মুসলমান হয়ে জন্ম নিলেও যারা মহানবী ( সাঃ) এর উম্মত নয়
বিশেষ কিছু মানুষ এমন রয়েছে, যারা মুসলমান হলেও নবীজি তাদের ব্যাপারে বলেছেন যে এরা আমার উম্মত নয়। নিম্নে এমন কিছু মানুষ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
যে নবীজির সুন্নাহের প্রতি বিমুখ
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহের প্রতি বিমুখ, সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৭৭৬)।
এখানে দুটি বিষয়। একটি হলো—যে ব্যক্তি সুন্নতের ওপর আমল করতে পারে না, তবে নিজেকে এ জন্য অপরাধী মনে করে। ফলে সে মনে মনে লজ্জিত থাকে। আলোচ্য হাদিসে এমন ব্যক্তির কথা বলা হয়নি।
বরং যারা নবীজির সুন্নাহ দেখতে পারে না এবং সুন্নাহের নাম শুনলে, সুন্নতি কাজ দেখলে সে খুব বাজেভাবে রিঅ্যাক্ট করে। আলোচ্য হাদিস সেসব মানুষের জন্য প্রযোজ্য।
যে বড়দের সম্মান করে না
উবাদা ইবন সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সে আমার উম্মতভুক্ত নয়, যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না এবং আমাদের ছোটকে স্নেহ করে না, আর আমাদের আলেমের অধিকার বিষয়ে সচেষ্ট নয়।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ : ৮/১৪)
যে ব্যক্তি বিভিন্ন মাধ্যমে ভাগ্যের ভালো-মন্দ যাচাই করে
ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাখি উড়িয়ে ভাগ্যের ভালো-মন্দ যাচাই করল, অথবা যার ভাগ্যের ভালো-মন্দ যাচাই করার জন্য পাখি ওড়ানো হলো, অথবা যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করল, অথবা যার ভাগ্য গণনা করা হলো, অথবা যে ব্যক্তি জাদু করল অথবা যার জন্য জাদু করা হলো অথবা যে ব্যক্তি কোনো গণকের কাছে এলো, অতঃপর সে (গণক) যা বলল তা বিশ্বাস করল—সে ব্যক্তি মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর যা নাজিল করা হয়েছে তা অস্বীকার করল। (মাজমাউজ জাওয়াইদ : ৫/১২০)
যে ব্যক্তি অমুসলিমদের সঙ্গে সাদৃশ্য রাখে
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অমুসলিমদের সঙ্গে সাদৃশ্য রাখে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন কোরো না। কেননা ইহুদিদের অভিবাদন হলো আঙুল দ্বারা ইশারা করা আর খ্রিস্টানদের অভিবাদন হলো হাতের তালু দিয়ে ইশারা করা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৩৮)
যে নারী পুরুষের সঙ্গে এবং যে পুরুষ নারীর সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন করে
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যেসব নারী পুরুষের সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যেসব পুরুষ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৫৮০)
যে ব্যক্তি প্রতারণা করে
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘একদিন স্তূপ করে রাখা খাদ্যশস্যের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি স্তূপের ভেতর হাত প্রবেশ করালে আঙুলগুলো ভিজে গেল। স্তূপের মালিককে জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাপার কী? মালিক জবাব দিল, হে আল্লাহর রাসুল! বৃষ্টির পানিতে তা ভিজে গিয়েছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তবে তা ওপরে রাখলে না কেন, যেন মানুষ তা দেখতে পায়? যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ১০১)
যে ব্যক্তি মুসলমানের বিপক্ষে অস্ত্র ধারণ করে
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে আমাদের ওপর (মুসলমানদের বিরুদ্ধে) অস্ত্র তোলে। আর যে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে, সে-ও আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ১০২)
মৃত্যুশোক প্রকাশে যে নারী বিলাপ করে কাঁদে
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মৃত্যুশোক প্রকাশে যে নারী মাথা মুড়িয়ে বিলাপ করে কাঁদে এবং কাপড় ছিঁড়ে ফেলে সে আমাদের (মুসলমানদের) দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১৩০)
অন্য হাদিসে এসেছে, যারা (মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গালে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে বা জাহিলি যুগের মতো চিৎকার দেয়, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১২৯৭)
যে ব্যক্তি কারো স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা দাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭৫)
যে ব্যক্তি ছিনতাই করে
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের সম্পদ ছিনতাই করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৩৪০)
যে ব্যক্তি সাম্প্রদায়িকতার প্রতি মানুষকে প্ররোচিত করে
জুবাইর ইবনে মুতইম থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আসাবিয়াতের (সাম্প্রদায়িকতা, জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ) দিকে ডাকে বা আসাবিয়াতের কারণে লড়াই-যুদ্ধ করে কিংবা আসাবিয়াতের ওপর মৃত্যুবরণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১২১)
যে ব্যক্তি সুন্দর স্বরে কোরআন পাঠ করে না
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুন্দর স্বরে কোরআন পাঠ করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৭০১৯)
অথচ আমাদের মধ্যে এমন মানুষও আছে, যারা সুন্দর করে তিলাওয়াত করা তো দূরের কথা; বরং তিলাওয়াতই করতে পারে না কিংবা পারলেও বিশুদ্ধভাবে করতে পারে না। আর এভাবেই কবরে চলে যাচ্ছে!