ইতিহাস

মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ির ইতিহাস পর্ব – ৪

শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী:

 

 

মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্যের মতই যােগ্য ও প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন তাঁর পুত্র শশীকান্ত আচার্য। শশীকান্ত আচার্য জন্ম ১৮৮৫ সালে। তিনি ছিলেন মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্যের চাচাতাে ভাই রাজা জগৎ | কিশাের রায়চৌধুরীর দ্বিতীয় পুত্র। ১৮৮৭ সালে মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য, দত্তকপুত্র হিসেবে শশীকান্ত | আচার্য কে গ্রহণ করেন। মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য উপযুক্ত শিক্ষা এবং নিজের আদর্শে দত্তকপুত্র কে গড়ে তােলেন।

সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর পুত্র শশীকান্ত আচার্য পিতার আদেশ-নিষেধ ঠিকভাবে পালন করতেন। শশীকান্ত আচার্য ১৯০৪ সালে সেন্ট জেভিয়ার স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সুঠাম দেহের অধিকারী হওয়ায় তিনি ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতে ভালােবাসতেন, যার ফলে তার শরীর হয়ে উঠেছিল বলিষ্ঠ। শশীকান্ত আচার্য এর স্ত্রী লীলাদেবী ছিলেন তাঁর সুযােগ্য সহধর্মিনী। তাদের বিয়ে হয়েছিল ধুমধাম করে বিয়ে উপলক্ষে কলকাতা মহানগরীতে সাত দিন যাবত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ১৯০৫ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য শশীকান্ত আচার্য বিলেত ভ্রমণ করেন। ১৯০৮ সালের অক্টোবরে তাঁর | পিতৃবিয়ােগের পর তিনি জমিদারি গ্রহণ করেন।

ঠিক ওই সময় লীলাদেবীর পিতৃবিয়ােগ হয়। জীবদ্দশায় পুত্রবধূ লীলাদেবীর সঙ্গে পুত্রের সকল বিষয়ে | মিল দেখে সূর্যকান্ত প্রীত হয়েছিলেন। সূর্যকান্তের জীবনাবসানের মাধ্যমে মুক্তাগাছা জমিদারীতে যে সূর্য অস্ত গেল তা শশীকান্তের মাধ্যমে দীপ্তিময় হয়ে উঠলাে। ইংরেজ সরকার ১৯১৩ সালে শশীকান্ত আচার্য | চৌধুরীর “রাজা বাহাদুর উপাধি দান করে।

 

মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি
মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি

 

পিতার অবর্তমানে পিতার সব দায়িত্ব তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। এক পর্যায়ে ১৯১৮ সাল থেকে ১৯২১ সালে তিনি ময়মনসিংহ পৌরসভার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন। তার পুত্র সুধাংশু কান্ত আচার্য চৌধুরী ১৯৪০ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯২০ সালে শশীকান্ত “মহারাজ” উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯২০ সালের ৪ আগস্ট ঢাকার দরবারে তৎকালীন বাংলার শাসনকর্তা Lord Ronaldshey নিজ হাতে মহারাজ শশীকান্তকে মহারাজ” সনদ প্রদান করেন। এই উপলক্ষে শাসনকর্তা শশীকান্ত কে উদ্দেশ্য করে বলেন

READ MORE:  গৌরীপুরে কালীপুর বড়তরফ জমিদারবাড়ির ইতিকথা পর্ব-২

“you are the head of the distinguished jamidar family of Muktagacha in Mymensingh and as such the most influential Hindu nobleman of Eastern Bengal. Your father, the late Maharaja Surya Kant Acharya Chaudhary was distinguished for the liberal assistance he gave to works of public utility and in his footsteps, you are following. It gives me great pleasure to handover you the sanad of the high title of Maharaja. May you live long to enjoy the title and to carry on the high traditions of your family.”

 

শশীকান্ত ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জনকে গৌড়ে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন এবং এজন্য খ্যাতি অর্জন। করেন। বাংলার ছােট লাট লর্ড কারমাইকেল ও ছিলেন তার বিশেষ প্রশংসা ভাজন। ভারতের | এককালীন সম্রাট এ ওয়ার্ডের স্মৃতি রক্ষার্থে তিনি ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে এক লক্ষ এক টাকা দান করেন। স্থানীয় বিদ্যামী বালিকা বিদ্যালয় জয়দুর্গা বিদ্যালয় ও তিনি অনেক অর্থ দান করেছিলেন। | প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাঙালি “সৈন্য সংগ্রাহক সমিতির সভাপতি ছিলেন।

মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য তার পুত্র শশীকান্ত আচার্য নামানুসারে ময়মনসিংহে বিলাসবহুল “

দিলী প্রাসাদ” নির্মাণ করেন। কিন্ত ১৮৯৭ সালে প্রবল ভূমিকম্পে প্রাসাদটি ভেঙে যায়। ১৯০৫-১৯১১ সালে শশীকান্ত আবার প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। প্রায় 9 একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত ছিল। এখন তার কিছু অংশে অবশিষ্ট রয়েছে।

মহারাজ শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর মুক্তাগাছার বাসভবনেই বর্তমানে মুক্তাগাছা সরকারি কলেজটি | অবস্থিত (শহীদ স্মৃতি কলেজ)। মহারাজ সূর্যকান্তের প্রতিষ্ঠিত “আলেকজান্ডার ক্যাসেল” বর্তমানে “টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (পুরুষ)” এবং | শশি লজে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (মহিলা)” অবস্থিত। | মহারাজ শশীকান্ত পিতার মতােই নিপুন শিকারি ছিলেন। ময়মনসিংহ পার্বত্য প্রদেশ আসামে উপত্যকা | ভূমিতে তিনি শিকার করতেন। তার সঙ্গে শিকারে গিয়েছিলেন- ১৯১০ সালে Ireland এর অভূতপূর্ব Lord lieutenant Wimborne and lady Wimborne, Duke of Peneranda, 339 সালে মিশরের সুলতানের পুত্র Yosuf Karmal Pasha

READ MORE:  ভয়ঙ্কর সব সড়ক

মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য ছিলেন, মুক্তাগাছা জমিদারী প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ চতুর্থ পুত্রের উত্তরাধিকারী। চতুর্থ | পুত্র শিবরামের অধস্তন পুরুষদের জমিদারি বিষয়ে যে সুনাম ছিল তাতে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, জমিদারি ভাব নমুনায় তারা ছিলেন প্রাণবন্ত।

 

তথ্য সংগ্রহ:

“ময়মনসিংহের রাজপরিবার” -আব্দুর রশিদ

“ময়মনসিংহের জমিদারী ও ভূমিস্বত্ব” – মােঃ হাফিজুর রহমান ভূইয়া !

ছবি সংগ্রহ: “নাটোরের ইতিহাস”- সমর পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *