ইসলামইসলামিক বিষয়াদি

হাফহাতা গেন্জি পড়ে নামাজ হবে?

Half shirt। T Shirt। Namaz। Salat। Quran। Hadis। Hadith। Sunnah। 

 

হাতা গুটিয়ে বা হাফহাতা পোশাক পর নামাজ পড়ার বিষয়ে অধিকাংশ ইসলামিক স্কলার ও ফতোয়ার কিতাবের দিকনির্দেশনা হলো, এভাবে জামার হাতা গুটিয়ে বা হাফহাতা পোশাক পরে নামাজ পড়া মাকরূহে তাহরিমি।’ (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়িা ১/১০৬)

 

এ পোশাকে নামাজ পড়া মাকরূহ হওয়াটা হাদিসের দিকনির্দেশনার অন্তর্ভূক্ত। কেননা, এটা হাদিসের নিষিদ্ধ سدل ثوب (স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী কাপড় না রাখা) এর অন্তর্ভুক্ত। হাদিস শরিফে এসেছে-

 

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

 

أنَّ رسولَ اللَّهِ ﷺ نَهى عنِ السَّدلِ في الصَّلاةِ وأن يغطِّيَ الرَّجلُ فاهُ

 

নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ আদায় করার সময় ‘সাদল’ করতে ও মুখমণ্ডল ঢাকতে নিষেধ করেছেন।’ (আবু দাউদ)

 

কেউ কেউ বলেছেন, নামাজে জামার হাতা গুটিয়ে রাখা মাকরূহ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

 

أُمِرْنَا أَنْ نَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْظُمٍ، وَلاَ نَكُفّ ثَوْبًا وَلاَ شَعرًا.

 

‘আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে সাতটি অঙ্গ দ্বারা সেজদা করতে এবং (নামাজে) চুল ও কাপড় না গুটাতে। (বুখারি ৮১০)

 

ফাতাওয়ায়ে কাযীখানে এসেছে, ولو صلي رافعا كميه إلي مرفقين كره. ( فصل فيما يفسد صلاة)

 

কাপড়ের হাতলকে উপরের দিকে ভাজ করে রাখা মাকরূহ।

 

মারাকিল ফালাহ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

 

“وتشميركميه عنهما” للنهي عنه لما فيه من الجفاء المنافي للخشوع. ( كتاب الصلاة، باب ما يفسد الصلاة، فصل في المكروهات، ١/ ١٢٨)

 

হাতল কে উপরের দিকে ভাজ করে রাখা, নামাযের খুশু খুজুর মুনাফি বা অন্তরায়।

 

কেউ কেউ বলেছেন, যেসব পোশাক পরে কোনো মাহফিল বা অনুষ্ঠানে যেতে সংকোচ বোধ হয়, সেসব পোশাক পরে নামাজ পড়া মাকরূহে তানজিহি। তবে কারো কাছে ওই মুহূর্তে হাফশার্ট বা গেঞ্জি থেকে ভালো কোনো পোশাক না থাকলে সেগুলো পরেই নামাজ আদায় করা যাবে, এতে কোনো অসুবিধা নেই। (আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪০; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪১; ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত ৩/৫১৭, ৫১৯)

READ MORE:  কিভাবে সঠিক নিয়মে তায়াম্মুম করবেন?

 

হ্যাঁ, আবার অনেকে এমনও মনে করেন যে— যদি ফুল হাতা হয়, তাহলে সুন্দর বেশি দেখায়; তাহলে এটা ভালো। তবে হাফ শার্ট পরিধান করে নামাজ পড়লে— নামাজ মাকরুহ হবে, এই ধারণার কারণে অনেকে নামাজ পড়ে না। কারণ, হাফ শার্ট তাই নামাজ পড়ছে না; এটা কত মূর্খতার চিন্তু। ভাবনার বিষয়, এটা যেন না হয়। ফুল হাতা শার্ট পরে নামাজ পড়লে হয়ত ভালো হতো, তবে আরও পরিপূর্ণ পোশাক যদি থাকে; সেটা হলে আরও ভালো হতো। কিন্তু এতে করে নামাজ ছেড়ে দেওয়া যাবে না। আর হাফহাতা পোশাকে নামাজ পড়লে কোনো গুনাহ হবে না। নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না।

 

মোটকথা হলো, হাফহাতা পোশাক পরে নামাজ পড়া অনেকের মতেই মাকরূহ। তবে একান্তই যদি নামাজের ওয়াক্তে কারো কাছে এ পোশাক ছাড়া অন্য কোনো পোশাক না থাকে তবে তা দিয়েই নামাজ আদায় করা যাবে। সময় থাকলে সুন্দর ও উত্তম পোশাকে নামাজ পড়বে। কিন্তু নামাজ থেকে বিরত থাকা যাবে না।

 

তাই নামাজি মুমিন মুসলমানের উচিত, নামাজে দাঁড়াবার আগেই পরনের পোশাক স্বাভাবিক করে নেওয়া। গুটানো হাতা ছেড়ে দেওয়া। একান্তই কেউ যদি অজু করার পর রাকাত পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে হাতা গুটানো অবস্থায় নামাজে শরিক হয়ে যায় তবে নামাজের ভেতরেই ধীরে ধীরে হাতা ঠিক করে নেওয়া উচিত।

 

নামাজ হওয়ার জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা যথেষ্ট। এভাবে যদি কেউ বাধ্য হয়ে নামাজ পড়েন যে, তার একটি লুঙ্গি বা একটি গামছা আছে বড়, তাহলে এভাবেই তার নামাজ পরিপূর্ণ সহীহ হবে। আর যার নামাজ পড়ার সময় অন্য পোষাক পড়ার সুযোগ রয়েছে তার জন্য হুকুম হলো, আল্লাহ তায়ালা সূরা আ’রাফের ৩১ নং আয়াতে বলেন, তোমরা প্রত্যেকে সিজদার স্থলে বা মসজিদে (নামাজের সময়) সৌন্দর্য গ্রহণ কর (পোষাক ও সাজসজ্জা পরিধান করে নাও)। এখানে নামাজের সময় উত্তম পোষাক পরার কথা বলা হয়েছে। সে জন্য একটা মানুষ যখন টি শার্ট বা শার্ট পরিধান করা থাকে এটা ভিজ্যুয়াল পোষাক। উনি যখন নামাজের ইচ্ছা করে নামাজ পড়বেন তখন যেন হাতাওয়ালা একটা জামা গায়ে দেন বা বড় চাদর উপরে দেন, যেন তাকে শোভনীয় মনে হয়। যেমন কেউ যদি বিশিষ্ট কারও সামনে যায় তখন সে তার স্বাভাবিক পোষাকে যায় না, গামছা গায়ে দিয়ে বা ঘরের ভেতরের গেঞ্জি পরেই চলে যায় না। সুতরাং আল্লাহর সান্নিধ্যে আমরা যখন যাবো, মনের হালতটা এমন হওয়া উচিত যে, আমি একটু শোভনীয় ও সৌন্দর্যমন্ডিত এবং আমার ভালো পোষাকটি পরে জায়নামাজে দাঁড়াই, মসজিদে যাই। এটা হলো আদব। নামাজ জায়েজ হওয়ার জন্য ফরজ সতরটুকু (পুরুষের ক্ষেত্রে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত) ঢাকা থাকলেই হবে। আর নামাজ সুন্দর হওয়ার জন্য কনুই পর্যন্ত ঢেকে রাখা, শরীরটাকে ভালোভাবে ঢেকে রাখা, অন্যথায় সুযোগ থাকাবস্থায় শরীর ভালোভাবে ঢেকে নামাজ পড়লে নামাজ মাকরুহ হবে। তবে কেউ যদি অপারগতায় গেঞ্জি বা হাফ হাতা শার্ট পরে নামাজ পড়ে সেটা ভিন্ন বিষয়, তার নামাজ হয়ে যাবে। 

READ MORE:  কিভাবে ইস্তেখারা করলে ফল পাবেন?

সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতওয়া বিশ্বকোষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *