ছোট গল্পসাহিত্য

পাণ্ডুলিপি - গল্প নং ১

সাজ্জাদ ভাই বললেন, মুকুল চট্টগ্রাম যেতে হবে আমাদের। সেখানে একটি মন্দিরের রহস্য উদঘাটন করতে। মুকুল বলল, সব রহস্যময় জায়গা কী আমাদের ভাগ্যেই পড়ে? যাইহোক! ভাল কথা৷ তো আমরা কবে যাচ্ছি? সাজ্জাদ ভাই বললেন এক সপ্তাহ পর।

এক সপ্তাহ পর…..

সাজ্জাদ ভাইকে ফোন করলো মুকুল৷ মুকুল বলল, সাজ্জাদ ভাই আমি আপনার বাড়ির নিচে। চলে আসুন। সাজ্জাদ ভাই নিচে নামার পর তারা দুজন রওয়ানা হলো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। তাদের সেখানে পৌছাতে অনেকক্ষন লেগে গেলো। যাওয়ার সময়ের প্রায় পুরোটুকুই সাজ্জাদ ভাই ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। আর মুকুল চিন্তা করছিল মন্দিরটি নিয়ে। কী এমন আছে? যে তাদের সেখানে যেতে হচ্ছে? তারা একটি সুন্দর হোটেলে উঠেছে। তারা দুপুরে খেয়েদেয়ে একটু ঘুমিয়ে নিয়ে মন্দিরের উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়। তারা সেখানে পৌছানোর পর দেখতে পায় মন্দিরে পুরোহিত বসে আছেন। তারা তার কাছে যায় তারপর তাকে জিজ্ঞেস করে মন্দিরের আদ্যপান্ত সম্পর্কে। কেন মন্দিরটি রহস্যময় তাও তারা জিজ্ঞেস করে। পুরোহিত উত্তরে বলেন,

মন্দির ১৭ শতকের দিকে রাজা দেব বানিয়েছিলেন। তিনি প্রতিদিনই এখানে আসতেন পূজা করতে৷ প্রায় ১০০ লোকের সমাগম হতো এই মন্দিরে প্রতিদিন। কিন্তু, কিছুদিন পর রাজা দেব মারা গেলে মন্দিরকে অনেকে ভুতের আড্ডাখানা বলে দাবি করেন৷ আবার অনেকে বলেন মসজিদে নাকি রাজা দেবের আত্মা থাকে৷ এসব কথার কারণে, মানুষ রর সমাগম মন্দিরে বন্ধ হয়ে যায় তবুও কিছু মানুষ আসলেও এখন তা আর একদমই নেই। মুকুল তখনই তাকে প্রশ্ন করে বসে, তো আপনি কী মনে করেন এটি একটি ভৌতিক মন্দির? পুরোহিত একটু কাচুমাচু করে বলেন, না না! তা হতে যাবে কেন? ওগুলা শুধু মানুষ এর ধারণা। তারপর সেদিনের মতো মুকুল আর সাজ্জাদ হোটেলে ফিরে আসে। আসার পর মুকুল বলে, সাজ্জাদ ভাই, আমার পুরোহিতকে একটু সন্দেহজনক মনে হয়েছে। সাজ্জাদ ভাই বললেন, আমারও তাই মনে হচ্ছে কিন্তু সেটা কী হতে পারে? মুকুল বলে, উনি বলেছিলেন যে মন্দির নাকি রাজা দেব বানিয়েছিলেন রাজা দেব সম্পর্কে আগে আমাদের কিছু জানতে হবে। কাল আমরা একটু লাইব্রেরিতে যাবো যদি রাজা দেব সম্পর্কে কোন ধারণা পাই?

READ MORE:  আয়াতুল্লাহ খোমিনির জীবনী | Biography of Ayatollah Khomeini

 

অনলাইন ইনকাম, ঘরে বসে মাসে আয় করুন 1000 ডলার

 

পরদিন সকালে……

লাইব্রেরির উদ্দেশ্যে বের হয় সাজ্জাদ আর মুকুল। মুকুল গিয়ে একটি বই খুলে দেখতে পারে। লাইব্রেরিয়ান লক্ষ করে তাদের। সে তাদের বলে আপনারা কী রাজা দেব সম্পর্কে জানতে চান? মুকুল মাথা নাড়ে। তিনি বলেন বইতে ততো বেশি তথ্য পাবেন না। আমি আপনাকে সব বলতে পারবো৷ তারপর তিনি বলা শুরু করেন,

