায় যে, আজানের সময় হয়েছে, তাহলে মুখের খাবার বা পানীয় বের করে ফেলতে হবে, যদি কেউ ইচ্ছা করে তা গিলে ফেলে তাহলে তার ঐ রোযা বাতিল বলে পরিগণিত হবে এবং তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। রোজা ভঙ্গের কারণ
মাসআলা : ২- ভুল করে কিছু খেলে বা পান করলে রোযা বাতিল হবে না। রোজা ভঙ্গের কারণ
মাসআলা : ৩- ইনজেকশন বা সেলাইন দেয়ার কারণে রোযা বাতিল হবে না, অনুরূপভাবে স্প্রে মুখে প্রবেশ করানো, চোখ ও কানের ড্রপ ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের কারণে রোযা বাতিল হবে না।
মাসআলা : ৪- দাঁতের ফাঁকে থাকা খাদ্যকনা ইচ্ছে করে গলাধকরণ করার কারণে রোযা বাতিল হবে না।
মাসআলা : ৫- রোযাদার ব্যক্তিকে ফজরের আজানের আগে খিলাল করা জরুরী নয়, কিন্তু যদি বুঝা যায় যে, সে কারণে দাতের ফাঁকে থাকা খাদ্যকনা গলায় প্রবেশ করতে পারে তাহলে দাঁত ব্রাশ করা জরুরী।
মাসআলা : ৬- মুখের ভিতর জমা থুথু ইচ্ছে করে গলাধকরণ করার কারণে রোযা বাতিল হবে না। রোজা ভঙ্গের কারণ
মাসআলা : ৭- কাশ বা কফ গলার মধ্যে থাকা অবস্থায় গিলে ফেলার কারণে রোযা বাতিল হবে না; তবে যদি তা গলার উপরে মুখের ভেতর চলে আসে, তাহলে এহতিয়াতে মুস্তাহাবের ভিত্তিতে তা গিলে ফেলা উচিত হবে না।
মাসআলা : ৮- কোন রোযাদার ব্যক্তি যদি অত্যধিক তৃষ্ণার্ত হয় এবং এমন পর্যায়ে যায়, যে কারণে (তার ভয় হয় যে) পানি পান না করলে সে মারা যেতে পারে বা অনেক সমস্যা হতে পারে; তাহলে তা থেকে বাঁচার জন্য নুন্যতম পানি পান করা তার জন্য ওয়াজিব; কিন্তু রোযা বাতিল হয়ে যাবে; তবে যদি রমজান মাস হয়, তাহলে এহতিয়াতের ভিত্তিতে তারপর কিছু খাওয়া বা পান করা যাবে না এবং ইফতার পর্যন্ত সেভাবেই থাকতে হবে।
মাসআলা : ৯- রোযা থাকা অবস্থায় খাদ্য চিবিয়ে বাচ্চা বা পাখিকে দেয়া অথবা রান্না করা খাদ্যের সাধ বুঝার জন্য তা চেখে দেখা ও অনুরূপ যেসব কাজে খাদ্য বা পানীয় গলার ভিতর প্রবেশ করে না, তাতে অসুবিধা নেই; যদিও ঘটণাক্রমে ঐ পদার্থ গলার ভিতর প্রবেশ করে থাকে; কিন্তু যদি আগে থেকে জানা থাকে যে, গলার ভিতর প্রবেশ করবে তাহলে তা করা যাবে না এবং তখন তা করার ফলে যদি গলার ভিতর প্রবেশ করে, তাহলে রোযা বাতিল হয়ে যাবে; তখন তার কাজা আদায় করতে হবে এবং কাফ্ফারাও দিতে হবে।
মাসআলা : ১০- দূর্বলতার কারণে রোযা ভাঙ্গা যাবে না, কিন্তু যদি দূর্বলতা এমন পর্যায়ের হয় যা সহ্যাতীত হয়ে পড়ে, তাহলে ভাঙ্গা যাবে।