বিজ্ঞান জিজ্ঞাসা

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নিয়ে যত প্রশ্ন

Q. হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড কি? (What is hydrogen peroxide?)

 

> হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ যার সংকেত H2O2। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটি বর্ণহীন তরল, জলের থেকে এর সান্দ্রতা সামান্য বেশি। নিরাপত্তাজনিত কারণে সব সময় এটার জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। H2O2 সব থেকে সরল পারক্সাইড (যে যৌগে অক্সিজেন-অক্সিজেন একক বন্ধন থাকে) এবং এটা শক্তিশালী জারক ও বিরঞ্জক।

 

Q. হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের সংকেত কি? (What are the signals of hydrogen peroxide?)

> H2O2

 

Q. হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড এর ব্যবহার (Use of hydrogen peroxide)

>>

১। দাঁতকে মুক্তার মত সাদা করতে

আপনার হলদেটে, দাগ পড়া দাঁতগুলোকে সাদা করতে পারে হাইড্রোজেন পারক্সাইড। বস্তুত, যে টুথপেস্টগুলো দাঁতকে সাদা করতে পারে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় সেগুলোতেও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থাকে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের ব্লিচিং প্রভাব আপনার হলুদ দাঁতগুলোকে সাদা করে দিতে পারে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড এবং কুসুম গরম পানি সমপরিমাণে মিশিয়ে আপনার মুখে নিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন। তারপর পানিটুকু ফেলে দিন এবং সাধারণ পানি দিয়ে কুলি করে নিন। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন ১/২ বার এভাবে করুন।

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড গিলে ফেলবেন না। এটি দাঁতকে সংবেদনশীল করে তুলতে পারে এবং মাড়ির যন্ত্রণা সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।  

২। পায়ের নখের ছত্রাক দূর করতে  

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের জীবাণুনাশক গুণের কারণে এটি পায়ের নখের ছত্রাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। পায়ের কড়া দূর করতেও সাহায্য করে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড। সমপরিমাণ  হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও পানি মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি একটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আক্রান্ত স্থানে দ্রবণটি স্প্রে করে নিন। সারারাত এভাবে রেখে দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে উষ্ণ পানি দিয়ে স্থানটি ধুয়ে ফেলুন। তারপর একটি নরম টুথব্রাশ দিয়ে নখটি আস্তে আস্তে ঘষুন। সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে একমাস যাবৎ প্রতিদিন এই প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করুন।

READ MORE:  হিট স্ট্রোক কেন হয়?

৩। ব্রণ দূর করতে

ত্বকের সমস্যা যেমন- ব্রণ দূর করতেও সাহায্য করে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড যেখানে ব্যবহার করা হয় তার পরিবেশকে জারিত করতে পারে। তাই যখন ব্রণের উপর ব্যবহার করা হয় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড তখন তা ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীরকে জারিত করে এবং তাদের রাসায়নিক গঠনকেও বিপর্যস্ত করে। এর ফলে তারা মারা যায়। ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে গেলে ব্রণ দূর হয়। এছাড়াও ত্বকের তেলের নিঃসরণ কমানোর মাধ্যমে ব্রণ ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমায় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড।

ক্লিঞ্জার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিন। তুলার বলে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড লাগিয়ে ত্বকে লাগান। ১-২ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তারপর অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার লাগান।

সংবেদনশীল ত্বকে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহার করবেন না।

৪। চিতি দূর করতে

চিতি বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যসমস্যা তৈরি করতে পারে, ইমিউনিটিকে দুর্বল করা থেকে শুরু করে ক্যান্সার পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে। ছত্রাকের বৃদ্ধির কারণেই চিতি পড়ে। হাইড্রোজেন পারক্সাইডের মাধ্যমে ছত্রাকের বৃদ্ধিকে বন্ধ করে চিতি পড়া রোধ করা যায়। একটি স্প্রে বোতলে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নিয়ে চিতি পড়া স্থানে স্প্রে করুন। ১০ মিনিট রাখার পরে ঐ স্থানটি ঘষে নিন যাতে চিতি ও চিতির দাগ দূর হয়ে যায়। তারপর স্থানটি পানি দিয়ে মুছে নিন। প্রয়োজনে এর পুনরাবৃত্তি করুন।

