ছোট গল্পসাহিত্য

সতর্কবার্তা

ফোনের রিংটোনটা বাজতেই ছুটে এসে ফোন হাতে তুলে নিলো নীলা। স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নামটা পড়তেই ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো ওর। কলটা রিসিভ করে কানে ঠেকালো। 

“হ্যালো আবিদ। কোথায় তুমি?” 

“……..।”

“আমার আর পাঁচ মিনিট লাগবে।” 

“……..।” 

“ওকে, আমি বের হয়ে তোমাকে ফোন দিচ্ছি। বাই।” 

ফোনটা রেখে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো নীলা। 

‘সব ঠিক আছে তো?’ নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো একবার। 

কপালের কালো টিপটা আরেকবার ঠিক করে হাতে ঘড়ি পড়ে নিলো। এরপর আবার আয়নায় নিজেকে দেখে নিয়ে একহাতে হ্যান্ডব্যাগ আর অন্যহাতে ফোনটা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল নীলা। 

আবিদের সাথে নীলার পরিচয় ফেসবুকে। কোয়ারেন্টাইনের সময়টাতে ফোন নিয়েই দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাতো নীলা। আর ফোন মানেই তো ফেসবুক। সেখানেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ক্লাবের ক্যাম্পাস এম্বাসেডর নিয়োগের একটা পোস্ট চোখে পড়ে ওর। পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লাবের কার্যক্রমের প্রতি আগ্রহটা ওর বরাবরই ছিল। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ক্লাবেও সক্রিয় সদস্য ছিল নীলা। কিন্তু করোনার সময়টাতে অন্য সবকিছুর মতো থমকে যায় সেসব কাজও। 

তাই অলস সময়টাকে কাজে লাগাতেই নীলা দুইমাস আগে ওই ক্লাবের ক্যাম্পাস এম্বাসেডর হওয়ার জন্য রেজিষ্ট্রেশন করে। দুদিন পরে ক্লাবের একজন সদস্য ওকে ফেসবুকে নক দেয় আর জানায় ও ক্যাম্পাস এম্বাসেডর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। সেই ছেলেটিই আবিদ। এরপর আরো বেশ কয়েকবার ওদের কথা হলেও তার সবটাই ইভেন্টের কাজের ব্যাপারে। তখনই আবিদের কথা বলার ধরন আর ওর ব্যবহার বেশ ভালো লাগে নীলার। 

এরপর ইভেন্টের ইতি ঘটলেও ওদের কথা বলার ইতি ঘটেনি। আস্তে আস্তে আবিদ আর নীলার মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তবে নীলার কাছে এটা বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু ছিল। কিন্তু আবিদের কাছেও তাই ছিল কি না এটা ও জানতো না। আর কখনো জানতেও চায়নি। কেন যেন মনের মধ্যে একটা ভয় ছিল ওর। আবিদকে হারিয়ে ফেলার ভয়। 

নীলা ওর বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে বছরখানেক আগে। তাই পরিবারের চিন্তা এখন ওকে নিয়ে। তবে চিন্তাটা ওর বিয়ের চেয়েও বেশি ওর গায়ের রঙ নিয়ে৷ নীলার গায়ের রঙ একটু শ্যামলা। আসলে একটু শ্যামলা বলাটা ভুল হবে। ওর গায়ের রঙ ঠিক ততটাই শ্যামলা যতটা শ্যামলা হলে আমাদের দেশে পরিবারের চিন্তার কারণ হতে হয় আর বাইরের লোকের কাছে কটুক্তি শুনতে হয়৷ আর বড় হওয়ার সাথে সাথে এই ব্যাপারটাও দিন দিন বাড়তে থাকে। কাছের বান্ধুবিদের সবাই যখন তাদের প্রিয়তমকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতো, নীলাকে তখন পড়ে থাকতো হতো বই অথবা ফেসবুকের নীল জগৎটা নিয়ে। 

তবে ছেলেদের সাথে যে নীলার একদমই কথা হতো না এমনটা নয়। কথা হতো, বন্ধুত্ব হতো তবে সেগুলোর স্থায়িত্ব ছিল ছেলেরা ওকে ছবিতে বা সামনাসামনি দেখার আগে পর্যন্ত। মুখে যে যাই বলুক না কেন ওর মায়াবী চেহারার চেয়ে গায়ের রঙটাই যে ওদের কাছে বেশি প্রাধান্য পেতো তা নীলা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারতো৷ 

‘আচ্ছা আবিদও কি আমাকে দেখে এমনটাই ভাববে? ওরও কি মনে হবে আমি দেখতে সুন্দর না? দেখা হওয়ার পর কি ও আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেবে?’ 

আবিদের সাথে দেখা হওয়া ঠিক হবার পর থেকেই এই প্রশ্নগুলো বারবার উঁকি দিচ্ছে নীলার মনে। কিন্তু তারপরও আবিদের সাথে দেখা করার জন্য ছটফট করছে ও। আর তাই তো দিনাজপুর থেকে দুইদিনের জন্য রংপুরে এসেছে নীলা। যদিও আবিদকে বলছে ফুপুর বাসায় দাওয়াত। তবে আসল কারণ তো ওর সাথে দেখা করা। 

READ MORE:  অতিথির স্মৃতি - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

রাস্তায় দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে নীলা। হাতে ধরা মাস্কটা পড়বে কি পড়বে না সেই চিন্তা করতে করতেই আবিদকে দেখতে পেল ও। ওর থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার অপর পাশ দিয়ে হেঁটে আসছে আবিদ। আবিদকে দেখতে পেয়েই মাস্কটা ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখল নীলা। ওকে প্রথমবার দেখে আবিদের রিয়েকশন কি হয় সেটা জানার জন্য। 

রাস্তা পার হতে হতেই আবিদ নীলার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ল একবার। 

‘ও কি আমাকে চিনতে পেরেছে? কিন্তু কিভাবে? ও তো আমাকে আগে কখনো দেখেইনি? ছবিও তো দেখেনি? তাইলে চিনল কিভাবে? নাকি ও অন্য কাউকে আমি ভেবেছে?’

চারদিকে একবার তাকিয়ে দেখলো নীলা। আশেপাশে কেউ নেই। তারপর আবারও তাকালো আবিদের দিকে। ইতিমধ্যে রাস্তা পার হয়ে এপাশে চলে এসছে আবিদ। সাদা শার্টে দুর্দান্ত মানিয়েছে ওকে। শান্ত থাকার চেষ্টা করলেও ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড নার্ভাস হয়ে পড়েছে নীলা। বেড়ে গেছে হৃদস্পদন। 

“আশপাশে কি কাকে খুঁজছো? তোমাকে দেখেই হাত নাড়ছি। অন্য কাউকে দেখে না।”

‘আবিদ আমার মনের কথা বুঝে গেল কিভাবে?’ 

“আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে?”মুখ ফসকে আপনি বলে ফেললো নীলা। 

“কারণ আশেপাশে আর কোনো মেয়ে নেই যে রাস্তা পার হওয়ার সময় আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকায় ছিল। আর হ্যাঁ, আমার মনে হয় আমরা একজন আরেকজনকে তুমি করে বলতাম? তাই না?”মুচকি হেসে বললো আবিদ। 

“ওহ স্যরি। ভুলে বলে ফেলছি,”আবিদের কথা শুনে লজ্জা পেল নীলা। 

“হুমম। তা আমার শহরের কোথায় ঘুরতে চান হুকুম করেন ম্যাডাম নীলা,”নাটকীয় ভাবে বললো আবিদ। 

“আপনার শহর আপনিই নিয়ে চলেন। হাহা,”আবিদের মতো করে বলার চেষ্টা করে নীলা। 

“হাহা। চলো আগে কোনো একটা রেস্টুরেন্টে বসি। পেট শান্তি করে ঠিক করা যাবে কোথায় যাওয়া যায়। নাকি?” 

“হ্যাঁ চলো,”বলে দুজনে হাঁটা শুরু করলো। 

“এইতো চলে এসেছে খাবার,”হাত কচলাতে কচলাতে বললো আবিদ৷ 

ওয়েটার খাবারগুলো টেবিলে রাখতেই নীলার প্লেটটা নিয়ে নিজেই সার্ভ করলো আবিদ। নীলার ফুপুর বাসা থেকে ওরা রিক্সায় করে এখানে এসেছে৷ আবিদের পাশে বসে আসার পুরো সময়টা যেন নীলার কাছে ছিলো স্বপ্নের মতো। আবিদের পাশে বসে ও মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে ওর কথা বলা শুনছিল। ভার্চুয়াল জগতের আবিদের চেয়েও বাস্তব জগতের আবিদের প্রতি নীলা আরো বহুগুণে দূর্বল হয়ে পড়েছে এই কিছুটা সময়ের মাঝেই৷ 

“রিক্সার মতো এখানে বসেও কি শুধু তাকিয়েই থাকবে? হুমম?”আবিদের কথা শুনে লাজুকভাবে মাথা নিচু করে করে নীলা। 

‘ইশ কি লজ্জা। আবিদ তাইলে খেয়াল করছে ব্যাপারটা? উফফ আমি একটা গাধা। এইভাবে তাকায় থাকা মোটেও উচিত হয় নাই। ইশ ও যে কি ভাবছে এখন আল্লাহ জানে,’ মনে মনে নিজেকে গালি দিলো নীলা। 

“লজ্জা পেলে তোমার মায়াবী মুখটা আরো বেশী সুন্দর লাগে,”নীলার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো আবিদ। 

“ইশ! আসছে। পাম দিতে হবে না। আমি কেমন সেটা আমি জানি,”বলে আরো বেশি লজ্জা পেল নীলা। 

“আমি মোটেও পাম দিচ্ছি না। মনে হলো তাই বললাম,”হাত নাড়িয়ে প্রতিবাদ করে উঠলো আবিদ। 

READ MORE:  শিউলি ফুল

“হুমম। খাও এখন।” 

“তা বললে না তো আমাদের শহর কেমন লাগছে? দিনাজপুরের চেয়ে ভালো নাকি খারাপ?”এক চামচ খাবার মুখে পুরলো আবিদ। 

“ভালো তবে দিনাজপুর একদম বেস্ট,”ড্রিংকসে চুমুক দিয়ে বললো নীলা। 

“এই যে, খালি নিজের শহরের গুণ গাইবে। শহরসিজম করা লোকজন।” 

“শহরসিজম!! হাহা!!”অনেকদিন পর প্রাণখোলা হাসিতে মেতে উঠলো নীলা আর ওর সাথে যোগ দিলো আবিদ। 

“কিছুদূরেই একটা পার্ক আছে। বড় রাস্তা দিয়ে গেলে ঘুরে যাইতে হবে। এরচেয়ে চলো এই গলির ভিতর দিয়ে যাই। শর্টকাটে যাওয়া যাবে। নাকি?”রেস্টুরেন্ট থেকে কিছুদূর এসে একটা সরু গলি দেখিয়ে বললো আবিদ। 

“হ্যা চলো। শর্টকাটেই যাই। এই রোদে আমি বড় রাস্তা দিয়ে যাইতে পারব না,”ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে কপালের ঘাম মুছলো নীলা। 

“ফুপুর বাসায় কয়দিন থাকবে?”হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করলো আবিদ। 

“এই কালকের দিনটা শুধু। পরশু সকালে বাস,”মুখ থেকে মাস্কটা খুলে ব্যাগে রাখলো নীলা। মাস্ক পড়লে কেমন যেন দমবন্ধ লাগে ওর। 

“শুধু কালকের দিনটা? এরপর আর দেখা হবে না?”মন খারাপ করে বললো আবিদ। 

“হ্যা৷ আসলে হুট করে আসা তো। তাই জন্য,”আবিদের কথায় ওর মন খারাপ হলেও মনে মনে কিছুটা খুশিও হয়। নিশ্চয়ই আবিদের ওকে ভালো লেগেছে। নইলে কি আর এভাবে মন খারাপ করতো। “তুমি একবার আসো দিনাজপুরে। তখন আমি তোমাকে আমার শহর দেখাবো।” 

