ইমাম বুখারীর জীবনী সংক্ষিপ্ত | Biography of Imam Bukhari
নাম: মুহাম্মাদ, উপনাম: আবূ আব্দুল্লাহ, উপাধি: আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীস, পিতার নাম: ইসমাঈল। তাঁর বংশ পরম্পরা এরূপ: আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম ইবনে মুগীরাহ ইবনে আহনাফ বারদিযবাহ আল জু‘ফী আল বুখারী। Imam Bukhari
এ ব্যাপারে সকল ঐতিহাসিক একমত যে ইমাম বুখারী রহ. ১৯৪ হিজরী সনে শাওয়াল মাসের ১৩ তারিখে জুমা‘র নামাযের পর খুরাসানের প্রসিদ্ধ শহর বুখারায় (সাবেক, বর্তমান উজ্বেকিস্তান) জন্মগ্রহন করেন।
অধ্যয়ন ও আসাতিযায়ে কেরাম
হাকেম আবূ আব্দুল্লাহ রহ. বলেন- ইমাম বুখারী রহ.(Imam Bukhari) ইলম অন্বেষণের জন্য পবিত্র মক্কা, মদিনা, শাম, বুখারা, র্মা, বলখ, হুরাত, নিশাপুর, রায়, বাগদাদ, ওয়াসেত, বসরা, কূফা, মিসর ও জাযীরাহ প্রভৃতি অঞ্চল ভ্রমন করেন। হাদীস শিক্ষা লাভের জন্য এ সকল স্থানে অবস্থান করেন।
তাঁর আসাতিযায়ে কেরামের মাঝে- আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর আল হুমাইদী, ইব্রাহীম ইবনে মুনযির আল হুযামী, হায়াতুবনু শুরাইহ, মক্কী ইবনে ইব্রাহীম,কুতাইবা,ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, আহমদ ইবনে হাম্বল প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। উল্লেখ্য যে, স্বয়ং ইমাম বুখারী রহ. বলেন- আমি সহস্রাধিক মুহাদ্দিসীনে কেরামের কাছ থেকে রাসূল সা. এর হাদীস লিপিবদ্ধ করেছি।
অধ্যাপনা ও শাগরেদবৃন্দ
ইমাম বুখারী রহ. (Imam Bukhari) থেকে অগণিত ছাত্র-শিষ্য হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন। লোকমুখে যা প্রসিদ্ধ আছে তার থেকেও বেশী। ইমাম ফারবরী থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন- ইমাম বুখারী রহ. থেকে নব্বই হাজার লোক “সহীহ বুখারী” শ্রবণ করেছেন। কিন্তু এছাড়াও অসংখ্য লোক তাঁর থেকে হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন।
তবে তাঁর শিষ্যবৃন্দের মধ্যে যারা উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন- আবুল হাসান মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ, আবূ ঈসা আত্ তিরমিযী, আবূ আব্দুর রহমান আন্ নাসায়ী প্রমুখ। এরা সবাই হলেন হাদীস শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ এক একজন ইমাম ও হাফেযে হাদীস। বাকী অন্যান্যরা হলেন হাফেযে হাদীস।
প্রশংসা ও গুণকীর্তন:
ইমাম বুখারী রহ.(Imam Bukhari) এর অসাধারণ অসংখ্য অগণিত গুণাবলী ছিল। একাধারে তিনি অনন্য ধীশক্তি, তত্ত্ব অনুধাবনশক্তি, ইজতেহাদ-ক্ষমতা, বর্ণনাশক্তি, উপকারিতা, প্রচণ্ড খোদাভীতি, যুহ্দ, তাকওয়া, বিশ্লেষণশক্তি, উন্নত মানসিকতা, তীক্ষè দৃষ্টি, নানান পাণ্ডিত্য, কারামাত ও অলৌকতার অধিকারী ছিলেন।
ইমাম ফারবরী রহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন- আমি “সহীহ বুখারী” তে এমন একটি হাদীসও লিখিনি যা লিপিবদ্ধ করার পূর্বে আমি গোসল করিনি ও দুই রাকাআত নামায আদায় করিনি।
ইমাম ইসমাঈলী রহ.বর্ণনা করে বলেন যে, ইমাম বুখারী বহ. বলেছেন- আমি এই কিতাবে যে সকল হাদীস উল্লেখ করেছি তার সবগুলোই সহীহ। কিন্তু আমি যে পরিমাণ সহীহ হাদীস বর্ণনা করেছি তার থেকে অধিক পরিমাণ সহীহ হাদীস লিখতে গিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। এতে উল্লেখ করিনি।
ইমাম মুসলিম রহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি তাঁর উস্তাদ বুখারী রহ.কে বলেন- আপনার প্রতি ক্রোধান্বিত কেবল ঐ ব্যক্তিই হতে পারে যে কিনা সাক্ষাৎ হিংসুক। আর আপনার সামনে এই বলে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, দুনিয়াতে আপনার মত কোন ব্যক্তি নেই।
হাকেম আবূ আব্দুল্লাহ তার সরচিত গ্রন্থ “তারীখে নিসাপুর”-এ আহমদ ইবনে হামদূন থেকে সনদসহ বর্ণনা করে বলেন- একদা মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ রহ. বুখারী রহ. এর নিকট আসলেন এবং তিনি স্বীয় উস্তাদের দু’চোখের মাঝে চুমু খেলেন। আর বললেন- হে উস্তাদগণের উস্তাদ! হে মুহাদ্দিসীনে কেরামের সরদার! হে অসুস্থ হাদীসসমূহের চিকিৎসক! আপনি আমাকে সুযোগ দিন, আমি আপনার পদদয় চুম্বন করি।
গ্রন্থ ও রচনাবলী:
তিনি অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। তাঁর প্রসিদ্ধ কতিপয় গ্রন্থের মধ্যে আছে- সহীহ বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, রফউল ইয়াদাইন ফিস্ সলাত, র্বিরুল ওয়ালিদাইন, আত্ তারীখুল কাবীর, আল মুসনাদুল কাবীর ইত্যাদি।
ইজতিহাদ ও মাযহাব:
মাযহাব: তিনি কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন না। বরং তিনি নিজেই ছিলেন ইসলামী শরীয়তের একজন স্বতন্ত্র মুজতাহিদ।
ইন্তেকাল:
আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীস ইমাম বুখারী রহ. ২৫৬ হিজরী সনে ৬২ বছর বয়সে শনিবার ঈদুল ফিতরের রাত্রিতে এশার নামাযের সময় ইন্তেকাল করেন এবং ঈদুল ফিতরের দিন যোহর নামাযের পর সমরকন্দ শহর থেকে তিন মাইল দূরে খরতঙ্গ নামক স্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।