বদ জ্বীনের গল্প – শেষ পর্ব
#মা
আজ খুব ভোরে ফজরের পর হাঁটতে বের হই। হাঁটতে হাঁটতে বাবুল মিয়ার বাড়ির সামনের কবরস্থানের কাছে চলে আসি। হঠাৎ একটা দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে যাই। বুক ধপফর করে ওঠে।
দেখি একটা কবরের সামনে সাদা কাপড় পরা কেউ একজন তসবিহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুরুদুরু বুক নিয়ে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম পারভীন ভাবী। ডাক দিয়ে বললামঃ ভাবী এখানে কি করেন?
পারভীন বেগম দোয়া শেষ করে এসে বলেঃ ফাহিমের কবরটা একটু জিয়ারত করলাম। কিছু দোয়া কালাম পড়েছি। আত্মহত্যা করলে নাকি মানুষ জাহান্নামে যায়। তাই আল্লাহর কাছে ওর নাজাতের লাইগা দোয়া করলাম।ঘরের কাছেইতো বাপটার কবর। সবসময় আসিনা। কিন্তু মনটা মানেনা। তাই আজ বাপটার কাছে আইসা দোয়া করলাম।পারভিন ভাবী কথাগুলো বলছে আর টপটপ করে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
বললামঃ আপনাদের এভাবে কবরস্থানে আসা ঠিক না। আর ছেলে মারা গেছে পাঁচ বছর হলো এখনও কাঁদছেন আপনি?
পারভীন বেগমঃ বাবারে আমি ওরে পেটে ধরেছি না? সারাক্ষণ আমার ফাহিমের কথা মনে হয়। কত বছর হইল বাপটার মুখ দেখিনা!
আমার জন্য কত কিছু কিনা আনত.. প্লেট,কাপ পিরিচ। আইসা বলতঃ মা মেহমান আসলে এগুলো দিয়া খানা দিও। আমার বাপের জিনিস তো এখনো আছে, খালি আমার বাবাটা নাই। আমার বাপের এই জিনিসগুলোর দিকে তাকাইলে বুকটা ফাইটা যায়। চুপচাপ করে কাঁদি।
পারভিন ভাবি আমাকে সন্তানের মতই জানে। তাই মাঝে মধ্যে দেখা হলে মনের কথা গুলো বলে।জিজ্ঞেস করলামঃ মহীনের কি অবস্থা?
পারভীন বেগমঃ এখন ভালো আছে। সমস্যাটা কেটে গেছে।
তবে ফাহিমের মৃত্যুর পর থেকে কে জানে প্রতিদিন ফজরের সময় ঘরের দরজায় টোকা দিয়ে যায়। সারা ঘর কেঁপে ওঠে।শুধু ফজরের সময়ই তিনটা টোকা দেয়।
(সমাপ্ত)
লেখকঃ জোনাইদ হোসেন
পেশাঃ সাংবাদিক