“ওকে। দাওয়াত এক্সেপ্টেড। দিনাজপুর ট্যুর লোডিং,”হাঁটা থামিয়ে নীলাকে স্যালুট করে বলল আবিদ। 

“ইশ তোমার খালি ঢং,”আলতো করে আবিদকে ধাক্কা দেয় নীলা৷ 

এরই মাঝে গলিটার শেষ প্রান্তে চলে আসে ওরা। দেখতে পায় গলির মুখে একটা মাইক্রোবাস দাঁড় করানো। ওরা সেটার সামনে এসে দাঁড়াতেই মাইক্রো থেকে দুজন লোক নেমে নীলার মুখ আর হাত চেপে ধরলো বাঁধা দেয়ার আগেই। অসহায় দৃষ্টিতে সাহায্যের জন্য আবিদের দিকে তাকালো নীলা। কিন্তু সাহায্য করার বদলে আবিদ লোক দুটিকে আদেশ দিলো নীলাকে গাড়িতে তোলার জন্য। তারপর নিজে গিয়ে বসলো গাড়ির সামনের সিটে। নীলাকে গাড়িতে তুললেই পিছনের সিট থেকে কে যেন একটা রুমাল চেপে ধরলো ওর নাকে। মিস্টি একটা গন্ধ নাকে এল ওর। ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে করতেই কালো আঁধারের পর্দা নেমে এলো নীলার চারিদিকে।  

হঠাৎ করেই প্রচুর আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো নীলার চারপাশ। অনেকক্ষণ অন্ধকারে থাকার পর এই আলোর ঝলকানি সহ্য হলো না নীলার চোখে। চোখ বন্ধ করে ফেললো ও। 

“কি ব্যাপার ম্যাডাম নীলা? চোখ খুলবেন না?”দূর থেকে ভেসে আসলো পরিচিত একটা কন্ঠস্বর। 

ধীরে ধীরে চোখ খুললো নীলা। আলোটা চোখে সয়ে আসতেই আবিদকে দেখতে পেল ও। একটা চেয়ার টেনে নিয়ে ওর সামনে এসে বসে পড়ল ও। আবিদকে দেখে ছাড়া পাওয়ার জন্য চেষ্টা করলো নীলা। কিন্তু চেয়ারের হাতলে আর পায়ার সাথে হাত আর পা বাধা থাকায় কোনো সুবিধাই করতে পারলো না ও। সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকারের চেষ্টা করেও লাভ হলো না। মুখে বাঁধা কাপড় ভেদ করে বের হলো না একটু শব্দও। আরও একবার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলো ও। বুঝতে পারলো নিজের বন্দীদশা মেনে নেয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই ওর সামনে। 

“আস্তে আস্তে। এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেন গো? খুব কষ্ট হচ্ছে?”ব্যাঙ্গ করে বললো আবিদ। 

READ MORE:  দৃষ্টিভঙ্গি - মোছাঃ আয়েশা সিদ্দিকী

আবিদের কথাগুলো যেন আগুন ধরিয়ে দিলো নীলার গায়ে। রাগে ফুসে উঠলো ও। আরেকবার চেষ্টা করলো ছাড়া পাওয়ার। কিন্তু ফলাফল সেই আগের মতোই শুন্য৷ 

“চেষ্টা করে লাভ নাই সোনামণি। এই দড়ি তুমি ছিড়তে পারব না। শুধু শুধু স্টামিনা খরচ করে কোনো লাভ নাই। এর চেয়ে সামনে যে ধকল যাবে সেটার জন্য এগুলা জমা করে রাখো। আচ্ছা?” 

ঠিক তখনই নীলার চোখে পড়ল ঘরের এক কোণার টেবিলটা। পরিচিত এই টেবিলটা নীলা দেখেছিলো অপারেশন থিয়েটারে। এরকম একটা টেবিলের উপরই ওকে শোয়ানো হয়েছিলো ওর এপেন্ডিক্স অপারেশনের সময়ে। টেবিলটার পাশে কাঠের র‍্যাকে রাখা অপারেশনের সরঞ্জাম আর দেয়ালে ঝোলানো বড় একটা কিডনীর ছবির দিকে তাকিয়ে ওর বুঝতে কষ্ট হলো না কি ঘটতে যাচ্ছে ওর সাথে। 

“ইন্টেলিজেন্ট গার্ল। ইউর আন্দাজ ইস পুরোপুরি রাইট। হাহাহা,”নীলার দৃষ্টি অনুসরণ আবিদও তাকালো ওই ছবিটার দিকে। “কিন্তু তার আর আরেকটা কাজ বাকি আছে। আই জাস্ট ওয়ান্ট টু ডু সাম ফান ইউথ ইউর লাভলি ফিগার।” 

ঝট করে আবিদের দিকে তাকালো নীলা। নীলার অপলক সেই দৃষ্টিতে নির্ভেজাল আতংক ছাড়া কিছুই নেই। ওর মন জুড়ে শুধু একটাই আকুতি।  

‘না আবিদ। না। প্লিজ না।’  

আবিদ আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে নীলার কাছে। আরো কাছে। এরপর হাত বাড়িয়ে নীলার ওড়নাটা টান দিলো ও। প্রচন্ড ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো নীলা। ওর মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে ওর ওড়নাটা ধরে টান দিচ্ছে আবিদ। 

এমন সময় হঠাৎ একটা ভো ভো শব্দ শুনতে পেল নীলা। পরিচিত শব্দটা ক্রমেই বাড়তে লাগলো। শব্দের উৎস খুঁজতে চোখ মেলে থাকালো নীলা। দেখলো মাথার উপর ফ্যান ঘুড়ছে। আর পুরো শরীর ঘামে ভিজে জবজব করছে। ঝট করে উঠে বসলো ও। তারপর পেটে হাত দিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করলো ও। 

‘ওরা কি আমার কিডনী কেটে ফেলেছে? ওরা কি আমাকে মেরে ফেলেছে? আমি কোথায় আছি এখন? চারপাশের সবকিছু এমন পরিচিত লাগছে কেন?’

কিছুটা ধাতস্থ হতেই নীলা বুঝতে পারলো ও ওর ফুপুর বাসায় ওর ঘরেই বসে আছে। তাইলে কি ওইটা স্বপ্ন ছিলো? নাকি অবচেতন মনের সতর্কবার্তা? 

‘ইশ কি বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছি আমি। তাও আবার আবিদকে নিয়ে। ছি! ছি! ও এমন ছেলে হতেই পারে না।’ 

নিজের মনেই নিজেকে গালি দিলো নীলা। 

‘আচ্ছা তাইলে ওই শব্দটা কিসের ছিলো?’ 

তখনই আবার শুরু হলো শব্দটা। এবারে বুঝতে পারলো নীলা। শব্দটা ওর ফোনের। কেউ একজন কল করেছে ওকে। 

‘ইশ আস্ত একটা গাধা আমি।’ 

বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকালো নীলা৷ তারপর কলটা রিসিভ করে কানে ঠেকালো। 

“হ্যালো আবিদ। কোথায় তুমি?” 

“……..।”

“আমার এই আধা ঘন্টার মতো লাগবে।” 

“……..।” 

“ওকে আমি বের হয়ে তোমাকে ফোন দিচ্ছি। বাই।” 

ফোনটা রেখে তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠলো ও। আবিদের সাথে দেখা করার জন্য ওর আর তর সইছে না। 

নীলার সাথে কথা বলে আরেকটা নাম্বারে কল করলো কোকড়া চুলের ছেলেটা। 

“হ্যালো সাব্বির। আমি আবিদ।” 

“বল।”

“তাড়াতাড়ি গাড়িটা নিয়ে চলে আয়। আর সাইদকে বল অপারেশন থিয়েটার রেডি করতে। নতুন একটা মাল পাইছি।”

লেখক,

আবির আনজুম

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *