স্বাস্থ্য

বিরক্তিকর পেটের সমস্যা দূর করার উপায়

বিরক্তিকর পেটের সমস্যা কি – 

 

বিরক্তিকর পেটের উপসর্গ বা আইবিএস হচ্ছে একটা ক্রনিক (দীর্ঘমেয়াদী) ব্যাধি যা পরিপাক (হজম) নালীর (গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিন্যাল ট্র্যাক্ট) কাজকর্ম প্রভাবিত করে বিশেষতঃ বৃহদন্ত্রের (কোলন অংশ)। গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিন্যাল ট্র্যাক্ট হল একটা শব্দ যা ব্যবহার করা হয় সমগ্র পথ যার মধ্য দিয়ে খাবার যায় (মুখ, খাদ্যনালী, পেট, ক্ষুদ্র অন্ত্র, এবং বৃহদন্ত্র) এবং সংশ্লিষ্ট অঙ্গগুলি যেমন লিভার, গলব্লাডার, এবং প্যানক্রিয়াস যা হজমকারক এনজাইম নিঃসৃত (ক্ষরণ) করে। আইবিএস কোলনের মলত্যাগ ক্রিয়ার (মল নড়াচড়া) সমস্যাগুলির সাথে সম্পর্কযুক্ত। পেট খারাপ (পাতলা পায়খানা) অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য (মলত্যাগে অসুবিধা) অথবা উভয়ই হতে পারে। এটা পেটফাঁপা (গ্যাসে ভর্তি অনুভব করা) এবং পৈটিক ব্যথার সাথে যুক্ত।

 

বিরক্তিকর পেটের সমস্যা এর উপসর্গ –

 

আইবিএস-এর সবচেয়ে পরিচিত উপসর্গ হচ্ছে পেটের ব্যথা। ব্যথাটা তলপেটে পৈটিক খিঁচুনির (খিল ধরা) রূপে হয়। ব্যথাটা সচরাচর মলত্যাগ করার দ্বারা উপশম হয়। পৈটিক স্ফীতি বা পেট ফুলে ওঠা (অত্যধিক গ্যাস সৃষ্টির কারণে ভরভর্তি ভাব অনুভব করা) সারাদিন ধরে অধিকতর খারাপ হয়, কিন্তু কারণটা অজানা। (আরও পড়ুন – স্ফীতির কারণসমূহ এবং ঘরােয়া প্রতিকার) আইবিএস-সি থাকা ব্যক্তিদের শক্ত ছােট দলার মল থাকে (ছােট নুড়ি-আকৃতির মল – যা প্রায়ই শক্ত হয়)। মলত্যাগ করার সময় প্রচুর চাপ বা জোরাজুরি ঘটে। আইবিএস-ডি থাকা ব্যক্তিরা এমন মলত্যাগ করেন যা জলাে (জলযুক্ত) এবং পরিমাণে কম হয়। অনবরত একটা অসম্পূর্ণ মলত্যাগের অনুভূতি হয়। শ্লেষ্ম বার হওয়াও খুব পরিচিত কিন্তু রক্তপাতের সাথে হয়না। ওজন কমার কোনও রিপাের্ট নেই। 

 

ডাইভার্টিকিউলাইটিস (ডাইভার্টিকিউলা নামের ক্ষুদ্র থলির প্রদাহ বা সংক্রমণ যেগুলি অন্ত্রগুলির দেয়াল বরাবর বৃদ্ধি পায়) পরবর্তী আইবিএস জ্বরের সাথে প্রধানতঃ বাঁদিক বরাবর পৈটিক ব্যথা সৃষ্টি করে। আইবিএস-এম থাকা রােগীরা আইবিএস-সি এবং আইবিএস-ডি উভয়ের পর্যায়ান্বিত (পালা করে) উপসর্গগুলি প্রদর্শন করে।

READ MORE:  রসুনের বিস্ময়কর কিছু ওষুধি গুণ, যা জেনে অবাক হবেন।

 

বিরক্তিকর পেটের সমস্যা এর চিকিৎসা-

 

  • ব্যথা 

যদি ব্যথাটা নিজের থেকে প্রশমিত না হয়, একটা অ্যান্টিকোলিনার্জিক এজেন্ট (ডাইসিক্লোমিন ১০ মি.গ্রা.) অথবা একটা অ্যান্টিস্প্যাজমােডিক-এর (মেবেভেরাইন ১৩৫ মি.গ্রা. ) একটা কোর্স দিনে তিনবার দেওয়া যেতে পারে। 

 

  • আইবিএস-ডি

 খাদ্যতালিকায় আঁশ বা তন্তু বস্তু বাড়ানাে হয় এবং খােসাসহ ফল, শাকসবজি, মেথিলসেলুলােজ অথবা ইসবগুল ভুষির মত জোলাপ যুক্ত করা হয়। লােপেরামাইড (২-৪ মি.গ্রা. দিনে ৪ বার পর্যন্ত) কিংবা কোলেস্টিরামাইন (১ স্যাশে রােজ) অথবা কোডিন ফসফেট-এর (রােজ ৩০-৯০ মি.গ্রা.) বিধান দেওয়া যেতে পারে যদি উপসর্গগুলি অবিরত লেগে থাকে। চরম কেসগুলিতে অ্যামিট্রিপ্টিলাইন-এর মত একটা সাইকোট্রপিক ওষুধ (১০- ২৫ মি.গ্রা.) রাতে একবার নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হতে পারে।

 

  • আইবিএস-সি

 মল অধিকতর নরম করার জন্য প্রচুর পরিমাণে জল পান করা, এবং ওটস, ডাল, গাজর, খােসা ছাড়ানাে আলুর মত দ্রবণীয় আঁশ বা তন্তুর মত বস্তু (খাদ্যে) বাড়ানাে। যদি তন্তু সম্পূরকগুলি উপসর্গগুলি উপশম করতে ব্যর্থ হয় চিকিৎসা পরিকল্পনায় মিল্ক অব ম্যাগনেশিয়া যােগ করা যেতে পারে।

সংক্রমণ-পরবতী আইবিএস-এ সংক্রমণ নিরাময় করতে এবং পরবর্তীকালে উপসর্গগুলি নির্মূল করতে সঠিক অ্যান্টিবায়ােটিক বিধি অনুসরণ করা উচিত।

 

  • আইবিএস-এ বিষন্নতা-প্রতিরােধী ওষুধ ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট থেরাপি বিরক্তিকর পেটের উপসর্গের রােগীদের অবস্থা উন্নত করে। যেসমস্ত রােগীদের ব্যথা, পেট খারাপ, এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মত গুরুতর উপসর্গগুলি একটা প্রবল উপসর্গ হিসাবে থাকে তাঁরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হন।

 

জীবনধারা সামলানাে

 

আইবিএস সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করার জন্য কোনও বাস্তব পদক্ষেপ বা ওষুধ নেই। যাই হােক, রােজকার খাদ্যতালিকা এবং জীবনধারায় যথাযথ পরিবর্তন করার দ্বারা উপসর্গগুলি এড়ানাে যেতে পারে। 

 

  • সবচেয়ে ভাল গুণমানের উপকরণ ব্যবহার করে ঘরে রান্না করা খাবার বেছে নেওয়া এবং খাওয়া খাবারের পদের একটা রেকর্ডসহ বিশেষ করে সেই পদগুলি যা উপসর্গগুলিকে বদলে দেয় সেগুলি সমেত একটা খাদ্য ডায়েরি রাখা হলে উপসর্গগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
READ MORE:  দাঁড়িয়ে প্রসাব করা কি ভালো?

 

  • একটা ব্যায়াম বিধি গ্রহণ করাও সামগ্রিক উপসর্গগুলির উন্নতিসাধনে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে প্রচুর জল পান করা, পেট খারাপের ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় তন্তু যােগ করা, কিছু স্বাস্থ্যকর প্রােবায়ােটিক পানীয় পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়ােগ করা যা পেটে ভাল জীবাণুগুলি বৃদ্ধি করে সেগুলিও অধিকতর ভাল হজমে সাহায্য করে। 

 

  • আইবিএস থাকা ব্যক্তিদের প্রধান খাবারগুলি বাদ দেওয়া এড়িয়ে চলতে, অল্প করে খাবার খেতে, চর্বিযুক্ত এবং চিপস আর বিস্কুটের মত প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলতে, ধূমপান, অ্যালকোহল, এবং ক্যাফিন (চা এবং কফিতে) এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 

 

  • ক্রীড়ামূলক কর্মকাণ্ড এবং ধ্যানের মত মনের ভার হালকা করার মত কাজকর্মের মাধ্যমে চাপ সামলানাে গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু চাপ উপসর্গগুলিকে তীব্রতর করে তুলতে পারে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *