ছোট গল্পসাহিত্য

রহস্যময় পলাশকুড়

সদ্য বিয়ে করেছে আলিফ আর মুনিবা। দুজনেই আগে থেকেই পরিচিত। বলতে গেলে প্রেমের বিয়ে তাদের। গতমাসে পরিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেয়া হয় তাদের। পেশায় আলিফ একজন ডাক্তার  আর মুনিবা অনার্স শেষ করেছে। নতুন দম্পতি এখনো হানিমুনে যেতে পারে নি লকডাউন এর জন্য কিন্তুু আলিফ তো সরকারি চাকুরী করে আর যেহেতু পেশায় ডাক্তার তাই তার ছুটি নেই বললেই চলে। আজ সে মুনিবাকে নিতে এসেছে বাবার বাসা থেকে। কারণ ইতিমধ্যেই আলিঔের বদলি হয়েছে শহর থেকে একটু দূরে গ্রাম সাইডে। প্রথম দিকে একা যেতে চাইলেও পরে পরিবার থেকে চাপ দেয়ায় মুনিবাকেও সাথে নিতে রাজি হয়েছে সে।

 

মুনিবা ভীষণ শান্ত স্বভাবের একটি মেয়ে। দেখতে অপরূপ সুন্দরী বাঙালি নারী। চুল দীঘল কালো, ঘন আর লম্বা হাটুর কাছাকাছি। চোখ দুটো টানা টানা,, দেখে মনে হয় কেউ একে দিয়েছে। গোছগাছ শেষ করে হাসি মুখে সবাইকে বিদায় দিয়ে আলিফের সাথে সে রওনা দেয় নতুন সংসারের উদ্দেশ্যে।

 

সকাল ১০ টায় ট্রেন তাদের। আলিফ মুনিবাকে বলছে তুমি শহরের মেয়ে গ্রাম সাইডে পোস্টিং হয়েছে বলে তোমাকে নিতে চাই নি,, তোমার কষ্ট হবে বলে। মুনিবা হেসে বলল আরেহ কি যে বলো না,, গ্রাম আমার ভালই লাগে। আর তোমার সাথে থাকব এটাই অনেক। তোমার থেকে দূরে থাকলে ভালো লাগতো না। যথাসময়ে ট্রেন এলো। তারা ট্রেনে উঠল। ২ ঘন্টা পর তারা মাধবপুর ষ্টেশন এ নামল। তারপর একটা বাসে উঠল সেখান থেকে কেশব পুরে নামল। এরপর রেলগাড়ী ছাড়া আর কোনো মাধ্যম নেই পলাশকুড় গ্রামে যাওয়ার। কিন্তু পলাশকুড় নাম শুনতেই চালকরা কেমন না যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতে লাগল। তবুও ডাক্তার মশায় গন্য মান্য ব্যাক্তি তাকে ত বা বলা যায় না তাই একরকম বাধ্য হয়েই নিয়ে গেলো।

READ MORE:  হাসানের একদিন

 

১ ঘন্টা পর তারা তাদের গন্তব্য এ এসে পৌঁছাল। একজন ডাক্তার হিসেবে তাকে যতটা আলিশান বাড়ি দেয়ার কথা তেমন কিছুই দেয়া হয় নি।

অনেক আগের পুরোনো একটা বাড়ি দেয়া হয়েছে থাকার জন্য। গ্রামটা বড়ই নির্জন। খুব বেশি ও মানুষজন ও নেই বোধ হয়।আলিফের একটু মন খারাপ হলো। মুনিবা তাকে বলল মাএ ৬ টা মাস দেখতে দেখতে কেটে যাবে। চিন্তা করো না।

কাজের জন্য একজন লোক দিয়েছে সরকার থেকেই। রোগী দেখার ঘরটা বাড়ির সামনেই তাই আলিফ একটু শান্তি পেলো যে মুনিবার তাহলে একা ফিল হবে না।

এভাবে বেশ কিছুদিন বেশ ভালই গেলো। গ্রামের মানুষজন খুব ভালো। মুনিবাকেও সবাই বেশ পছন্দ করে। আচার এনে দেয় আরো কতকিছু। কিন্তু পুরোনো বাড়িটার প্রতি যেনো সবারি একটা ভয় মুনিবা এটা অনেকবার খেয়াল করেছে। আলিফ কে বললে আলিফ হেসেই উড়িয়ে দেয়।

