ভার্সাই চুক্তি- যে চুক্তির ফলে হয়েছিল ২য় বিশ্বযুদ্ধ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জার্মানিকে দমিয়ে রাখতে মিত্র শক্তির দেশগুলো যে অন্যায় চুক্তি করেছিল তার নাম ভার্সাই চুক্তি। এই চুক্তির ফলেই মূলত লীগ অফ নেশনস ভেঙ্গে যায় এবং পরবর্তীতে সূচনা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের।
ভার্সাই চুক্তি ছিল জার্মানির উপর চাপিয়ে দেওয়া একটি চুক্তি। উড্রো উইলসনের চৌদ্দ দফায় আস্থা রেখেই জার্মানি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। উইলসনের নীতির প্রধান দিক ছিল স্বাধিকার বা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার। কিন্তু এই নীতির প্রয়োগে কোনো সামঞ্জস্য রক্ষা করা হয় নি।
জার্মানির প্রতি কঠোর চুক্তি চাপিয়ে দিতে এবং একই সাথে মিত্রশক্তিবর্গের নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য অনেক ক্ষেত্রে চৌদ্দ দফায় বর্ণিত মূলনীতিসমূহের বরখেলাপ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, পোল্যান্ডকে যে সকল স্থান দেওয়া হয়েছিল সেগুলোর কয়েকটিতে জার্মান জাতির লোকসংখ্যা বেশি ছিল অথবা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত পোল্যান্ডে জার্মান জাতির লোকের এ একই অধিকার উপেক্ষিত হয়েছিল।
১৯১৯ সালের ২৮ জুন মিত্র ও সহযোগী শক্তিবর্গ এবং জার্মানির মধ্যে ভার্সাই চুক্তি (Treaty of Versailles) সম্পাদিত হয়। এই চুক্তিতে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতির যথার্থ প্রতিফলন ঘটে নি। এক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতি ও ভার্সাই চুক্তির বিভিন্ন শর্তসমূহের দিকে দৃষ্টি দিলে এর যথার্থতা প্রতীয়মান হয়ে উঠে।
ভার্সাই চুক্তির ফলে জার্মানি তার যাবতীয় উপনিবেশ হাতছাড়া করল। শুধু তাই নয়, উপনিবেশে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ লগ্নি করা হয়েছিল বিফলে গেল। আর জার্মানি হারিয়েছিল কৃষিযােগ্য জমির শতকরা সাত ভাগ, উৎপাদন শিল্পের শতকরা দশ ভাগ, মজুত কয়লার দুই-পঞ্চমাংশ । লােহার দুই-তৃতীয়াংশ। এছাড়া জার্মানির নৌ-বাহিনী, স্থলবাহিনী বিমানবাহিনীর উল্লেখযােগ্য অংশ হাস করা হয়েছিল। এককথায় সব দিক থেকে জার্মানিকে দুর্বল করাই ছিল ভার্সাই চুক্তির অন্যতম লক্ষ্য। সুতরাং এটা খুবই স্বাভাবিক ছিল যে জার্মানি চুক্তির শর্ত মনেপ্রাণে স্বীকার করে নেবে না। কার্যক্ষেত্রে তাই ঘটল। চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরই জার্মানি তৈরি হতে থাকল পরবর্তী যুদ্ধের জন্য। আর এভাবেই সূচনা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের।