চন্দ্রাবতী – কবিতা
চন্দ্রাবতী তুমি কেমন আছো?
বিশ্বাস করো আমি এখনো ক্ষণে অনুক্ষণে
তোমাকে দেখতে পাই।
গভীর ঘুমে যখন বিভোর,
তখন আমি অনুভব করি তোমার স্পর্শ।
আচ্ছা, তুমি কি এখনো খোঁপায় শাপলা পড়ো?
একবার তোমার জন্য ঝিলে শাপলা তুলতে
সে কি কান্ডই না ঘটে গেলো।
কতটা কাঁদলে তুমি আমার জন্য।
তখন বোধহয় তুমি অষ্টম শ্রেণি,
আর আমি দশম।
আমাদের গ্রামের পাশের কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো
এখন আর ততোটা লাল হয় না।
কেমন যেন অচেনা ধূসর রঙের মনে হয়,
তাছাড়া আমার চশমাটাও বেশ পুরোনো হয়ে গেছে।
কাঁচগুলো মনে হয় একটু বেশিই ঝাপসা দেখায়।
চন্দ্রাবতী তুমি কি তোমার নাতনিদের
ভূতের গল্প শোনাও আমাবস্যায়?
তুমি শুনে অবাক হবে,আমি আজও অমাবস্যা রাতে
একা বেড়াতে ভীষণ ভয় পায়।
তোমার গল্প শোনানোর ভঙ্গিমাটা আজও
আমার পিছু ছাড়েনি।
আমাদের প্রিয় রবীন্দ্র মাষ্টার
যে তোমাকে কলঙ্কবতী ডাকতো,
তাঁর সমাধির উপর একটা শিউলি গাছে
আজও সেই পোষা পাখিটা বসে থাকে।
ও আচ্ছা, তোমাকে তো বলাই হয়নি
বেশ কয়েক বছর হয়ে গেছে,
এক শ্রাবণ রাতে ফজলি আমে দুধ খেয়েছিলো।
সবাই ভেবেছিলাম একটু শান্তিতে ঘুমোচ্ছে,
কিন্তু এই ঘুমই যে শেষ ঘুম হবে কে জানতো।
আমারও না শ্রাবণ আসলে
ফজলি আমে দুধ খেতে ইচ্ছে করে ভীষণ।
শুধু তোমাকে একবার দেখার অপেক্ষায়,
খেতে পারিনা।
জানিনা তুমি এতোগুলা বছর পর
দেখতে ঠিক কেমন হয়েছো।
তবে আমার অনুভবে তুমি ঠিক
সেভাবেই রয়ে গেছো, চন্দ্রাবতী।
যখন তুমি হাঁসতে তখন তোমার গালের
টোল পড়া মুখখানি দেখতে পাই এখনো আমি।
আচ্ছা, তোমার কপালে সেই কালো দাগটা?
ইচ্ছে করে মারিনি আমি,তবুও ভীষণ পুড়েছি।
আমার না প্রায় সবকটা দাঁত পরে গেছে।
আর পছন্দের লাঠিটা যার উপর ভরসা করে
আমি এতোগুলা বছর পার করলাম,
সেটাও আজ খয়ে গেছে অনেকটা।
তবুও অনেক যত্নে রেখেছি।
এই তো আর কটা দিন, তার পর মাঘীপূর্ণিমা,
কৃষ্ণচূড়া তলে আমি থাকবো।
তুমি এসো,শুধু একবার দেখবো।
এতোগুলো বছর পর তুমি দেখতে ঠিক কেমন
হয়েছো,কতটা বদলে গেছো।
লেখক,নির্মল ঘোষড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড