স্বাস্থ্য

ডায়াবেটিস কি? এর লক্ষণ,করণীয় এবং চিকিৎসা

ডায়াবেটিস বর্তমান সময়ে অত্যন্ত পরিচিত একটি রোগ। আমাদের আশেপাশের প্রায় মানুষেরই এখন ডায়াবেটিস রোগীটি দেখা যায়। ডায়াবেটিস একবার হলে তা সহজে আর ভালো হয় না, তবে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। চলুন হেলথ টিপসের এই পর্বে ডায়াবেটিস কি, লক্ষণ, করণীয় এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা নেওয়া যাক,

 

ডায়াবেটিস কি

 

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হলো এমন একটি রোগ যা আমাদের  রক্তের চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।

আমাদের  দেহের  জন্য প্রয়োজনীয়  6 টি খাদ্য উপাদানের মধ্যে শর্করা অন্যতম। আমাদের শরীরের শর্করা বিপাকের জন্য ইনসুলিন নামক হরমোনের প্রয়োজন। আমাদের দেহে ইনসুলিন নামক হরমোন উৎপন্ন না হলে আমাদের শরীরে শর্করা বিপাক হয় না। অগ্ন্যাশয় এর বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়। ফলশ্রুতিতে আমরা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে যাই। 

 

 

ডায়াবেটিসের ধরণ:

 

ডায়াবেটিস দুই ধরনের হয়ে থাকে।

 

টাইপ ১ ডায়াবেটিস: এই ডায়াবেটিস হলে শরীরে ইনসুলিন হরমোন একদমই তৈরি হয় না।

 

 টাইপ ২ ডায়াবেটিস: ইনসুলিন তৈরি হয় তবে তা শরীরের চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত কম।

 

ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ সমূহ : 

 

ডায়াবেটিস হওয়ার প্রধান কারণ আমাদের ভুল খাদ্যভ্যাস ও জীবনাচরণ। সাধারণত যেসব কারণে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে- 

 

১. অনেক সময় জেনেটিক কারণে ইনসুলিন হরমোন উৎপাদন কমে যায় অথবা বন্ধ হয়ে যায়। এটি ডায়াবেটিস হওয়ার অন্যতম কারণ। 

২. অপুষ্টির কারণে ডায়াবেটিস হয়।

৩. অগ্নাশয়ে কোন রোগ হলে অনেক সময়  ইনসুলিন হরমোনের উৎপাদন কমে  যায়। 

৪. বিভিন্ন ওষুধের এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া   এর কারণে   ডায়াবেটিস হয়। 

৫. নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও সঠিক সময়ে  খাবার না খেলে ডায়াবেটিস হয়।

৬ . ফাস্টফুড  বেশি খেলে  ডায়াবেটিস  হতে পারে

৭. যাদের  হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি

READ MORE:  কেনও খাবেন ঢেকি ছাটা চাল? Benefits of Brown rice

 

 

 

ডায়াবেটিসের লক্ষণ সমূহ: 

 

  • কেটে গেলে ক্ষত শুকাতে দেরি হয়।
  • ওজনহীনতা দেখা  দেয়।
  • নানা রকম  চর্মরোগ  হয়।
  • দৃষ্টি শক্তি দুর্বল হয়।
  • একটু পর পর পানি পিপাসা পায়।
  • বেশি বেশি প্রস্রাব হয়।

 

ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দিলে অতি শীঘ্রই পরীক্ষা করতে হবে। বর্তমানের ফার্মেসিতে স্বল্প খরচে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা যায়। 

 

ডায়াবেটিস কমানোর উপায়:

 

ডায়াবেটিস হলে যা করতে হবে তা হলো- 

 

  • নিয়মিত হাঁটতে হবে। 
  • নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। গ্লুকোজের মাত্রা ৭% এর বেশি হলে সেদিন বেশি  করে ব্যায়াম করতে হবে। গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য মেশিন কিনতে পাওয়া যায়। 
  • ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। কারণ ডায়াবেটিস হলে শরীরে রক্ত চলাচল কমে যায়। এক্ষেত্রে পা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সময় পায়ে ঘা হয়, ডায়াবেটিসের জন্য সহজে ভালো হয় না ঘা।  অনেক সময় পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে  বাধ্য হয়ে পা কেটে ফেলতে হয়। তাই পা পরিষ্কার রাখতে হবে। পায়ে যেন ক্ষত না হয় খেয়াল রাখতে হবে। 
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
  • যেসব খাদ্যে শর্করার পরিমাণ বেশি সেসব  খাদ্য  এড়িয়ে চলতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে হবে।
  • ধূমপান ,মদ পান করা যাবে না।

 

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা: 

 

সকাল: সকালে নয়টার আগে খাবার শেষ করতে হবে।  সকাল বেলা রুটি, চিড়া,খই, মুড়ি এসব খেতে হবে।

 

দুপুর:  ১.০০ থেকে ২.০০ টার মধ্যে ভাত, মাছ/মুরগীর মাংস, শাকসবজি, সালাদ ও লেবু খাওয়া যেতে পারে।

 

বিকাল: হালকা খাবার খেতে হবে।সুপ, ছোলা, চিনি ছাড়া বিস্কুট, মিষ্টি ছাড়া পিঠা, বাদাম, মুড়ি, রং চা এসব  খেতে হবে।

 

রাত: রাত আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে রুটি বা ভাত  খেতে হবে। ভাতের সাথে মাছ/মুরগী, সবজি, সালাদ, লেবু  খেতে হবে।  রাতে শোয়ার আগে এক কাপ দুধ খেলে ভালো হয়।

READ MORE:  রক্তদান করার উপকারী দিক

 

এড়িয়ে চলতে হবে যেসব খাবার: 

 

 

মিষ্টি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত তেলে ভাজা  চর্বি জাতিয় খাবার, ডালডা, ঘি গরু, খাসী, হাঁস ও পাখির মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।

 

ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ:

 

ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা তা জানার জন্য এইচবিএ১সি নামের পরীক্ষা করা হয়। এইচবিএ১সি এর মান ৬.৫-এর বেশি হলে ডায়াবেটিস আছে। 

 

ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে কি:

 

নিয়ম তান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থার মাধ্যমে টাইপ টু ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় করা সম্ভব। প্রায় 90% মানুষই  টাইপ টু ডায়াবেটিস আক্রান্ত। 

 

ডায়াবেটিস সারানোর উপায়: 

 

ডায়াবেটিস সারানোর একমাত্র উপায় সুশৃংখল জীবন যাপন করা। ওষুধ গ্রহণ ছাড়া শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 

 

সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, ডায়বেটিস থেকে বাঁচতে চাইলে আমাদেরকে নিয়মতান্ত্রিক এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও পরিশ্রম করতে হবে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *