কী এবং কেন?

চট্টগ্রাম ট্র্যাজেডির খলনায়ক হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এর পরিচয়

  চট্টগ্রাম এর সীতাকুণ্ডে সম্প্রতি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে হাইড্রোজেন পারক্সাইডকে। 

 

We all know about the recent tragic accident at Sitakunda in Chittagong. Hydrogen peroxide is being blamed for this tragic event.

 

হাইড্রোজেন পারক্সাইড এর সংকেত- Formula of hydrogen peroxide

 

হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ যার সংকেত H ₂O ₂। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটি বর্ণহীন তরল, জলের থেকে এর সান্দ্রতা সামান্য বেশি। নিরাপত্তাজনিত কারণে সব সময় এটার জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। H ₂O ₂ সব থেকে সরল পারক্সাইড এবং এটা শক্তিশালী জারক ও বিরঞ্জক।

 

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কি কাজে ব্যবহার করা হয়?- What is hydrogen peroxide used for?

 

গৃহস্থলির কাজে এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ৩% ঘনত্বের হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ৩ শতাংশ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড দ্রবণ ঔষধ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তবে এটি হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক বিপদের কারণ।

 

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড দাহ্য পদার্থ নয়, তবে কিছুক্ষেত্রে এটি আগুনের তীব্রতা ঘটাতে পারে। এটি নিজ থেকে আগুন জ্বালাবে না, তবে অন্যান্য পদার্থের সঙ্গে মিলিত হলে আগুনের ঝুঁকি হতে পারে। বিশেষ করে, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড যদি বিশুদ্ধ বা মিশ্রিত আকারে হয় তাহলে বিভিন্ন ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে, প্রধানটি হলো এটি জৈব যৌগের সংস্পর্শে বিস্ফোরক মিশ্রণ তৈরি করে।

 

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নিজে আগুনের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে না কিন্তু এটি আগুনকে তীব্র করে তুলতে পারে।

 

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডকে সরাসরি বিস্ফোরক তালিকায় রাখা না হলেও ক্ষতি করার অসীম ক্ষমতা রয়েছে এর। মূলত ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে এর প্রতিক্রিয়া খুব ভিন্ন হতে পারে। উচ্চ ঘনত্বে, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের প্রকৃতপক্ষে বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

 

চলুন জেনে নেই পদার্থটি কেন বিপজ্জনক ও এর প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে- Let’s find out why the substance is dangerous and its first aid.

READ MORE:  ভয়ঙ্কর সব সড়ক

 

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের সংস্পর্শে যে ক্ষতি হয়

 

১. রংহীন তরল তেতো স্বাদের এই পদার্থটি গিলে ফেললে বা শ্বাসের সাথে গ্রহণ করলে বিচ্ছিন্ন ভাবে জ্বালাতন করতে পারে। আরও হতে পারে বমি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, অবশ, ফুসফুস সংকুচিত হওয়া, কম্পন, মানসিক আঘাত।

২. স্বল্প মেয়াদী ফলাফলগুলো প্রকট হতে পারে এবং সেগুলো ভয়ঙ্কর রুপ নিতে পারে।

৩. শক্তিশালী অক্সিডাইজার অন্যান্য দ্রব্যের সংস্পর্শে আসলে আগুন লাগতে পারে।

 

৪. উচ্চ তাপমাত্রায় পাত্রটি তীব্র ভাবে ভেঙ্গে যেতে পারে যা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনবে।

৫. চোখে লাগলে স্বল্প মেয়াদী জ্বালাতন করতে পারে। ফলাফলগুলো ভয়ঙ্কর রুপ নিতে পারে আবার অন্ধত্বের কারণ ও হতে পারে।

 

প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা- First aid

 

নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করলে : দ্রুত বিশুদ্ধ বাতাসে নিয়ে যেতে হবে। যদি প্রয়োজন হয় তবে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। বায়ু চলাচল,রক্তাচাপ এবং শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্রাম এবং উষ্ণ পরিবেশে থাকতে হবে। লক্ষণ এবং সমর্থন অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে।

ত্বকে স্পর্শ করলে : দ্রুত দূষিত কাপড় ও জুতাগুলো খুলে ফেলতে হবে। সাবান পানি বা যেকোনো পরিষ্কারক দিয়ে ধুতে হবে (কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট)। জ্বালাতন করলে জীবাণুমুক্ত, শুষ্ক ও ঢিলেঢালা পোশাক পরাতে হবে। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

চোখে লাগলে : প্রচুর পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে। কম পক্ষে ১৫-২০ মিনিট সাধারণ লবণ পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে যেতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না চোখ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে (৩০-৬০মিনিট) জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।

গিলে ফেললে : পদার্থটি পাকস্থলীতে প্রবেশ করলে খেয়াল রাখতে হবে যেন কাঁপুনি না হয়। তবে তাকে ২-৪ গ্লাস পানি পান করাতে হবে যাতে রাসায়নিক পদার্থটি অধিকতর পাতলা হয়ে যায়। চাপ থেকে মুক্ত হতে গ্যাস্ট্রিক টিউব ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ সেটা অক্সিজেনে পূর্ণ থাকে। লক্ষণ এবং সমর্থন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। চিকিৎসা কর্মীকে অবশ্যই টিউবের ব্যবস্থা করতে। দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।

READ MORE:  শুক্রাণু সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ কি, লক্ষ্মণ ও চিকিৎসা

 

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কারণে লাগা আগুন কেন পানি দিয়ে নেভানো যায় না?- Why can’t a fire caused by hydrogen peroxide be extinguished with water?

 

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কারণে লাগা আগুন পানি দিয়ে নেভানো যায় না। বরং এতে আগুনের মাত্রা আরও বাড়ে। রাসায়নিকের কারণে লাগা আগুন নেভাতে হয় ফগ সিস্টেমে। কিংবা ব্যবহার করা হয় ফোম কিংবা ড্রাই পাউডার জাতীয় অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র। এ কারণে পানির সাহায্যে এই আগুন নেভানো সম্ভব নয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *