অস্তিত্ব
“মামণি, আমি পাপার সাথে যাই?”
“নাহ। আমি তোমাকে রেখে আসবো। তুমি জুসটা শেষ কর। আমি গাড়ির চাবিটা নিয়ে আসছি।”
হ্যান্ডব্যাগের চেইনটা বন্ধ করে ব্যাগটা ডাইনিং টেবিলের উপর রাখলো সামিয়া। তারপর দ্রুত পায়ে হাঁটা দিল বেডরুমের দিকে।
“পাপা, মামণি আজকাল আমাকে শুধু বকে। একটুও আদর করে না,”মুখ গোমড়া করে বাবার কাছে বিচার দেয় নয় বছরের ছোট্ট শিমু।
“পাপা লাভস ইউ বেটি,”শিমুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয় শিহাব।
“আই লাভ ইউ টু পাপা,”হাসি ফোঁটে শিমুর মুখে।
“এবারে ঝটপট জুসটা শেষ করে ফেল বেটি। নইলে মামণি এসে বকা দেবে৷”
“ওকে পাপা,”মাথা ঝাঁকিয়ে মাথার ঝুটি দুটি নাড়িয়ে সম্মতি জানায় শিমু। টেবিল থেকে জুসের গ্লাসটা তুলে নিয়ে তাতে চুমুক দেয়।
“মামণি, আমি পাপার সাথে পিছনের সিটে বসব,”গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সামিয়াকে বলল শিমু।
“নাহ, তুমি সামনে আমার পাশে বসবে,”কড়া কন্ঠে জবাব দেয় সামিয়া৷
“না আমি পিছনেই বসব। পিছনেই বসব,”পা দাপিয়ে প্রতিবাদ করে শিমু।
“আচ্ছা,”অনেক কষ্টে নিজের রাগ দমন করে সামিয়া।
খুশিতে লাফাতে লাফাতে গাড়ির পিছনের সিটে গিয়ে বসল শিমু। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ড্রাইভারের সিটে গিয়ে বসল সামিয়া।
ড্রাইভার রতন মিয়ার মা মারা যাওয়াতে কয়েকদিনের ছুটি নিয়েছে সে। তাই ড্রাইভিংটা এই কয়েকদিন সামিয়া নিজেই করছে। বেশ কবছর আমেরিকা থাকার সুবাদে ড্রাইভিংয়ের হাতটা বেশ পাকা তার। ব্যাক মিররে একবার মেয়েকে দেখে নিয়ে ইঞ্জিন স্টার্ট করলো সামিয়া। পিছনের সিটে বসে এখনো অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে শিমু।
“বাই মামণি,”সামিয়ার গালে একটা চুমু দিয়ে বললো শিমু।
“একটু দাঁড়াও। এই চিঠিটা তোমার ক্লাসটিচারকে দিবে। ওকে?”পার্স খুলে একটা খামে ভরা চিঠি বের করলো সামিয়া।
“এটা কিসের মামণি?”খামটা হাতে নেয় শিমু।
“ছুটির এপ্লিকেশন। কাল আমরা ডাক্তারের কাছে যাবো। তুমি স্কুলে আসতে পারবে না। সেটাই লেখা আছে এখানে।”
“না আমি যাবো না ওই ডাক্তারের কাছে। ওই ডাক্তারটা পঁচা,”খামটা রাস্তায় ছুড়ে ফেলে শিমু।
“এসব কি শিমু? এগুলা কই থেকে শিখেছ তুমি? খামটা তোলো এখুনি। আর ডাক্তার মোটেও পঁচা নয়। উনি তোমাকে ভালো করে দিবেন।”
“লাগবে না আমার ভালো হওয়া। যাবো না আমি। আমি পাপার কাছে থাকব। কোথাও যাবো না,”বলে স্কুলের দিকে দৌড় দেয় শিমু।
শিমুর চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রাস্তা থেকে খামটা তুললো সামিয়া। সেটা আবার পার্সে ভরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল সেখানেই। তারপর হাতের ঘড়িতে একবার সময়টা দেখে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিল নিজেই গিয়ে দিয়ে আসবে চিঠিটা আর এটাও বলে আসবে শিমুর দিকে যেন একটু নজর রাখেন টিচাররা। মেয়েকে আজকাল আর একদম চোখের আড়াল করার সাহস পায় না সামিয়া। বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে সে হাঁটা দিলো স্কুলগেটের দিকে৷
টিফিনের ঘন্টা বাজতেই পুরো স্কুল যেন প্রাণ ফিরে পেল। বাচ্চাদের হইচইয়ে মুখোরিত হয়ে উঠলো স্কুল প্রাঙ্গন। সব ক্লাসের প্রায় প্রতিটি বাচ্চাই স্কুলের মাঠে। কেউ দোলানায় দোল খাচ্ছে; কেউ স্লিপারে স্লিপ খাচ্ছে; কেউ দলবেঁধে দৌড়াদৌড়ি করছে মাঠের মাঝে; কেউ বা আবার বাগানের পাশের বসার জায়গায় বসে নিজের টিফিনবাক্স খালি করতে ব্যস্ত।
কিন্তু শিমু বসে আছে নিজের ক্লাসরুমেই৷ মনটা বড্ড খারাপ তার। টিফিনও খায়নি আজকে৷ সব বন্ধুরা মাঠে চলে গেলেও সে একা একা বসে আছে ফাঁকা ক্লাসরুমটাতেই।
“কি ব্যাপার? আজ আমার শিমু বেটির মন খারাপ কেন? কি হয়েছে?”
“কিছু না,”বাবার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিল শিমু।
“বাব্বাহ, আমার বেটি দেখি আজকে আমার দিকে তাকাচ্ছেই না। এত্তো রাগ পাপার উপর?”অবাক হবার ভান করে শিহাব।
উত্তর দেয় না শিমু।
“দেখি তো বেটি। এদিকে তাকা তো। কি হইছে? মামণি বকা দিছে?”শিমুকে কোলের মাঝে টেনে নেয় ও।
“আমি ওই ডাক্তারের কাছে যাবো না পাপা। ওই ডাক্তারটা পঁচা। খুব পঁচা,”কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠল ও।
“একি! আমার এই সাহসী বেটিটা কান্না করে দিছে কেন? ছি ছি ছি। কান্না করে তো ভীতুরা। আমার শিমু বেটি তো অন্নেক সাহসী। সে তো কখনো কান্না করে না,”ওর কপালে চুমু খায় শিহাব।
“ওই ডাক্তারটা খালি তোমার সাথে কথা বলতে নিষেধ করে। বলে আমি নাকি অসুস্থ। ওর কথা শুনে মামণিও আমাকে বলে আমি নাকি অসুস্থ। জানো বাবা প্রতিদিন রাতে আমাকে তিতা একগুলা বড়ি খেতে দেয়। আমি খেতে না চাইলে মামণি খালি বকা দেয়। মামণিও পঁচা হয়ে গেছে। সবাই পঁচা। পঁচা পঁচা পঁচা,”মাথা নেড়ে বাবার কাছে অভিযোগ জানায় শিমু।
“নাহ বেটি এগুলা বলে না। মামণি মোটেও পঁচা নয়। মামণি তো ভালো,”হাত দিয়ে ওর চোখ মুছে দেয় শিহাব।
“আচ্ছা আমি তোকে একটা বুদ্ধি শিখায় দিব। তাইলে দেখবি তোকে আর ওই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না, ওই তিতা বড়িও খেতে হবে না।”
“তাই পাপা? কি বুদ্ধি?”খুশিতে ঝলমল করে উঠে শিমুর চোখমুখ।
“বলব। তবে তার আগে একটা কাজ করতে হবে।”
“কি কাজ পাপা?”
“কাজটা হলো টিফিন খাওয়া। চল বেটি আগে টিফিনটা খেয়ে নে৷ তারপর বলব। আগে খাওয়া তারপর দাওয়া।”
“হিহিহি,”পাপার কথা শুনে হেসে উঠল শিমু।
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে হৃদয় তাকিয়ে আছে শিমুর দিকে। ওর টিফিন বক্স ধরা হাতটা কাঁপছে। পুরো ক্লাসে আরো একবার চোখ বুলালো ও। শিমু ছাড়া আর কেউ নেই ক্লাসে। তাইলে কার সাথে কথা বলছে শিমু? আবার হাহা করে হেসে উঠল শিমু। ওর হাসির শব্দে হৃদয়ের মেরুদণ্ড দিয়ে যেন একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল।
ঘুরে একটা দৌড় দেবে কি না ভাবতে ভাবতেই শিমুর সাথে চোখাচোখি হল হৃদয়ের। ওকে ডাক দিল শিমু।
“কি রে হৃদয়? ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভিতরে আয়। স্যান্ডউইচ খাবি?”নিজের টিফিনের দিকে ইঙ্গিত করে শিমু।
“না,”কোনোমতে বলেই ঘুরে মাঠের দিকে দৌড় দেয় হৃদয়।
হৃদয়ের এমন আচরণে অবাক হল শিমু। কিছুক্ষণ দরজার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার নজর দিলো নিজের টিফিনবক্সের দিকে।
ড. আহাদ হোসেন। নামের পাশে বেশ কয়েকটা ডিগ্রির নাম লেখা। সেগুলো পড়ার চেষ্টা করল শিমু। ও বসে আছে ডাক্তারের চেম্বারের ভিতরে৷ সামিয়া ভিতরে ডাক্তারের সাথে কথা বলছে। এখন বেশ হাসিখুশি লাগছে ওকে। বাবার দেয়া আইডিয়াটা মনে হয় কাজে দেবে। কারণ আসার সময় কথা বলার পর মামণিকে বেশ খুশি খুশি মনে হলো ওর।
“আপনার কি মনে ওর ইম্প্রুভমেন্ট হচ্ছে?”সামিয়ার গলায় স্পষ্ট উৎকন্ঠা।
“এটা তো আমি ওকে না দেখে শিউরলী বলতে পাচ্ছি না। তবে আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে ওষুধে কাজ হচ্ছে। বাট মিসেস হায়দার আমি আগেও বলেছি আবারও বলছি ইট উইল টেক টাইম,”টেবিলে দুহাত রেখে সামনের দিকে ঝুকলেন ড. আহাদ।
ওনার বয়স প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি৷ তবে দেখে তা মনে হয় না। নিয়মিত ডায়েট আর এক্সারসাইজ যে যথেষ্ট ফলপ্রসূ তা ওনাকে দেখলেই বোঝা যায়৷
“আপনার মেয়ের যেটা হচ্ছে তা হলো কমপ্লেক্স ভিজুয়াল এন্ড অডিটরি হ্যালুসিনেশন। আপনার হাজব্যান্ড মারা যাওয়ার পর আপনার মেয়ে একটা বড় ধরনের শক পেয়েছে। এর ফলেই ওর সাথে এই জিনিসটা ঘটছে। ওর বাবার মৃত্যুটা ও মেনে নিতে পারেনি। যার জন্য ওর অবচেতন মনেই ও ভাবছে যে ওর বাবা এখনো বেঁচে আছে এবং ওর সাথেই আছে। ওর সাথে কথা বলছে; ওকে দেখছে। ও নিজের মনেই ওর চারিদিকে একটা নিজস্ব পৃথিবী তৈরি করে নিয়েছে। আমাদের পৃথিবীতে ওর বাবার অস্তিত্ব না থাকলেও ওর পৃথিবীতে ওর বাবার অস্তিত্ব ঠিকই আছে,”একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন ড. আহাদ।
“এই পুরো ব্যাপারটা খুবই সেন্সিটিভ। তাই আমরা যদি তাড়াহুড়া করি তাইলে অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। এজন্যই আমি চাচ্ছি ধীরে সুস্থে ব্যাপারটাকে হ্যান্ডেল করতে,”একটু থেমে যোগ করলেন তিনি।
“কিন্তু আমার মেয়ে এখানে আসাটা মোটেও পছন্দ করছে না। ওষুধ খাওয়াটাও পছন্দ করছে না। আর আমি নিজেও চাচ্ছি না নিয়মিত আপনার এখানে এভাবে আমার মেয়েকে নিয়ে আসতে। আমার পরিবারের লোকজন ইতোমধ্যে আমাকে নানান কথা শুনাচ্ছে,”অস্থির ভঙ্গিতে বলল সামিয়া।
কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন ড. আহাদ।
“শিমুর দাদা-দাদী শুরু থেকেই এখানে আসাটাকে ভালোভাবে নেয়নি। আই হোপ ইউ ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড মাই সিচুয়েশন। ওর বাবা মারা যাওয়ার একবছরও হয়নি তার মাঝে ওর এই অবস্থা। আই জাস্ট কান্ট টেক ইট এনিমোর,”বলতে বলতে গলা ভারী হয়ে এল সামিয়ার।
“আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড মিসেস হায়দার। আর এজন্যই আমি বলছি গিভ মি সাম টাইম। আর আপনি যেহেতু বলেছেন গতকাল থেকে ও ওর বাবার সাথে কথা বলছে না বা আপনি সেরকম কিছু দেখেননি। সো আই থিংক উই আর অন আওয়ার ওয়ে,”সমবেদনার স্বরে বললেন ডাক্তার সাহেব।
“আচ্ছা ওকে কি নিয়ে আসব?”রুমালে চোখের পানি মুছে জিজ্ঞেস করলো সামিয়া৷
“হ্যাঁ নিয়ে আসুন,”চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন ড. আহাদ।
রুমের বাইরে এল সামিয়া। বসার চেয়ারটায় যেভাবে বসিয়ে রেখে গেছিল শিমুকে এখনো সেভাবেই বসে আছে ওখানে৷
“সোনামণি এসো। ডাক্তার আংকেল তোমাকে ডাকছে। আর শোনো আংকেল যা যা জিজ্ঞেস করবে ঠিক ঠিক উত্তর দিবে। আচ্ছা? একদম দুষ্টুমি করবে না,”মেয়েকে কোলে নিলো সামিয়া৷
“ওকে মামণি,”শান্ত কন্ঠে উত্তর দিলো শিমু।
“এইতো লক্ষ্মী মেয়ে আমার,”বলে শিমুর কপালে একটা চুমু খেল ও।
চেম্বারে ঢুকতেই সামিয়া আর শিমু দেখল ডাক্তার সাহেব এখন নিজের চেয়ারে নয় সোফায় বসে আসেন।
চেম্বারটা বেশ বড়। দক্ষিণ দিকে বেশ বড় একটা জানালা। তা দিয়ে আসা দিনের আলোয় ভরে উঠেছে রুমটা। জানালার বিপরীত দিকের দেয়ালে বই ভর্তি বিশাল বড় তিনটি বুকশেলফ। পশ্চিমদিকে ডাক্তার সাহেবের বসার টেবিল আর নিজের রকিং চেয়ার। টেবিলের বিপরীত দিকে তিনটি গদিওয়ালা চেয়ার রোগীদের জন্য। এছাড়াও জানালার পাশে বড় দুটি ফ্লাওয়ার ভাস, একটি সোফাসেট, একটি কফিমেকার আর দেয়ালে ঝুলন্ত পেইন্টিংগুলো পুরো রুমটাতে একটা আভিজাত্যের ছাপ ফেলেছে যা ডাক্তারের মোটা অংকের ইনকামের দিকেই ইঙ্গিত করে৷
শিমু আর সামিয়াকে সোফায় বসতে বললেন ড. আহাদ।
“শিমু মা একটু চোখটা বন্ধ কর তো,”বললেন ডাক্তার সাহেব।
“কেন?”প্রশ্ন করল শিমু৷
“একটা ম্যাজিক দেখাব৷”
“কিন্তু চোখ বন্ধ করলে দেখব কিভাবে?”