রাজা দেব ছিলো এই চট্রগ্রাম এর এদিকের এক রাজা। সে তার জীবনে অনেক ভাল কাজ করেছিল। বিশেষ করে সে তার ধর্মের উপাসনালয় (মন্দির) তৈরি করেছিল প্রায় ২০ টির মতোন। লোকে মুখে এখনো শোনা যায় যে তিনি নাকি তার সব সম্পত্তি ওই ২০ মন্দির এর ভিতর লুকিয়ে রেখেছেন। আর তার আত্মা নাকি এখনো সেই মন্দিরগুলোতে পাহারা দেয়। একবার এক লোক সেই সোনা নেয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে যায় কিছুদিন পর তার মৃতদেহ সেখান থেকে পাওয়া যায়।

মুকুল আর সাজ্জাদ খুব মনযোগ দিয়ে তার কথা শুনছিল। কথা শেষ করে তারা কাছ থেকে সেই ২০ টি মন্দির এর ঠিকানা নেয়। যার মধ্যে থেকে মাত্র মন্দিরই তারা খুঁজে পায়। সেই টা মন্দির সম্পর্কেই তারা একই কথা শুনতে পারে। ততোক্ষনে রাত হয়ে যায়৷ তারা হোটেলে ফিরে আসে৷ রাতে মুকুল সাজ্জাদকে বলে, সাজ্জাদ ভাই আজকে আমরা যেগুলা দেখলাম তা থেকে কী কিছু বুঝতে পারলেন? সাজ্জাদ ভাই না বললে, মুকুল বলে , আমরা যে কয়টি মন্দিরে গিয়েছি এখন অব্দি ( টি মন্দিরে) সব মন্দির এরই পুরোহিতদেরকে কেমন জানি সন্দেহজনক লেগেছে। সাজ্জাদ সাহেব শুধু মাথা নাড়ান। এখন আমাদের আজ গভীর রাতে যেতে হবে আমাদের একটি মন্দিরে। একটার রহস্য বের হলেই, বাকি কয়টা এমনিতেই বের হয়ে যাবে।

READ MORE:  সবগুলো বেদ বাংলা অনুবাদ pdf ডাউনলোড করুন

গভীর রাতে…….

সাজ্জাদ আর মুকুল সেই মন্দির এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। তারা সেখানে পৌছে চুপিচুপি মন্দিরের চারিপাশ ভাল মতো দেখে নিলো৷ তাদের ধারণা এত রাতে মসজিদে কেউ নেই। তবুও তারা পিছনের জানালা দিয়ে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে ভিতরে।

চারদিক নিস্তব্ধ, অন্ধকার। এর মধ্যে তারা এগিয়ে চলল তারা। মুকুল একটি ম্যাপ নিয়ে এসেছিল মন্দিরের। তারা জানতে পারে সেই লাইব্রেরিয়ানের কাছ থেকে যে, মূল পুজার স্থানেই রয়েছে সেই গুপ্তধন৷ তারা কিন্তু মোটেও ওই গুপ্তধন তারা ভক্ষণ করার জন্যে যায় নি! কয়জন মানুষ গুজব ছড়ায়৷ তাদের পর্দা ফাস করতেই তারা সেখানে গিয়েছিল

তারা তারপর সেখানে গিয়ে দেখতে পারে কিছু মানুষ কথা বলছে৷ মুকুল তাদের কথা টেপ রেকর্ডার দিয়ে রেকর্ড করে। যে লোকগুলি কথা বলছিল তাদের মধ্যে একজন সে পুরোহিত ছিল। তারা পরিকল্পনা করছিলি কীভাবে তারা এই সম্পদ নিয়ে কাল রাতে এখান থেকে চলে যাবে। সেই কথা রেকর্ড করে খুব চুপি চুপি সাজ্জাদ ভাই আর মুকুল চলে গেলো। তারপর তারা পরদিন সেই রেকর্ডগুলি পুলিশিকে শোনালো। পুলিশ তাদের সাথে সেখানে রাতে আবার গিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করতে রাজি হয়।

রাতের বেলা….

মুকুল আর সাজ্জাদ পুলিশকে প্রথমে গিয়ে ওদের সামনে আনে না! তাহলে তারা পালিয়ে যাবে। প্রথমে তারা পুলিশকে মন্দিরের পাশে খুব সুক্ষ্মভাবে লুকিয়ে রাখে। তারপর তারা সাধারণ মানুষ এর মতো তাদের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়। এমন সময় তারা মুকুল সাজ্জাদকে ধরে ফেললে পুলিশ এসে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করে। এভাবেই চমৎকার একটি অভিজান শেষ করলো মুকুল আর সাজ্জাদ! তারা এই কাজের জন্যে সে বছর সেরা সাংবাদিক এর পুরস্কার পায়।

READ MORE:  হঠাৎ দেখা… - মোঃ রিয়াজুর রহমান রিয়াজ

 

লেখক,
মাহীর ফয়সাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *