বদ জ্বীনের গল্প -পর্ব -৩
#ফাহিম কোথায়?
এভাবেই দিন যেতে থাকে। মাহিন ফাহিমের খাবার নিয়ে দ্বন্দ্বও বাড়তে থাকে। ওদিকে মাহিন কেউ খেলো কি খেলো না সেদিকে তোয়াক্কা না করে খাবারের মাত্রা বাড়াতেই থাকে। কোনো বেলায় কম খাবার খেলে একা একা কান্না করে, মন খারাপ করে বসে থাকে।
একদিন ফাহিম কাজ থেকে ফিরে সবার সাথে খেতে বসে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল না। তাই বাজার সেদিন একটু কম হয়েছে। পারভিন সবাইকে ভাত তরকারি দেয়। হঠাৎ করে মাহিন নিজ হাতে মাছের একটা টুকরো বেশি নিয়ে নেয়।ফাহিম সেটা তার পাত থেকে নিয়ে পাতিলে রেখে দেয়। আর বলেঃ এত খাস তোর লজ্জা নাই? সব তুইই খাবি? কাউরে কি কিছু খাইতে দিবিনা? সাথে সাথে মাহিন ঝোল মাখা ডান হাত দিয়ে ফাহিমকে এক চড় মারে।
ফাহিম সাথেসাথে খাবার রেখে উঠে চলে যায়।
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয় তার আর কোন খোঁজ মেলে না। চারদিকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। ফাহিম আজ কাজে যায়নি তাই কাজের দোকান যাবে না সে। পারভিন ও বাবুল এদিক-ওদিক তার সাথীদের বাসায় খুঁজতে যায়। মাহিনকে পাঠায় দোকানে বসে টিভি দেখে কিনা দেখে আসতে।
অনেক খোঁজাখুঁজি করে ফাহিমকে না পেয়ে বাড়ি আসে পারভিন। বাড়ির উঠানে আসতেই চোখ কপালে উঠে যায়। বুক ধরফর শুরু করে। সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে দেখে একটি গাছের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে ফাহিম।ও বাবাগো! বলে পারভীন বেগম ঝুলন্ত ফাহিমের পা দুটি ওপরের দিকে ধরে থাকে।আর চিৎকার করে বলেঃ কে কোথায় আছেন, আমার ফাহিমকে বাঁচান। আমার ফাহিম গলায় ফাঁস দিছে।
পারভীনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। কিছুক্ষণ পরে বাবুল মিয়া আর মাহিনও আসে। একজন গাছে উঠে রশি কাটে। ফাহিমেকে ঘরে নেওয়া হয়। নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে সেগুলো জমাট বেঁধে গেছে। মারা গেছে ফাহিম।
পারভীন বেগম শুধু আহাজারি করেঃ এটা তুই কি করলি রে ফাহিম! বাবারে, কে তোরে গাছে উঠাইলো!! তুই তো গাছ বাইতে জানস না!! আমার মানিকরে, কেন তুই ফাঁস দিলি? এ কি করলি রে তুই বাবা!!! আমার মানিক রে…!! ফাহিমের ফাঁস দেওয়া সবাইকে বিস্মিত করে। সে নাকি গাছে উঠতে জানত না ঠিকমত। তাহলে ওই গাছ থেকে কিভাবে ফাঁস দিলো? যাইহোক রাতেই বাড়ির পাশের কবরস্থানে ফাহিমকে দাফন করা হয়।
লেখকঃ জোনাইদ হোসেন
পেশাঃ সাংবাদিক