প্রচন্ড পুষ্টিকর এই কাঁচা কলা!
কাঁচ কলার উপকারিতা ও গুণাগুণ অনেক। কলা আমাদের সকলের নিকট পরিচিত একটি ফল। কলা খেতে পছন্দ করেন না এমন কাউকে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। কলা যেমন সুস্বাদু তেমনি এতে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। আসুন জেনে নেই কাঁচ কলার উপকারিতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে-
প্রায় সারা বছর বাজারে পাওয়া যায়, এমন পরিচিত সবজির মধ্যে অন্যতম কাঁচকলা। আনাজি কলা নামে পরিচিত এই সবজি রোগীর পথ্য হিসেবে বেশ কার্যকর। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচকলায় রয়েছে ৮৩ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১৭.৩ গ্রাম শর্করা, ২.৬ গ্রাম আমিষ, খনিজ লবণ ১ গ্রাম, ০.১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি রয়েছে ৪ মিলিগ্রাম। আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রমতে, অন্যান্য কলার মতো এর শিকড়, কন্দ, পাতা, ফুল, ফল, থোড় ও বীজ নানা ঔষধি গুণে ভরপুর। আমাশয়ের সমস্যায় কাঁচকলা আর থানকুনির পাতা বেটে খেলে উপকার পাওয়া যায়। কলার থোড় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া কাঁচকলা ডায়রিয়া রোগীর তৃষ্ণা নিবারণ এবং রক্তবমি বন্ধে সহায়তা করে। পেটে কৃমি হলে কলাগাছের শিকড়ের রস বয়স ভেদে তিন থেকে চার চা-চামচ সকালে খালি পেটে কয়েক দিন খেলে কৃমির উপদ্রব কমে যায়।
এছাড়াও –
পুষ্টি গুণ: কাঁচা কলায় বেশি মাত্রায় স্টার্চ বা শ্বেতসার, ‘শর্ট-চেইন’ ফ্যাটি অ্যাসিড ও নানান ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকে। এতে পটাশিয়াম, খাদ্য আঁশ ও সামান্য প্রোটিনও আছে। মাঝারি মাপের কাঁচা কলা থেকে ৮১ ক্যালরি পাওয়া যায়।
হজমে সহায়তা: উচ্চ মাত্রায় স্টার্চ ও খাদ্যআঁশ থাকায় কাঁচা কলা হজমে সহায়তা করে এবং পেটের সমস্যায় খুব ভালো কাজ করে। এটা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: কাঁচা কলায় আছে উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম যা রক্তনালী ও ধমনীর চাপ কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ফলে প্লাক জমে ধমনী সরু হয়ে যাওয়া, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
ওজন কমায়: খাদ্যতালিকায় কাঁচা কলা যোগ করুন। এতে থাকা শ্বেতসার ক্ষুধার অনুভূতি কমায় ও পেট ভরা রাখে। এভাবে এটা খাবারের চাহিদা কমিয়ে প্রাকৃতিকভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ: কাঁচা কলার ভিটামিন বি-সিক্স রক্তের গ্লুকোজ বিশেষ করে টাইপ-টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটা রক্তে ইন্সুলিন নিঃসরণে সহায়তা করে এবং উচ্চ আঁশ-জাতীয় হওয়ায় রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
কাঁচা কলা থেকে উপকার পেতে সিদ্ধ করে খাওয়া ভালো।
বিপাক বাড়ায়: কাঁচা কলায় আছে অত্যাবশ্যকীয় খনিজ ও পুষ্টি উপাদান যা চর্বিকে শক্তিকে রূপান্তরিত করে। আর ভিটামিন বি সিক্স এনজাইম ভাঙতে শক্তি যোগায়। এই দুই কারণে বিপাক প্রক্রিয়া বাড়ে।
ডায়রিয়ার চিকিৎসায়: কাঁচা কলায় রয়েছে নানান খনিজ উপাদান যা ডায়রিয়া এবং এই রোগের লক্ষণসহ মাথাব্যথা এবং দুর্বলভাব দূর করে।
বৃক্কের কার্যকারিতা: কাঁচা কলা শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং কিডনি বা বৃক্কের কাজে সহায়তা করে। প্রতিদিন কাঁচা কলা খেলে বৃক্কের সমস্যা দূর হয়, বিশেষ করে ‘কিডনি ক্যান্সার’।
পুষ্টির শোষণ বাড়ায়: কাঁচা কলায় থাকা ‘শর্ট চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড’ শরীরে পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের পুষ্টি শোষণ বিশেষ করে ক্যালসিয়াম শোষণ বাড়ায়।
কাঁচা কলা খাওয়ার নিয়ম
কাঁচা কলা বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে আমরা এর বিশেষ কিছু ব্যবহারের কথা বলছি।
অনেক শাকসবজি এবং খাবারে, আপনি আলুর পরিবর্তে কাঁচা কলা ব্যবহার করতে পারেন যাতে তারা আরও সুস্বাদু হয়।
কাঁচা কলা দিয়ে তৈরি করতে পারেন সুস্বাদু টিক্কি।
কাঁচা কলার কোফতা প্রায়শই সব জায়গায় আড়ষ্টের সাথে খাওয়া হয়।
পরিমাণ:
কাঁচা কলা প্রতিদিন 225 গ্রাম থেকে 260 গ্রাম পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে। অবশ্যই, একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রতিদিন খাওয়ার পরিমাণ বলা হয়েছে, তবে এটির পরিমাণ সম্পর্কে একজন ডায়েটিশিয়ানকে জিজ্ঞাসা করা ভাল হবে।