মানবতা পর্ব-২ ছোটগল্প

এই কয়েকদিন ধরে শরীরটা ভালো না গেলেও আজ অনিসার মনে অনেক খুশি। কারণ আজ থেকে দিগন্তের অফিস ছুটি হবে সপ্তাহের জন্য।সরকারের নির্দেশ। করোনা বাড়ছে তাই।করোনার জন্য কষ্ট লাগলেও ছুটির জন্য মনটা ভালো লাগছে।গান শুনতে শুনতে চা হাতে বসে অনিসা।গান বাজছে,

“আমারও পরানো যাহা চায়

তুমি তাই গো তুমি তাই”

 

দিগন্ত এখন সারাদিন বাড়িতে বসে।অনিসা এসে বললো,”আমার শরীরটা আজ খুব খারাপ লাগছে”

“তুমি কি ডাক্তারের কাছে যাবে”

“না,এখন যাবো না।কিছুটা সময় দেখি।আমারতো আরো তিন মাস আছে”

সারাদিন বাড়ির কাজ আজ দিগন্ত করেছে।কাজের খালা রান্না করে দিয়েছে বাকি কাজটা দিগন্ত করেছে।বিকেল থেকেই অনিসার পেটের ব্যাথা বেড়ে গেছে।দিগন্ত অনেক চিন্তিত। 

রাত তখন দশটা।অনিসা ব্যাথা চিৎকার করছে।দিগন্ত অনেক গুলো এম্বুলেন্স কল করেছে।কেউ আসছে না।একজন আসবে।তবে টাকা অনেক বেশিনিবে।দিগন্ত তাতেও রাজি।

অনিসা চিৎকার করছে,

“আল্লাহ বাচাঁও।আল্লাহ আর পারছি না।মা তুমি কোথায়? “

অনিসার ডেলিভারির সময় তিনমাস পর হলেও আজ ব্যাথা উঠেছে। তাকে হাসপাতাল যেতে হবে

দিগন্ত মনোয়ারা কাছে গেলো।

“আপা আপনার ভাবি খুব অসুস্থ। একটু চলুন”

“না ভাই।এই করোনায় যেতে পারবো না।”

মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।বাড়িওয়ালা চাচির কাছে গেলো তিনিও সশব্দে না করে দিয়েছে।দিগন্ত কাদছে।তারাও তো একদিন মনোয়ারার বিপদে এগিয়েছিলো কিন্তু আজ তারা পাশে নেয়।এম্বুলেন্স চলে এসেছে।কিন্তু গলির সামনে তাকে নিয়ে যেতে পারছে না।গাড়ির ড্রাইভার আর দিগন্ত। চাদরে করে নিয়ে যেতে হচ্ছে।হটাৎ চাদরে একপাশ একজন ধরলো।কে ইনি?ইনি কি কোনো মানবতার দূত?চাদর ধরলো রহিম চাচা।সঙ্গে সঙ্গে চাচি আর বৃদ্ধা বৃদ্ধা এসে হাজির।তারা তাকে ধরাধরি করে গাড়িতে উঠালো।চাচি অনিসার মাথায় হাত দিয়ে বলচ্ছে,”মা আর একটু ধৈর্য ধরো।চলে এসেছি।”

খালা পা নাড়ছেন। 

 

ডাক্তার অনিসাকে নিয়ে গেলো।তারা জানায় যে রক্ত লাগবে।কিন্তু রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। রহিম চাচা এসে বললো “বাবা আমার রক্ত ও নেগেটিভ একবার পরীক্ষা করেছি।আমি কি দিতে পারি।কখনো বাবা খারাপ কিছু খায়নি।”

READ MORE:  হাসানের একদিন

দিগন্ত কাদতে কাদতে জড়িয়ে ধরলো। আজ সত্যি চাচাকে তার বাবার মতো মনে হচ্ছে।দিগন্তের মনে হাজারটা কথা ঘুরছে।

একেই কি বলে মানবতা?কিছুদিনের উপকারে তারা আজ জীবনের ভয় ছেড়ে ছুটে এসেছে।করোনায় যখন সব মৃত্যুপুরি তারা একবারও ভাবেনি।আর এদের কে সে তুচ্ছ করেছিলো।যাদের আপণ করেছিলো তাদের খোঁজ নেয়।মনোয়াদের সাথে কি ভালো সম্পর্ক না ছিলো।কতো রঙিন স্মৃতি না তাদের সাথে।কিন্তু আজ।মানবতা কি এমনই । একটু মানবতা হাজারটা মানবতাকে এনে দেয় কাছে।করে দেয় আপণ সবাইকে।

 

দিগন্ত বাইরে দাঁড়িয়ে। ভিতরে অনিসা।

দিগন্তকে চাচা বৃদ্ধ খালূ সান্তনা দিচ্ছে।দিগন্ত মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে সন্তানকে সে আগে মানবতা শিখাবে।কিন্তু তার সন্তান বাচঁবে তো।পাবে কি তার সন্তান মানবাতর ছোঁয়া। এই একজন মানব শিশুর অপেক্ষায় এখন এতো জন।নতুন এক মানবতা কি দেখবে পৃথিবীর আলো?…

আচ্ছা মানবতা কি? একজনের বিপদে চুপ করে থাকা কি সত্যিই মানবতা? যা আজ মনোয়ারা করলেন। অন্যের পাশে দাড়ানোটা কি শুধু ব্যক্তিগত ইচ্ছের ব্যাপার? নাকি একজন মানুষ হিসেবে তার পরিচয় পত্র? মনে রাখা উচিত প্রত্যের বিপদে প্রত্যেকের পাশে থাকা উচিত। তাতে সে আমার উপকার করুক কিংবা না করুক। তাতে সে আমার শত্রু হক না কেন। কারণ আমরা মানুষ। এই মানুষ বলতে যেন আমাদের দ্বিধা না হয় সে জন্য অনন্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

 

ডাক্তার এসে জানায়। অনিসা আর সন্তানের অবস্থা আশঙ্কা জনক। হয়তো তাদের একজনকেই বেছে নিতে হবে। অনন্তকে যদি বেছে নিতে হবে কাউকে৷ অনন্ত কাকে বেছে নিবে? অনিসার কথা রাখার জন্য  সন্তানকে? নাকি যে সারাজীবন তার পাশে ছিলো সেই প্রিয়তমা কে? কাকে বেছে নিবে অনন্ত?…কাকে..?

লেখক,

মো. সিহাব
রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