ইসলামইসলামিক বিষয়াদি

সমুদ্রের কি কি খাওয়া হারাম ?

Sea fish। Halal । Haram। Important thing to know। Kuran । Hadith। Allah।

 

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি সমুদ্রকে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা (মাছের) গোশত খেতে পারো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১৪)

 

উক্ত আয়াতে ‘তাজা গোশত’ শব্দের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদ ইবনে জারির তাবারি (রহ.) লিখেছেন, ‘তাজা গোশত’ হলো সমুদ্র থেকে শিকারকৃত মাছ। (তাফসিরে তাবারি ১৭/১৮০)

হাদিস শরিফে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা সমুদ্রপথে আসা-যাওয়া করি এবং সঙ্গে সামান্য মিঠা পানি নিই। যদি আমরা তা দিয়ে অজু করি তাহলে পিপাসার্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ ক্ষেত্রে আমরা কি সমুদ্রের পানি দিয়ে অজু করতে পারি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সমুদ্রের পানি পবিত্র ও তার মৃত জীব হালাল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬৯)

 

উক্ত হাদিসে বর্ণিত পানির মৃত জীব আসলে কী? এর ব্যাখ্যায় অন্য হাদিসে এসেছে, ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের জন্য দুই ধরনের মৃত জীব ও দুই ধরনের রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত জীব দুটি হলো মাছ ও টিড্ডি (পঙ্গপাল), আর দুই প্রকারের রক্ত হলো কলিজা ও প্লীহা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩১৪)

 

 

মাছ খাওয়া সর্বসম্মতভাবে হালাল

 

উক্ত আয়াত ও হাদিসসমূহের আলোকে সব ইমামের ঐকমত্যে পানির জীবের মধ্যে মাছ খাওয়া হালাল। এমনকি মৃত হলেও তা খাওয়া হালাল, চাই তা যে কারণেই মারা যাক। যেমন—পানি থেকে ওঠানোর কারণে, কোনো আঘাত পাওয়ায়, পানিতে কোনো বিষ মিশানোর কারণে বা সরাসরি সূর্যের তাপ পড়া ইত্যাদি কারণে মারা যায় তা নষ্ট হওয়ার আগে খাওয়া হালাল।

 

হ্যাঁ, যে মাছ বিনা কারণে মারা যাবে তা খাওয়া মাকরুহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সাগরে নিক্ষেপকৃত মাছ, শুকনায় উঠে যাওয়া মাছ খাও। আর বিনা কারণে মৃত মাছ খেয়ো না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮১৫)

READ MORE:  ওযূতে এক অঙ্গ কতবার ধুতে হয়?

অপর বর্ণনায় জাবের (রা.) বলেন, ‘বিনা কারণে ভেসে ওঠা মৃত মাছ খেয়ো না।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ৮৬৬২)

 

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আদমসন্তানের জন্য সমুদ্রের সব মাছ জবাই করে (হালাল করে) দিয়েছেন।’ (সুনানে দারাকুতনি, হাদিস : ৪৭১০)

 

 

 

মাছের সংজ্ঞা

 

মাছের সংজ্ঞা ফিকহবিদদের কাছে নির্ধারিত নেই; বরং সর্বসাধারণ বা মুসলিম মাছ বিশেষজ্ঞদের কাছে মাছ হিসেবে যে জলজীব পরিচিত, শরিয়তের দৃষ্টিতে সেটিই মাছ বলে গণ্য হবে এবং তা খাওয়াও হালাল হবে। আর যে জলজীব মাছ বলে পরিচিত নয়, তা হালাল হবে না। মুফতি আমিমুল ইহসান মুজাদ্দিদি (রহ.) লিখেছেন, ‘মাছ হলো মানুষের মধ্যে যে জলজ প্রাণীকে মাছ বলে গণ্য করা হয়। এটি এমন এক জলজ প্রাণী, যার অসংখ্য প্রকারভেদ ও আকৃতি রয়েছে।’ (আত্তারিফাতুল ফিকহিয়্যা, পৃষ্ঠা ৩২৭)

 

মাছ ছাড়া অন্য জলজ প্রাণী খাওয়া অবৈধ

 

জলজ প্রাণীর মধ্য থেকে মাছ ছাড়া অন্য সব প্রাণী খাওয়া নাজায়েজ। (বাদায়েউস সানায়ে : ৫/৩৫) এটি ইমাম আবু হানিফা ও সুফিয়ান সাওরি (রহ.)সহ আরো অনেক ফকিহর মতামত। ইবনে হাজর আসকলানি (রহ.)-এর মতে, এটি শাফেয়ি মাজহাবেরও নির্ভরযোগ্য অভিমত। (ফাতহুল বারি ৯/৪১৯)

 

বর্তমানে অনেককে দেখা যায়, কাঁকড়া, ব্যাঙ ইত্যাদি খেয়ে থাকে, এগুলো খাওয়া নাজায়েজ। কেননা মহান আল্লাহ সফল মুমিনদের গুণাবলি উল্লেখ করতে গিয়ে ইরশাদ করেন, ‘এবং নিজেদের জন্য উত্কৃষ্ট বস্তু হালাল করে আর নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৫৭)

 

ইমাম মারগিনানি (রহ.) লিখেছেন, জলজ প্রাণীর মধ্য থেকে মাছ ছাড়া কোনো প্রাণী খাওয়া যাবে না। কেননা মহান আল্লাহ নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করেছেন, আর মাছ ছাড়া পানির সব প্রাণীই নিকৃষ্ট। (হেদায়া ৪/৩৫৩)

 

হাদিস শরিফে এসেছে, জনৈক ডাক্তার ওষুধের মধ্যে ব্যাঙ মিশ্রিত করার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে অনুমতি চাইলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে ব্যাঙ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৭১)

READ MORE:  আল্লাহু আল্লাহু তুমি জাল্লে জালালু লিরিক্স | allahu allahu tumi jalla jalaluhu bangla gojol lyrics

 

উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় ওলামায়ে কেরাম বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে ব্যাঙ হত্যা করতে এ জন্য নিষেধ করেছেন যে যেহেতু ব্যাঙ হারাম প্রাণী, তাই তা হত্যা করলে তা খাওয়া বৈধ হবে না, যখন হত্যা করলে খাওয়া বৈধ হবে না, তাহলে অকারণে একটি প্রাণী হত্যা করে লাভ কী? (আহকামুল কোরআন, জাসসাস ৪/১৯০, বিনায়া ১১/৬০৬)

 

সারকথা হলো, এটি প্রমাণসিদ্ধ কথা যে জলজ প্রাণীর মধ্য থেকে মাছ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী খাওয়া জায়েজ নেই। কেননা জলজ প্রাণীর মধ্য থেকে মাছই একমাত্র উত্কৃষ্ট হালাল বস্তু, আর বাকিগুলো নিকৃষ্ট ও হীন বস্তু। আর মাছের বৈধতার মধ্যে কোনো ফকিহের কোনো দ্বিমত নেই। এ ছাড়া অন্যগুলোর বৈধতা-অবৈধতার ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে। আর শরিয়তের একটি সর্বসিদ্ধ মূলনীতি হলো, যে বস্তুর হালাল-হারাম নিয়ে দ্বিমত বা সন্দেহ হয়, সেখানে সতর্কতামূলক হারাম ও অবৈধতার দিকটিকেই প্রাধান্য দিতে হয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকেও ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও সুফিয়ান সাওরি (রহ.)সহ যেসব ফকিহ জলজ প্রাণীর মধ্য থেকে মাছ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী খাওয়া জায়েজ নেই বলে ফতোয়া দিয়েছেন, তাঁদের কথাই সতর্কতামূলক আমলযোগ্য ও অগ্রাধিকারযোগ্য। (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম : ৩/৫১১)

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *