ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণ
রাশিয়া কেনও ইউক্রেনে সৈন্য পাঠাল?
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মাঝে দ্বন্দ্ব কেনও? সম্প্রতি ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের ইচ্ছে পোষণ করছে ইউক্রেন। ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদান করা মানে হলো আমেরিকা এবং তার মিত্র ইউরোপের দেশগুলো যাদের সাথে রাশিয়ার বহুকাল থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসছে তাদের কাছে রাশিয়ার একটি বড় কৌশলগত পরাজয়। কারণ ন্যাটো সৈন্যরা যদি রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে অবস্থান করে, তাহলে তা হবে আমেরিকার রাশিয়ার কাঁধে নিঃশ্বাস ফেলার মতো। আর রাশিয়া এমনটি কোনোদিনও চাইবে না যে তার শত্রু আমেরিকা এবং তাদের মিত্র ন্যাটো অধিভুক্ত দেশগুলো তাদের সীমানার এত কাছে থাকুক। তাই রাশিয়া চায় ইউক্রেনকে দখলে নিতে। তবে ইউক্রেন রাশিয়ার এ বিরোধ এবারই নয়। ২০১৪ সালে রাশিয়া সামরিক অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে নেয়। এছাড়াও পূর্ব ইউক্রেনের আরও ২ টি শহর দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক তে রাশিয়া সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী ২০১৪ সাল থেকেই সক্রিয়। প্রায়ই এসব অঞ্চলে রুশপন্থী বিদ্রোহী এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়। পূর্বাঞ্চলের এ সকল এলাকায় রাশিয়া ইতিমধ্যে গোপনে ৭ লাখ পাসপোর্ট বিতরণ করেছে। যেন যুদ্ধ হলে বলতে পারে রাশিয়া যে তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্যই তারা পূর্বাঞ্চলে সামরিক অভিজান পরিচালনা করেছে। ২০১৪ সালের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল মিনস্ক শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ হলেও এসব এলাকায় সংঘর্ষ থামে নি। তাই পুতিন সরকার এবার শান্তি প্রতিষ্ঠার দোহাই দিয়ে ইউক্রেনে তাদের সৈন্য পাঠিয়েছে। ইউক্রেন সীমান্তের ১৬ থেকে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ইতিমধ্যে রাশিয়ান সৈন্যরা অবস্থান করছে। রাশিয়ার দাবি পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে ইউক্রেন সরকার। এই অভিযোগে তারা এখন পূর্ব ইউক্রেনে অভিযান চালিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। এছাড়াও আরও একটি ব্যাপার রয়েছে। ইউরোপের ২৫ শতাংশ গ্যাস সাপ্লাই দেয় রাশিয়া, যার অধিকাংশ লাইনগুলো ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে দিয়ে গমন করেছে। এ অবস্থায় যদি ইউক্রেন রাশিয়ার প্রভাব বলয় থেকে বাইরে বেরিয়ে যায় তবে রাশিয়া গ্যাস সাপ্লাইয়ের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ হারাবে।
২৪ তারিখ থেকে রাশিয়া আক্রমণ শুরু করেছে। পুতিনের দাবী তারা কোনো সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ চালাবে না। সাধারণ মানুষ নিরাপদেই চলাচল করতে পারবে।
ইউক্রেন কি চায়?
ইউক্রেন ও রাশিয়া দুইটি দেশই সোভিয়েত ইউনিয়ন এর অংশ ছিল। সেই সুবাদে ২ টি দেশের মাঝেই রয়েছে গভীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক। ইউক্রেনে রুশ ভাষা বহুল প্রচলিত। কিন্তু বিরোধের শুরু ২০১৪ সালে। ইউক্রেনে ২টি রাজনৈতিক ধারা রয়েছে। একদল পশ্চিমা মদদপুষ্ট আর অন্য দল রাশিয়ার বলয়ে রাজনীতি করে। সেই সময় রাশিয়া পন্থী প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একটি বড় বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব রাশিয়ার চাপে পড়ে নিষেধ করে দেয়। এতেই ক্ষেপে যায় ইউক্রেনের জনগণ। জনগণ বাণিজ্যচুক্তির পক্ষে ছিল। এ সুযোগে বিক্ষোভ দানা বেঁধে ওঠে। বিক্ষোভে মদদ দেয় পশ্চিমা দেশগুলো এবং তাদের ধারার রাজনৈতিক দলগুলো। এতে করে ইয়ানুকোভিচের পতন হয় এবং তিনি দেশত্যাগ করতে বাধ্য হোন। এই সুযোগে রাশিয়া ক্রিমিয়া দ্বীপ আক্রমণ করে বসে যা ২০০ বছর ধরে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৫৪ সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ তৎকালীন ইউক্রেন প্রজাতন্ত্রের কাছে ক্রিমিয়া হস্তান্তর করে যা রাশিয়া কোনোদিনই মেনে নেয় নি। ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে রাশিয়া ইউক্রেন দ্বন্দ্ব শুরু। এছাড়া ইয়ানুকোভিচের পর যারা ক্ষমতায় এসেছেন তারা সবাই পশ্চিমা মদদপুষ্ট ছিলেন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই বিষয়টি কখনও ভালোভাবে নেয়নি রাশিয়া। আর এবার যখন ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে চাচ্ছে তখন রাশিয়ার মাথা খারাপ হওয়ারই কথা। কারণ ন্যাটোতে যোগ দিলে রাশিয়ার কাছাকাছি সামরিক ঘাটি স্থাপন করবে আমেরিকা এবং মিত্র দেশগুলো।