৫। কার্পেটের দাগ দূর করতে

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড চমৎকারভাবে দাগ দূর করতে পারে। এটি কার্পেটের বিভিন্ন দাগ যেমন- সস বা কফির দাগ দূর করতে সাহায্য করে কার্পেটের রঙ নষ্ট করা ছাড়াই। ভেজা দাগ একটি কাপড় দিয়ে মুছে নিন। ১ টেবিলচামচ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এবং ১ টেবিলচামচ তরল ডিশ ওয়াশিং সাবান মিশিয়ে নিয়ে দাগের উপর স্প্রে করুন। একটি স্পঞ্জ দিয়ে ঘষে নিন। তারপর পানি দিয়ে মুছে নিন জায়গাটি। সবশেষে সুতি কাপড় দিয়ে চেপে চেপে পানিটুকু মুছে নিন।

READ MORE:  মশা শুধু আমাকেই কামড়ায় কেনো?

৬। ফল ও সবজিকে নির্বিষ করতে

ফল ও সবজিতে থাকা কীটনাশক দূর করতে সাহায্য করে হাইড্রোজেন পারক্সাইড। E. coli এর মত ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে এটি। এছাড়াও হাইড্রোজেন পারক্সাইড ফল ও সবজিকে দীর্ঘক্ষণ সতেজ থাকতে সাহায্য করে। একটি স্প্রে বোতলে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নিয়ে ফল ও সবজির উপর স্প্রে করুন। ৫ মিনিট পর কলের পানিতে ধুয়ে ফেলুন এবং শুকিয়ে রাখুন।

 

 

Q. হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড কোথায় পাওয়া যায়? (Where is hydrogen peroxide found?)

 

> হাইড্রোজেন পারক্সাইড সাধারণত ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়। এটি একটি প্রাথমিক চিকিৎসা কিট যা প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতে পাওয়া যায়। হাইড্রোজেন পারক্সাইড পানিতে অক্সিজেনের অতিরিক্ত অণু যোগ করে তৈরি করা হয়। এটি একটি সংক্রামক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা বৈজ্ঞানিকভাবে H2O2 নামে পরিচিত।

 

Q. গাছে হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইডের ব্যবহার (Use of hydrogen-peroxide in trees)

 

> হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড সংক্রমণনাশক। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে কাজ করে। ১৯২০ সাল থেকে এটি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইডে অতিরিক্ত একটি অক্সিজেন থাকে। গাছের জন্য ও বৃদ্ধিতে অক্সিজেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অক্সিজেনের অভাবে গাছে সমস্যা দেখা দেয়। বেগুন পচে যায়। পাতায় ছোট ছোট দাগ পড়ে। গাছের শিকড় পচে যাচ্ছে। পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। গাছের বৃদ্ধি হচ্ছে না। এটি ব্যবহার করতে পারেন। গাছের পাতায় স্প্রে এবং গাছের গোড়ায়। ৬ শতাংশ ব্যবহার করা উত্তম। বোতলের গায়ে ৬ শতাংশ লেখা থাকবে। ৩ শতাংশ হলে ডাবল পরিমাণে দিতে হবে। দাম এক বোতল ৩০ টাকা। আলো কম পড়ে ও কিছুটা ঠাণ্ডা- এমন জায়গায় রাখতে হবে। ফল ও সবজি জীবাণুমুক্ত ব্যবহার করা যায়। হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড দেয়া পানিতে রেখে পরে ভালো পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি শিকড় গজাতে জাদুর মতো সাহায্য করে। অন্যদিকে বীজ থেকে শিকড় গজাতেও কাজ করে। কিছুটা সময় বীজ ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। টিস্যু পেপার দিয়ে মুড়িয়ে রাখুন এক রাত। প্রায় সব বীজে শিকড় গজাবে। আর বীজে কোনো জীবাণু থাকলে মারা যাবে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করতে এটি ব্যবহার করতে পারেন। কাপড়ে বা তুলায় হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড মিশ্রিত লাগিয়ে যন্ত্রপাতি মুছে ফেলুন। এক লিটার পানিতে সর্বোচ্চ দুই এমএল ব্যবহার করতে হবে। ২০ ফোঁটায় এক এমএল হয়। এমএল মাপতে পাঁচ টাকা দিয়ে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ কিনতে পারেন। হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড দিলে অ্যাকুরিয়ামের গাছের এলজি দূর হয়। তবে খেয়াল রাখবেন, এটি যেন চোখে না যায়। গাছের জন্য মাসে একবার ব্যবহার করা উত্তম। এক লিটারে এক বা দুই এমএল।

READ MORE:  ভূতের অস্তিত্ব নিয়ে বিজ্ঞান ও কোরআন কি বলে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *