রবীন্দ্রনাথঃ কিশাের জীবনী – বই রিভিউ
©বই পরিচিতঃ
রবীন্দ্রনাথঃ কিশাের জীবনী
লেখকঃ হায়াৎ মামুদ
মহৎ প্রতিভার আর্বিভাৰ সৰ দেশের ও জাতির জীবনে একবাঞ্ছিত, স্মরণীয় মুহূর্ত। তারা নতুন যুগের বাণী দূত। তাদের ধ্যান-দৃষ্টিতেই উন্মােচিত হয় সত্যের পথ,জাতি অনুপ্রাণিত হয় উজ্জীবন মদ্রোবাঙালি মনীষার তেমনি এক আশ্চর্য প্রকাশ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তিনি সুপ্তিমগ্ন জাতির কান্ডসের গান,জড়তাগ্রস্ত জীবনের গতির ছন্দ, আমাদের অহংকার, অামাদের প্রেরণা, আমাদের সমৃদ্ধি খন্ডকালের হয়েও তিনি সর্বকালের, বিশেষ দেশের হয়েও সবদেশেই তার সাদর প্রতিষ্ঠা। সত্য,সুন্দর, কল্যাণ এই তিন বিশ্বজনীন বােধের ওপর তার যে সৃষ্টিকর্ম প্রতিষ্ঠিত তার সহজবােধ্য বর্ণনা ও বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন এসময়ের অন্যতম দেশবরেণ্য কবি হায়াৎ মামুদ,তার রচিত রবীন্দ্রনাথ কিশাের জীবনী’ বইয়ে।
আলােচ্য বইয়ে লেখক সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন কবিগুরুর জীবনের খুটিনাটি সকল বিষয়বস্তু। রবিঠাকুরের শৈশব, কৈশাের, জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে বেড়ে ওঠার দিনগুলাে, তার প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যার্জনের বৃথা চেষ্টায় অতিবাহিত শিক্ষাজীবন,পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে হিমালয় দর্শন,বাল্যকাল পেরিয়ে যৌবনে পদার্পণ ও বিলেত গমন,জমিদারি তদারকি ও গ্রাম বাংলা দর্শনের মাধ্যমে প্রকৃতির সৌন্দর্যে, উপজীব্য নিজেকে অবগাহন, তার নােবেল প্রাপ্তি ও পরবর্তী বিভিন্ন সংবর্ধনা সমাবেশের বিবরণ, বিভিন্ন সময়ে ইউরােপ সফরের স্মৃতিচারণের পাশাপাশি কিছু ব্যক্তিগত পত্রের অংশবিশেষ উপস্থাপন, ব্যক্তিগত বহুবিধ বিচিত্র বিষয়,আনন্দ, প্রিয়জন বিয়ােগের শােক প্রভৃতি সকল বিষয়ের পরিপূর্ণ সময় বইটিকে অন্য পাঁচটি বই থেকে পৃথক করেছে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিশ্বকবির সাথে আলবার্ট আইনস্টাইন,কবি কাজী নজরুল ইসলাম,রমা ঝলা, ডব্লিউ বি ইয়েটস সহ অসংখ্য বিশ্ববরেণ্য মনিষীদের সাক্ষাতের উল্লেখ আছে বইয়ের বিভিন্ন অংশে। আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর গবেষণার জন্য অর্থ জোগাড়, শান্তিনিকেতন, বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে কবির প্রচেষ্টা পাঠকদের তঁার প্রতি শ্রদ্ধাবনত হতে বাধ্য করবে।
আলােচ্য বইটিতে কবির জীবনপ্রবাহের পাশাপাশি তাঁর সাহিত্য সাধনার বিস্তৃত বর্ণনা পাওয়া যায়। কাল পরিক্রমায় তার রচিত ছােটগল্প, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা,আত্নজীবনীমূলক লেখনী, ভ্রমণ কাহিনী, গান,উপন্যাস ইত্যাদির পাশাপাশি তার ছবি আকা,অভিনেতা ও গায়ক সত্ত্বার পরিচয় পাওয়া যায় বইটিতে যা পাঠককে বিস্মিত করবে। এছাড়াও ‘ধুমকেতু’পরিচয়’, ‘সবুজপত্র’, ‘সাধনা’ প্রভৃতি পত্রিকার প্রকাশের প্রেক্ষাপট ও রবীন্দ্রনাথের লেখনির সুস্পষ্ট বিবরণ বইটিতে রয়েছে। পরিবারের সকলের প্রতি দায়বদ্ধতা, অতিথিপরায়ণতা ও সকল পরিস্থিতিতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ়চেতা মনােভাবই তাকে আলাদা ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। যেকোনাে কৌতূহলী পাঠক কবির জীবনপ্রবাহ নিয়ে কৌতূহল মেটাতে ও নতুন অনুভূতির স্বাদ পেতে
বইটি পড়তে পারেন। লেখক যেমন কবিগুরুকে ভালােবেসে বইটিতে বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্রের জীবনের ঘটনাপ্রবাহ স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করেছেন তেমনি রবিঠাকুরকে ভালােবেসে বইটি পড়লে পাঠকের সামনে অসামান্য প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব নিয়ে নবরূপে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আবির্ভূত হবেন যা পাঠককে বাঙালি হিসেবে, রবীন্দ্রপ্রেমি ও রবীন্দ্রপাঠক হিসেবে গর্বিত করবে।
লেখক,
সুলতান রওনক