“হা হা। ইন্টেলিজেন্ট গার্ল৷ আচ্ছা চোখ বন্ধ করতে হবে না,”বলে নিজের পকেটে হাত ঢোকালেন তিনি।
“এই যে এবরা কা ড্যাবরা। ফু,”নিজের পকেট থেকে কয়েকটা চকলেট বের করে শিমুকে দিলেন তিনি।
“থ্যাংক ইউ আংকেল,”চকলেটগুলো হাতে নিলো শিমু।
“ওয়েলকাম মা। এখন আমাকে বলো তুমি কেমন আছো?”
“ভালো আছি আংকেল। তুমি কেমন আছো?”
“আমিও ভালো আছি। শিমু তোমার পাপা কি এখনো তোমার সাথে কথা বলতে আসে?”
“তুমি না বলেছিলে পাপা মারা গেছে। তাইলে আবার পাপা কিভাবে আসবে?”পাল্টা প্রশ্ন করে শিমু।
“একদম ঠিক। তোমার পাপাকে তো আল্লাহ আকাশের তারা করে দিয়েছেন। আচ্ছা মা বলো তো এখন থেকে যদি পাপা তোমার সাথে কথা বলতে আসে তুমি কি করবে?”
“বলবো না কথা। পাপাকে আমি বলে দিয়েছি আমি ওর সাথে আর কথা বলবো না৷ আমি এখন আমার মামণির লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে থাকবো।”
সামিয়া মেয়েকে কাছে নিয়ে মেয়ের গালে একটা চুমু দিলো।
“ভেরি গুড শিমু। এইতো তুমি বুঝতে পেরেছ। এখন থেকে মামণির সব কথা শুনবে। মামণিকে একদম কষ্ট দিবে না। ওকে?”হাসিমুখে বললেন ড. আহাদ।
“ওকে আংকেল। আচ্ছা আমাকে কি এখনো ওই তিতা বড়িগুলো খেতে হবে? আমার না একদম ভালো লাগে না ওগুলো খেতে,”মুখ ভার করে বলল শিমু।
“আর কিছুদিন খাও সোনামণি। তারপর আর খেতে হবে না,”সামিয়া বলল মেয়েকে।
“কিন্তু ওগুলো খেতে ভালো না মামণি।”
“বুঝতে পেরেছি মা। কিন্তু ওইটা তো একটা কোর্স। কোর্সটা শেষ না করলে শরীর খারাপ করবে যে। আর কয়েকদিন পরেই শেষ হয়ে যাবে। আচ্ছা মা?”বললেন ড. আহাদ।
“আচ্ছা আংকেল,”সম্মতি জানাল শিমু।
“তাহলে আমরা আজকে উঠি ড. হোসেন?”ডাক্তারের সাথে চোখাচোখি হতেই প্রশ্ন করল সামিয়া।
“হ্যাঁ। আপনারা আসতে পারেন আপাতত। আর ফোনে আমাকে জানাবেন কি হয় না হয়।”
“হ্যাঁ শিউর,”পার্সটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো সামিয়া।
“সোনামণি আংকেলকে বাই বলো।”
“বাই আংকেল,”হাত নেড়ে বাই দিলো শিমু।
“টাটা শিমু,”হাসিমুখে উত্তর দিলেন ডাক্তার সাহেব।
“মামণি আইসক্রিম খাবো,”চেম্বার থেকে বের হয়ে বায়না করল শিমু।
“আইসক্রিম? উমম? ওকে। চলো আজকে আমরা দুজনে মিলে আইসক্রিম খাবো,”হাসিমুখে বলল সামিয়া।
সামিয়ার পাশে হাঁটতে হাঁটতে শিমু অপরপাশে তাকিয়ে চোখে টিপে ফিসফিস করে বলল,”থ্যাংক ইউ পাপা। ইউ আর এ জিনিয়াস।”
আশপাশের শব্দের মাঝে মেয়ের কথাটা শুনতে পেল না সামিয়া৷ শুনতে পেলে মুখের হাসিটা স্থায়ী হতো না মোটেও৷
লেখক,
আবির আনজুম