অনলাইন ইনকাম , ঘরে বসে মাসে আয় করুন 1000 ডলার

 

একদিন সন্ধ্যা বলে মুনিবা বারান্দায় বসে চা খাচ্ছে  আর আলিফ কি জানি কাগজপাতি দেখছে হঠাৎ রান্না ঘর থেকে আওয়াজ পায় মুনিবা। দৌড়ে সেখানে গেলে কিছু দেখতে পায় না। বিড়াল ভেবে সে আর কথাটা আলিফকে বলে না। পরের দিন আলিফ ডিউটিতে গেলে

মুনিবা দরজায় নক করার শব্দ পায়,, গেট খুলে দিলে আর কাউকে দেখতে পায় না। এবার মুনিবা একটু ভয় পেয়ে যায়। মুনিবা গোসল করতে গেলে কার জানি বিকট  হাসির শব্দ পায়। অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে মুনিবা। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে সে দেখে আলিফ তার মাথায় হাত বুলায় দিচ্ছে। সে আলিফকে সবটা বলে।

 

আলিফ চিন্তিত হয়ে পড়ে। পরে সে গ্রামের কিছু মুরব্বিদের সাথে কথা বলে। তারা বলে বহুকাল আগে এ বাড়িতে একটা মেয়ে আত্নহত্যা করে তারপর থেকে এ বাড়িতে কেউ এসে থাকতে পারে না। তোমরাও চলে যাও নাহলে বড় ক্ষতি করে দিবে তোমাদের। আলিফ বিশ্বাস করে না ভুত প্রেতে। তাই সে ওসব মাথায় নেয় না।

READ MORE:  হে পৃথিবী

 

কিছুদিন পর আলিফ মুনিবার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করে। মুনিবা কার সাথে জানি কথা বলে। মাঝে মাঝে একা একা কান্না করে আবার হাসে। চিৎকার ও করে অনেক সময়। কিন্তু ওকে জিজ্ঞাসা করলে বলে কই না ত। মুনিবার শরীর ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে। আলিফ ও এখন মাঝে মাঝেই বিকট আওয়াজ শুনতে পায়। একদিন আলিফ এক হুজুরকে বাসায় আনে।

হুজুরকে দেখে মুনিবা দৌড়ে পালায়। হুজুর সেটা লক্ষ্য করে। তারপর হুজুর বলে ডাক্তার সাহেব আপনারা যত তাড়াতাড়ি পারেন চলে যান এখান থেকে। ঐ খারাপ আত্না আপনার বউ এর উপর ভর করতে চাচ্ছে। আপনার বউ অনেক সুন্দরী সেটা সে মেনে নিতে পারছে না। আপনাদের সুখী দাম্পত্য জীবন সে সহ্য করতে পারছে না।আলিফ বলল কিন্তু কেনো?

তখন হুজুর বলল বহুকাল আগে আপনাদের মতো স্বামী স্ত্রী এখানে এসেছিল। তারাও সুখী ছিল কিন্তু স্বামীটা অন্য একটা মেয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে নিজের বউকে মেরে ফেলে আত্মহত্যার নাম দেয়। তারপর থেকেই ঐ আত্মা এই বাসায় ছটফট করছে কাউকে থাকতে দেয় না। নিজের স্বামী আর ঐ মেয়েকেও মেরে ফেলে।

আপনার বউকে আমি তাবিজ দিচ্ছি সব ঠিক হয়ে যাবে আপনারা আজি চলে যান। আলিফ আর কিছু ভাবে না মুনিবাকে নিয়ে নিজ বাসায় রওনা দেয়। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা করছিল মুনিবা এখন সে সুস্থ হয়ে গেছে। তারা আবার সুখে থাকতে লাগল। দেড় বছর পর তাদের ঘরে ফুটফুটে  কন্যাসন্তান হয়েছে। আর ঐ পুরোনো বাড়িতে কখনো কেউ থাকে নি…

লেখক,

মোছা.সাবরিনা মমতাজ মম

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *